×

জাতীয়

বিজয় দিবসকে পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে সরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:১২ পিএম

বিজয় দিবসকে পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে সরকার
বিজয় দিবসকে পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে সরকার

ছবি: ভোরের কাগজ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় হয়েছিলো গণতন্ত্রের। সেই গণতন্ত্রকে হত্যা করে আজকে বিজয় দিবসকে আওয়ামী লীগ সরকার পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে। বিজয় দিবসে আমরা চেয়েছিলাম কি? পাকিস্তানের ২২ পরিবার যারা আমরা সোনালী আশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতাম সেই বৈদেশিক মুদ্রাকে কুক্ষিগত করে একটি লুটপাটের দেশে পরিণত করেছিলো পাকিস্তানকে। আমরা চেয়েছিলাম সেই ২২ পরিবারের পরিবর্তে এমন একটি স্বাধীন দেশ হবে বাংলাদেশ যেখানে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি হবে।

শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকালে স্বাধীনতার ৫২তম বার্ষিকীতে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালি করেছে বিএনপি। র‌্যালি পূর্ববতী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মঈন খান এসব কথা বলেন।

রঙ-বেরঙের ব্যানার-ফ্যাষ্টুনের পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে ছিলো লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা এবং দলীয় পতাকা। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বেলা আড়াই টায় শুরু হওয়া র‌্যালি কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড় ঘুরে আবার নয়াপল্টনে কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।

২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দেয়ার পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ২০ হাজারের অধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতারের এরকম অবস্থায় বিএনপি এই বিজয় র‌্যালী কর্মীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনের কার্যালয়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল করে ‘একতরফা’ নির্বাচন ও সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে দেখা যায়।

নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তালাবন্ধ। ওই বন্ধ কার্যালয়ের সামনে ছোট একটি ট্রাকের ওপরে অস্থায়ী মঞ্চে নেতৃবৃন্দ বিজয় র‌্যালী পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। র‌্যালীর প্রথম ভাগ যখন শান্তিনগর ঘুরে পল্টনের দিকে আসছিলো তখনও র‌্যালীর শেষ ভাগ নয়া পল্টনের কার্যালয় অতিক্রম করেনি।

ড. মঈন খান বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ সরকার কি করেছে? তারা ২২ পরিবারের পরিবর্তে ২২০টি ধনী পরিবার দিয়ে একটি অলিগার্কি সৃষ্টি করে বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন করে দিচ্ছে। আজকে এখানে তারা বিজয় দিবসকে পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে। আসুন আজকে আমরা শপথ গ্রহণ করি যারা বাংলাদেশকে লুটপাট করছে তারা বাংলাদেশের আদর্শকে টেনে-হিঁচড়ে মেরেছে, যারা স্বাধীনতাকামী মানুষের গণতান্ত্রিক ভোটের অধিকার হরণ করেছে, যারা মামলা-হামলা দিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে জেলের ভেতরে আটকিয়ে রেখেছে, সেই সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে নামি।

‘এই নির্বাচনের দরকার কি, ঘোষণা দিলেই তো হয়’-

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের মহাসচিবসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, নেতাদের দণ্ডিত করা হচ্ছে। এসব কেনো করা হচ্ছে? নির্বাচন নামে একটি খেলা খেলা করার জন্য। কিসের নির্বাচন? বাংলাদেশে কোনো বিরোধী দল আজকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। যারা নির্বাচনী খেলায় যোগ দিয়েছে তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের প্রধান তাকে পা ছুয়ে সালাম করে তার দোয়া নিয়ে নির্বাচনে নামতেছে। সবাই জানতেছে… পত্র পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে কোন দল কয়টা আসন পাবে, কারা কোন এলাকা থেকে নির্বাচন করবে। এটা ভাবতে পারেন। এটা কি কোনো নির্বাচন, এটা কি কোনো ভোট?

‘এই ডামি নির্বাচনের জন্য এই শীতের দিনে সাড়ে ৭ লক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকদেরকে নিয়োগ দেয়া হলো। কি কষ্ট করবেন তারা…. কেনো ভাই। যেভাবে নির্বাচন সাজানো হচ্ছে তাতে তো সবাই জেনেই যাচ্ছে যে কোন আসনে কে নির্বাচিত হবেন। এটা ঘোষণা করে দিলেই হয়। এজন্য নির্বাচনী খেলার কি দরকার?”

তিনি বলেন, ‘যে দেশের মানুষ না খেয়ে থাকে, যে দেশের মানুষ ভূমিহীন, কর্মহীন…এতো কষ্টে আছে যেখানে গরীব শ্রেণীর কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ তারা দুই বেলা খেতে পারে না, সপ্তাহে একদিন একটা ডিম খাবে সেটা পর্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে সেখানে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই নির্বাচন করার কি অর্থ থাকতে পারে।এই অপব্যয়ের কোনো প্রয়োজন আছে, ঘোষণা করে দিলেই হয় অমুক এলাকায় অমুক এমপি… মিটে গেলো।

‘এই রসিকতার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করি নাই, এই নির্বাচন নির্বাচন খেলার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করি নাই। আমরা চাই, বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক। আর সেই গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে…জনগণ যাকে পছন্দ করবে তারা নির্বাচিত হবে, তারা সরকার গঠন করবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। আজকে সেই নির্বাচনের জন্য আমরা লড়াই করছি। এই লড়াই চলবে যতদিন না জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।

সভাপতির বক্তব্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘‘ কোন দেশে আমরা আছি যে, একটা বিজয় র‌্যালী করতেও অপেক্ষায় থাকতে হয়? গত রাতে আমরা বিজয় দিবসের র‌্যালীর অনুমতি পেয়েছি। মাত্র কয়েক ঘণ্টার প্রস্তুতিতে লাখো মানুষের সমাবেশ হয়েছে এই পল্টনে। এই পল্টনই হবে আগামী দিনের বিজয় চত্বর। আগামী দিনে আমরা এখানেই বিজয় অনুষ্ঠান করবো।

এই র‌্যালীতে আরো ছিলেন- দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, আফরোজা খানম রীতা, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, হাবিব ঊন নবী খান সোহেল, শিরিন সুলতানা, কায়সার কামাল, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, সেলিম রেজা হাবিব, রেহানা আক্তার রানু, সৈয়দা আসিফা আশরাফী, নেওয়াজ হালিমা আরলি, রাশেদা বেগম হীরা, তাইফুল ইসলাম টিপু, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, হায়দার আলী লেলিন, রফিক শিকদার, নিপুণ রায় চৌধুরী, আমিরুজ্জামান শিমুল, মোরতাজুল করীম বাদরু, বজলুল করীম চৌধুরী আবেদ, তারিকুল আলম তেনজিং, খোন্দকার আকবর হোসেনসহ অঙ্গসংগঠনের আত্মগোপনে থাকা নেতারা ছিলেন।

' র‌্যালীতে নেতা-কর্মীর ঢল’-

ফকিরেরপুল বাজার থেকে শুরু করে নাইটেঙ্গল রেঁস্তোরা মোড় পর্যন্ত নয়া পল্টনের সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতি বিজয় র‌্যালি একটা বড় সমাবেশে রূপ নেয়। ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে নয়া পল্টনের সড়কে সমবেত হয়।

জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ছিলো নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে। তারা ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, ‘এক জিয়া লোকান্তরে, লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে’, ‘আজকের এই দিনে জিয়া তোমায় মনে পড়ে’, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘শেখ হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালাও এক সাথে’, ‘অবৈধ নির্বাচন মানি না মানব না’, ‘বন্দুক দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’ ইত্যাদি শ্লোগানে সরব-সোচ্চার ছিলো।

বিএনপির এই দীর্ঘ র‌্যালীতে মুক্তিযোদ্ধা দল, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, ছাত্র দল, জাসাস, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, শ্রমিক দল, উলামা দল, ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর ও দক্ষিণ প্রভৃতি সংগঠন ছাড়াও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, ড্যাব, এ্যাব, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটসহ ঢাকা জেলা, নরসিংদী জেলা বিএনপির সংগঠন ছিলো।

র‌্যালী উপলক্ষে এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। সাড়ে ১১টা থেকে নয়া পল্টনের সড়কের একদিকের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে পুলিশ। নয়া পল্টন থেকে শুরু করে মালিবাগ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App