×

জাতীয়

হলফনামায় সম্পদের হিসাব যেনো ‘আলাউদ্দিনের চেরাগের কাহিনী’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:১১ পিএম

হলফনামায় সম্পদের হিসাব যেনো ‘আলাউদ্দিনের চেরাগের কাহিনী’

ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের হলফনামায় সম্পদের হিসাব ‘আলাউদ্দিনের চেরাগের কাহিনীর মতো’ বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিং-য়ে সরকারের মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের হলফনামার হিসাব চিত্র তুলে ধরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এরকম মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, আসন্ন একদলীয় পাতানো নির্বাচন উপলক্ষে তাদের মন্ত্রী-এমপি-ডামি-উচ্ছিষ্টভোগী স্বতন্ত্রদের হলফনামা পড়লে মনে হয় যেন আরব উপন্যাসের সেই বিখ্যাত আলাউদ্দিন চেরাগ, সেই কাহিনী পড়ছিলাম। কারোটা দেখলে মনে হয় সাদ্দামের বেহেস্তে তারা বসবাস করছেন। তাদের বাড়ি-গাড়ি, বিদেশে অভিজাত এলাকায় তাদের এপার্টমেন্ট, তাদের ডুপ্লেক্স সব কিছু মিলেই মনে হয় যে, তারা সাদ্দামের বেহেস্তে বসবাস করছেন। নিশিরাতের ভোট ডাকাত সরকারের ৫ বছর থেকে ১৫ বছরের মন্ত্রী-এমপি ও তাদের নেতারা অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, অনেকে প্রায় কপট থেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ নয় বট গাছ হয়েছেন। তাদের স্ত্রী-সন্তান-শ্বাশুড়িরাও টাকার কুমিরে পরিণত হয়েছে।

রিজভী বলেন, সাধারণ ব্যবসায়ীদের লোকসান হলেও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকদের কোনো লোকসান নেই। আওয়ামী রাজনীতি এমন একটি ব্যবসা যেখানে কোনো ঝুঁকি নেই এবং লোকসান হওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই। যে ব্যবসাই করছেন তাতেই লাভ আর লাভ। শেয়ার ব্যবসায় তারা কেউ ক্ষতির মুখোমুখি হননি। কৃষিখামার এবং মাছের ব্যবসাতেও বহু গুণ লাভ করেছেন। স্বামীদের ব্যবসা দেখাশোনা করতে গিয়ে স্ত্রীরাও কোটি কোটি টাকা অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন।

হলফনামা ধরে প্রতিদিন প্রাত্যহিক সংবাদপত্রে নির্বাচনের প্রার্থীদের সম্পদের যে বিবরণ প্রকাশিত হচ্ছে তা দেখে জনগনের চক্ষু চড়কগাছের অবস্থা। তারা ভাবতে থাকে আমরা কি একটা বাস্তব জগতে বাস করছি? এযেন সেই রুপকল্পের জগত.. নাকি কল্পনার স্বর্গরাজ্যে বাস করছি… এটাও সম্ভব! একেকজন মানুষের সম্পদ ২০০ গুণ, ৩০০ গুণ, ৪০০ গুণ, ৫০০ গুন, কেউ আবার পাঁচ বছরে ৭০০ গুণ সম্পদেরও মালিক হয়েছেন।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতার ভাষ্য- অবস্থা এমন হয়েছে যে, টাকার পাহাড়ে ঘুমান মন্ত্রী-এমপি-নেতারা। যে মন্ত্রী-এসপি নিজেকে কৃচ্ছতা সাধনের বরপুত্র বলে জাহির করতেন কিংবা যিনি জনসমুখে সততার পরাকাষ্ঠ প্রদর্শনের নাটক করতেন তাদের সততার বিভৎস বিগ্রহ জনগনের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। যারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের প্রায় সকলেরই নগদ অর্থকড়ি-বিত্ত সম্পদ দ্বিগুণ থেকে প্রায় হাজার গুন স্ফীত হয়েছে।

আওয়ামী জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় কারো হয়েছে সম্পদের পাহাড়, কারো গাড়ির বহর। দশ বছর আগে যে মন্ত্রীর হলফনামায় হাজারের ঘরে ছিল বার্ষিক আয় তিনিও এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। সবাই জানি- তাদের হলফনামায় সম্পদের সামান্যই প্রদর্শন করা হয়েছে। অবৈধ অর্থ, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ, সেকেন্ড হোম, বিদেশী গচ্ছিত বেশুমার সম্পদের হিসাব নেই। যারা আওয়ামীলীগ করেন তাদের ব্রতই যেন লুটপাট করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়া। লুটেরা রাজ্যের সম্পদ ছিটে ফোটা মাত্র এই হলফনামায় উঠে এসেছে। এমপি-মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থীরাও অনেক তথ্য গোপন করেছেন।

রিজভী বলেন, প্রতিটি হলফনামার অবস্থা তথৈবচ। হলফনামায় তারা যেসব সম্পদের কথা বলেছেন এটা তো নগণ্য। আসলে বাস্তবে এর চাইতে আরও কত গুন তাদের সম্পদ যেটা তারা আড়াল করেছেন। অর্থ বিত্ত সম্পদের ছিটেফোটার হিসাব দিলেও কোন কোন মিথ্যেবাদী মন্ত্রী-এমপিরা তাদের হলফনামায় দেশকে শায়েস্তা খাঁর আমলে ফিরিয়ে নিয়েছেন। যে শাসনামলে টাকায় ৮ মন চাল পাওয়া যেতো। শেখ হাসিনার আদর্শিক কিছু অটোপাস এমপি জনগনকে ব্যাকুব মনে করে। লুটের অর্থ সম্পদ কম দেখাতে তাদের প্রায় সকলেই গাড়ী, বাড়ী, জমি-জিরাত-খামার-বাড়িভাড়া, সোনা-দানা-অলংকারসহ সবকিছুর মুল্য অতি সামান্য দেখিয়েছেন, তাতে মনে হচ্ছে তারা এখনো শায়েস্তা খাঁর আমলে বাস করছেন।

সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী হলফনামায় তার ১০০ ভরি স্বর্ণের দাম দেখিয়েছেন মাত্র এক লাখ টাকা। সে হিসাবে তার কাছে গচ্ছিত প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম পড়েছে এক হাজার টাকা, কুমিল্লা-৭ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এমপি ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ২২ ভরি স্বর্ণের দাম দেখিয়েছেন ২১ হাজার টাকা। প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দেখিয়েছেন ৯৫৫ টাকা, এটা কি পাগলে বিশ্বাস করবে?

তিনি বলেন, আওয়ামী মাফিয়া রাষ্ট্রে এমপি বা মন্ত্রিত্ব যেন আলাদিনের চেরাগ। এই শাই শাই করে চোখের পলকে শানৈ উন্নতি, অর্থবিত্তের পাহাড় গড়ার নেপথ্য রহস্য জানে প্রতিটি মানুষ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন তার ছোট্ট উদাহারন। প্রতিটি মন্ত্রী-এমপির বিমূর্ত অবয়ব তিনি। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার জন্য দেওয়া ৯৪ লাখ ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের হাতে তার মিন্টো রোডের ১১ নম্বর সরকারি বাসভবনে নির্মম মারধরের শিকার হয়েছেন পুলিশ সদস্যসহ তিন ভূক্তভোগী অসহায় ব্যক্তি।”

প্রতিমন্ত্রীর নিয়োগ বাণিজ্য ও গুন্ডামীর এই খবর সকল পত্র-পত্রিকা টেলিভিশন অনলাইনে ভাইরাল হওয়ার পর টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে ১০ ডিসেম্বর সাতজনের কাছ থেকে নেওয়া সাড়ে ৯ লাখ টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন প্রতিমন্ত্রী।

‘দুর্নীতি দমন কমিশন এখানে অন্ধ’

রিজভী বলেন, এসব অর্থ সম্পদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন একেবারেই নিরব, অন্ধ। তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জুলুমের প্রতিষ্ঠান বিরোধী দলের ওপর তার ধারালো তরবারি নিয়ে দৌড়াতে থাকে। আর আওয়ামী লুটেরা গোষ্ঠির সস্পর্কে তারা নিরব, নিশ্চুপ। তখন তাদের চোখ অন্ধ হয়ে যায়। দুদককে দলকানা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। তাদের কাজ হলো খুঁজে খুঁজে বিএনপি এবং ভিন্নমতের ব্যক্তিদের ঘায়েল করা এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে এই তথাকথিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠানটিকে।”

তিনি বলেন, ‘‘বাস্তবতা হলো মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের এই সম্পদ এই টাকার পাহাড় কিভাবে গড়ে উঠেছে আয়ের উৎস কি এইসব নিয়ে শেখ হাসিনার মাথাব্যাথা নেই। জবাবদিহিতা নেয়ার কেউ নেই। কারন সবকিছু আওয়ামীময় নষ্টদের অধিকারে। বর্গীদের মতো লুটের রাজ্য ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে টপ টু বটম ব্যস্ত। তারা জনগনের সম্পদ চেটেপুটে খেয়ে পেট মোটা করতে এসেছেন। লুটের শাসন স্থায়ী করতে খুন গুম হামলা মামলা গ্রেফতার মিথ্যা সাজা দেয়া হচ্ছে। জনগনের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এক তরফা নির্বাচনের নাটক করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে অন্ধ হয়ে পড়েছে।

গত ২৪ ঘন্টায় আরও ৩৪০ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, ৯টি মামলায় ৯২৮ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App