×

জাতীয়

সন্তানকে বুকে জড়িয়ে অঙ্গার মা-ছেলে, মর্গেও একসঙ্গে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:১৪ পিএম

সন্তানকে বুকে জড়িয়ে অঙ্গার মা-ছেলে, মর্গেও একসঙ্গে

ছেলে ইয়াসিনের সঙ্গে নাদিরা আক্তার পপি। ছবি: সংগৃহীত

চলন্ত ট্রেনে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। যাত্রী ভর্তি কামরায় হুড়োহুড়ির ভেতর দিয়ে ছোট ভাই ও এক ছেলে নিরাপদে সরে গেলেও, পারেননি নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তার তিন বছর বয়সী ছেলে ইয়াসিন। ছেলেকে বুকে জড়িয়েই পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন নাদিরা আক্তার পপি। অগ্নিকাণ্ডের সময় যেভাবে সন্তানকে বুকে আগলে রেখেছিলেন, ঢাকা মেডিকেলের মর্গের বাইরে লাশবাহী সাদা ব্যাগেও একইভাবে রাখা ছিল তাদের লাশ।

পপি ছিলেন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী। ছোট ভাই ও দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন তিনি।

পুলিশের ভাষ্য মতে, মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে বিএনপির হরতাল শুরুর আগে আগে ট্রেনটি যখন ঢাকায় ঢুকছিল, তখনই ট্রেনের ভেতরে থাকা যাত্রীবেশী নাশকতাকারীরা আগুন দেয়।

ভয়াবহ ওই ঘটনায় পুড়ে ছাই হয়ে যায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের তিনটি বগি। পপি ও তার ছেলে ইয়াসিন ছাড়াও এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরো অজ্ঞাত দুই পুরুষ। তাদের লাশও এখন মর্গের বাইরে রাখা হয়েছে। শরীর এতটাই পুড়েছে যে পরিচয় জানতে এখন ডিএনএ পরীক্ষা লাগবে।

পপির স্বামী মিজানুর রহমান কারওয়ান বাজারে হার্ডওয়্যার সামগ্রীর ব্যবসা করেন। তিনি তেজতুরী বাজার এলাকায় থাকেন। স্ত্রী-সন্তানের মৃত্যুর খবরে ছুটে যান হাসপাতালে।

মিজানুরের ভাই দেলোয়ার হোসেন টিটু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, পপি তার দুই সন্তান ও ছোট ভাইকে নিয়ে ঢাকায় আসার জন্য ট্রেনে উঠেছিলেন।

ভাইটিও বয়সে কিশোর। ট্রেনে আগুন লাগার পর বড় ছেলে তার মামার সঙ্গে বের হয়ে আসতে পারলেও পপি ও তার ছোট ছেলে বের হতে পারেনি। আমরা তার লাশ পেয়েছি মায়ের কোলে, মাকে জড়িয়ে ধরে রাখা অবস্থায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ওই সন্তানটি ভয় পেয়ে হয়ত তার মাকে জড়িয়ে ধরেছিল, তার মা ও হয়ত সন্তানকে জড়িয়ে ধরে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। আগুনে পুড়ে মারা গেলেন তিন বছরের ছেলে ইয়াসিনকে বুকে জড়িয়ে, ওই অবস্থাতেই পাওয়া গেছে তাদের লাশ।

যাত্রীদের বরাত দিয়ে তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, ট্রেনটি খিলক্ষেতে এলে যাত্রীরা বগিতে আগুন দেখতে পান। তারা চিৎকার শুরু করলে চালক ট্রেনটি তেজগাঁও স্টেশনে থামান। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে।

রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা অঞ্চলের সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, তারা এ ঘটনাকে ‘রাজনৈতিক নাশকতা’ হিসেবেই সন্দেহ করছেন। এ বিষয়ে তিনি জানান, ট্রেনের দুই বগির সংযোগস্থলে প্রথমে আগুন দেখতে পান রেলওয়ে স্টাফরা। তারা ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশাপাশি দুটি কোচে।

এ সময় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিলে অনেকে হুড়োহুড়ি করে নামার চেষ্টা করেন, আবার অনেকে শুরুতে বুঝতেই পারেননি কী ঘটতে যাচ্ছে।

ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ট্রেন থেকে নামতে গিয়েও আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এদের মধ্যে মাথায় আঘাত পাওয়া একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ওই ব্যক্তির নাম নুরুল হক ওরফে আব্দুল কাদের (৫৩)। নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় তার বাড়ি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App