×

জাতীয়

গান-কবিতায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৪৮ পিএম

গান-কবিতায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন

বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অঙ্গনে স্মরণ করা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। ছবি: ভোরের কাগজ

গান-কবিতায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন

নাটকের সংলাপে, স্মৃতিচারণে, কবিতার উদাত্ত উচ্চারণে, নৃত্যের ছন্দে, সঙ্গীতের বজ্রকণ্ঠে, মোমবাতি প্রজ্বলন আর রং-তুলিতে ক্যানভাস রাঙিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অঙ্গনে স্মরণ করা হয়েছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের।

বাংলা একাডেমী- সকালে রায়েরবাজার শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, মিরপুরস্থ শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ শহিদ বুদ্ধিজীবী সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলা একাডেমীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শুরু হয়। বিকালে একাডেমীর কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলা একাডেমীর সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শহিদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানদ্বয়- অনল রায়হান এবং শমী কায়সার। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ধন্যবাদ জানান বাংলা একাডেমীর সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর।

সেলিনা হোসেন বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন ছিল বৈষম্য, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। এই স্বপ্ন পূরণই হোক এবারের বুদ্ধিজীবী দিবসে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।

মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীরা এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের আদর্শ অনুযায়ী মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করতে পারলেই শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে।

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানদ্বয় অনল রায়হান এবং শমী কায়সার বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ঊষালগ্নে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসররা চেয়েছিল বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দরিদ্র করে দিতে। তাঁরা বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের শূন্যতা আমরা পরিবারের সদস্যরা যেমন অনুভব করি তেমনি বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রও গভীরভাবে অনুভব করে।

শিল্পকলা একাডেমী- শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালা ও কর্মসূচী পালিত হয়েছে। সকালে একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর নেতৃত্বে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় আয়োজন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- একাডেমীর সচিব সালাহউদ্দিন আহমদ এবং অন্যান্য শিল্পী ও কর্মকর্তারা। এরপর একাডেমীর আয়োজনে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তি ও দেশের গান।

স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, কবি শাহজাদী আঞ্জুমান আরা, কবি শাকিরা পারভীন, কবি নাসির আহমেদ, কবি ফারুক মাহমুদ এবং কবি জব্বার আল নাঈম, কবি ঝর্ণা রহমান, কবি সৌম্য সালেক, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি নাহিদা আশরাফী, কবি গিরীশ গৈরিক, কবি আমিনুর রহমান সুলতান এবং কবি রাসেল রায়হান। আবৃত্তি করেন শিমুল মোস্তফা, কাজী বুশরা আহমেদ তিথি, দি রেইন এবং ডালিয়া আহমেদ, লায়লা আফরোজ, গোলাম সারোয়ার, ফয়সাল আহমেদ অনন্ত, সুপ্রভা সেবতী এবং ফয়জুল্লাহ সাঈদ। দেশের গান পরিবেশন করেন মিরাজুল জান্নাত সোনিয়া, শিবু রায়, আলম আরা মিনু এবং আবু বকর সিদ্দিক। একক সংগীত পরিবেশন করেন বাঁধন কামাল আহমেদ এবং স্বরলিপি।

বিকালের আয়োজনে একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন সাংবাদিক ও লেখক জাহিদ রেজা নূর। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমীর সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ। আলোচনা শেষে কবিতা পাঠ করেন কবি আসলাম সানি এবং আনোয়ারা সৈয়দ হক। আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইকবাল খোরশেদ। দলীয় সংগীত পরিবেশন করে ঢাকা সাংস্কৃতিক দল। একক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী খুরশিদ আলম, খায়রুল আনাম শাকিল, রন্টি দাস, চন্দনা মজুমদার, সাজিয়া হোসেন প্রীতি। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে একাডেমীর নৃত্যদল।

উদীচী- নতুন প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধের খণ্ডিত নয়, পূর্ণাঙ্গ ও প্রকৃত ইতিহাস জানানো, মননশীল চর্চায় আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়ে গান, আবৃত্তি, নাচ, আলোচনার মাধ্যমে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজন করা হয় এ স্মরণ অনুষ্ঠান। শুরুতেই ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ এবং ‘মানুষ হ, মানুষ হ’ দুটি সমবেতভাবে পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা।

এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিমের সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা পর্ব। আলোচনায় অংশ নেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি নিবাস দে এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান।

তারা বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে জাতিকে মেধাশূন্য করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তা আজও চলছে। দেশের তরুণ প্রজন্মকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চলছেই। জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন সেই অবদানকে শুধু স্মরণ করলেই হবে না, তাদের আদর্শ অনুসরণ করে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ।

সাংস্কৃতিক পর্বে দু’টি দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শহিদ বুদ্ধিজীবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এস এম রাশিদুল হাসানের সন্তান রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রোকাইয়া হাসিনা, তৌহিদা স্বাধীন, মায়েশা সুলতানা উর্বী, বিজয় বণিক এবং ফারহান। এ ছাড়া পাঁচটি দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। এছাড়া, ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’ নামের দলীয় আবৃত্তি পরিবেশনা করেন উদীচীর বাচিক শিল্পীরা। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন, কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য শিখা সেন গুপ্তা এবং মোহাম্মদপুর শাখার বাচিক শিল্পী মির্জা আতিকুজ্জামান।

এর আগে, সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এবং রায়েরবাজার বদ্ধভূমিতে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন উদীচী কেন্দ্রীয় এবং ঢাকার বিভিন্ন শাখা সংসদের নেতৃবৃন্দ।

নাট্যম রেপার্টরী- মহান শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে নাটকের দল নাট্যম রেপার্টরী ‘সলিটারি কনফাইনমেন্ট’ নাটকটির বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর স্টুডিও থিয়েটারে। শাকিল আহমেদের রচনায় নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন ড. আইরিন পারভীন লোপা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App