×

জাতীয়

রাশিয়া-ভারতের ভরসায় ‘একতরফা’ নির্বাচনের পাঁয়তারা সরকারের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:১০ পিএম

রাশিয়া-ভারতের ভরসায় ‘একতরফা’ নির্বাচনের পাঁয়তারা সরকারের

ছবি: সংগৃহীত

‘রাশিয়া ও ভারতের ওপর ভর করে সরকার ‘একতরফা’ নির্বাচন করার পায়তারা করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, ‘গোটা জাতি এক ভয়ংকর জঙ্গলের মধ্যে বাস করছে। এক অন্ধকার জঙ্গল যেখানে চারিদিকে ঘিরে আছে ভয় ও আতঙ্কের ব্যারিকেড… এই ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করাই হয়েছে একদলীয় নির্বাচনকে সুসম্পন্ন করা, ভোটারবিহীন নির্বাচনকে নিশ্চিত করা। এব্যাপারে শেখ হাসিনা একেবারেই বেপরোয়া। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ভাবছেন রাশিয়া আছে, ভারত আছে, আমার আবার ভয় কিসের? রাশিয়া ও ভারত আমাকে সমর্থন দিলে আমার কিসের ভোট সেন্টার লাগবে, কিসের ভোটার লাগবে, কিসের স্বচ্ছ নির্বাচন লাগবে?”

রিজভী বলেন, ‘তাদের (রাশিয়া ও ভারত) কর্তা ব্যক্তিরা মাঝে-মধ্যে স্টেটমেন্ট দিচ্ছেন। তাতো দেবেনই। বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকুক বা না থাকুক, এটা তো ভারতের কোনো যায় আসে না আর রাশিয়ার তো মোটেও যায় আসে না… আর নিজের দেশে গণতন্ত্রের বিশাল ঘাটতি একনায়কতন্ত্রের শাসন। সুতরাং আজকে তাদের সমর্থনে শেখ হাসিনার পোয়া-বারো।

ভারত নিজে গণতান্ত্রিক দেশ কিন্তু সে অন্য দেশের গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা গণতান্ত্রিক সমাজ গঠিত হোক এটা তারা চাচ্ছেন না। যে ক‘জন কর্তা ব্যক্তিরা এসেছেন তারা প্রত্যেকেই জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে আজকে জনসমর্থনহীন সরকারকে সমর্থন দিচ্ছেন। এটা বাংলাদেশের মানুষ বিস্মিত, হতবাক। ভারতের কাছ থেকে তো এটা কামনা করা যায় না। কিন্তু যারা আধিপত্যবাদী শক্তি তারা সব সময় চায় তার আশে-পাশের ছোট দেশগুলোকে কবজা করতে।

ভারতের বর্তমান অবস্থানকে ‘বড় দুর্ভাগ্যজনক’ অভিহিত করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘‘আমি জহরলাল নেহেরু সাহেবের একটি বই পড়েছিলাম,‘ অব ইন্ডিয়া’। তাতে এক জায়গায় তিনি বলেছেন, ফর এসমল নেশন স্ট্যাট ইজ গ্রোথ ইট ওয়াজ সারভাইভ অনলি কালচারাল অটোনোমাস এরিয়া বাট নট পলিটিকাল ইন্ডিপেন্ডেট এরিয়া।’

আজকে কি সেই পলিসি বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে ভারত? যে তারা তাদের আশে-পাশে ইন্ডিন্ডেন্ট টেরিটোরি দেখতে চায় না… বড়জোর একটা কালচারাল অটোনোমাস সাংস্কৃতিক স্বায়ত্তশাসিত এরিয়া তাদের পরিচালনায়… এই মনোবৃত্তিরই পরিপূরক প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটা বড়ই দুর্ভাগ্যজনক। আমি বলতে চাই, একাত্তর সালে আমাদের ভরসা ছিলো জনগণ.. মুক্তিযুদ্ধে আশ্রয় দিয়েছে, খাবার দিয়েছে এবং পথ চিনিয়ে দিয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ের। আমরা গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করছি, আমরা সশস্ত্র বিপ্লব করছি না।”

‘সরকার এখন জঙ্গি নাটক ও নাশকতার নাটক করবে’-

রিজভী বলেন, ‘‘ ট্রেনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কে করেছে তা এখন জনগণের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আর পুলিশ কমিশনার সাহেব আপনি কোনো কিছু তদন্ত না করেই বলে দিলেন যে, এটা অবরোধ-হরতালকারীরা করেছে? এই অবরোধ-হরতালকারীদের ওপর দায় চাপানো এটা একটা পূর্ব পরিকল্পিত পরিকল্পনা… এটা আমরা বার বার বলি যে সরকার এখন জঙ্গি নাটক করবে, নাশকতার নাটক করবে… বিভিন্ন জায়গা থেকে এটা বলে আসছি। সেটা এখন বাস্তবে প্রতিফলিত হতে দেখা যাচ্ছে। আজকের রেলওয়ের ঘটনাটাও তাই।”

‘ গোটা দেশ সাধারণ মানুষ বিরোধী দল গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য, নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আজকে লড়াই করছে…সবাই ভয়ে আছে, সবাই আতঙ্কে আছে। কেউ যদি সরকারের ন্যুনতম সমালোচনা করে ডান দিকে বাম দিকে তাঁকায় কেউ শুনলো কিনা? কেউ দেখলো কিনা? একাত্তর সালে এজন্যই এতো মানুষের প্রাণ গেলো, এতো নারীর সম্ভ্রম গেলো যে ৫২/৫৩ বছর পরেও ক্ষমতাসীনদের ভয়ে সবসময় কুণ্ঠিত থাকতে হবে, ডানে-বামে সবসময় তাকাতে হবে, সামনে-পেছনে লক্ষ্য রাখতে হবে যে আমি সরকারের যতটুকু সমালোচনা করলাম সেটা সরকারের লোকেরা শুনতে পেলো কিনা।’

বিএনপির এই নেতা দাবি করেন, বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষমতা নেই, সাধারণ মানুষ বন্দি। আজকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে গোটা সমাজ, গোটা রাষ্ট্র শেখ হাসিনার পক্ষে। কখন কার বাসায় ধেয়ে চলে যাবে যে, যাকে লক্ষ্য করে যাবে তাকে না পেলে তার ছোট ভাইকে ধরবে, না হলে তার বাবাকে ধরবে, না পেলে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যাবে। এটা একাত্তর সালে খান সেনাদের বর্বরতা থেকে কতটুকু পার্থক্য রয়েছে?

জনিকে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে ২০১৫ সালের আন্দোলনে। কে করেছে? দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবারে জনির বাবাকেও ধরে নিয়ে গেছে … একজন বয়স্ক মানুষ। এই ঘটনা এই অমাবিকতা এই পুলিশি তাণ্ডব আজকে গ্রাম-গঞ্জ থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রত্যেকটি জায়গায়। শুধু সন্তান বিএনপি করে, বাবা বিএনপি করে, ভাই বিএনপি করে অথবা বোন বিএনপির মহিলা দলের সদস্য এই কারণে তাকে যদি না পায় অন্য যারা আছে ভাই-বোনেরা তাদের ওপর নেমে আসে অত্যাচারের খড়ক। এই পরিস্থিতি এই দৃশ্য সারাদেশব্যাপী।”

গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে পুলিশ আরো ২২৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার এবং ৮টি মামলায় ৭৯৫ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে আসামী করেছে বলে দাবি করেন রিজভী।

রিজভী আরও বলেন, ‘ বুধবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান চলমান আন্দোলনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেবেন।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App