×

জাতীয়

সাংবাদিকদের লড়াইয়ের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:১০ পিএম

সাংবাদিকদের লড়াইয়ের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে

১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনে পথিকৃৎ ছিলেন সাংবাদিকরা। আবরুদ্ধ দেশে পাকিস্তানে হানাদারবাহিনীর বুটের নিচে শহীদ সাবের, শহিদুল্লাহ কায়সারদের মতো সাংবাদিকরা স্বদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কোন আপোষ করেনি। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে এই মহান সাংবাদিকদের প্রকৃত ইতিহাসের সন্ধান করতে হবে। সঠিক ইতিহাস লিখতে হবে।

জাতীয় প্রেস ক্লাব আয়োজিত 'মুক্তিযুদ্ধ : ইতিহাস চেতনা ও অদম্য বাংলাদেশের গল্প' বিষয় আলোচনা এসব কথা বলেন বক্তারা। শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) প্রতিষ্ঠানটির জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে আরো আলোচক ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বর্তমান সভাপতি ওমর ফারুক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আইয়ুব হোসেন ভূইয়া।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়ংকর দৃশ্যের কথা তুলে ধরে মফিদুল হক বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের অঙ্গনটাও স্মৃতিকাতর করে তোলে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি গোলা জাতীয় প্রেস ক্লাবের দোতলায় আঘাত করেছিল। তখন সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ সেখানে অবস্থান করেছিলেন। তখন তিনি আহত হয়েছিলেন। পরে চিকিৎসা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

তিন শহীদ সাংবাদিককে তিনি শ্রদ্ধা সঙ্গে স্মরণ করে তিনি বলেন, শহীদ সাবের অল্প বয়সে সাহিত্য দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়েছিলেন। সে সময়ে তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন। প্রেস ক্লাব ও পত্রিকার সঙ্গে আত্মিক বন্ধন কখনো তিনি ছিন্ন হতে দেননি। সারাদিন প্রেস ক্লাবে কাটাতেন। চুল-দাড়িতে অবিন্যস্ত সাবের 'চকিতে' জ্বলে উঠতেন। চার আনা পয়সা নিয়ে খুঁজে জীবন চালাতেন। প্রেস ক্লাব ছিল তার আশ্রয়, সংবাদ(দৈনিক পত্রিকা) ছিল রাতের ঘুমের স্থান। ২৫ মার্চ যখন সংবাদের অফিস দগ্ধ হয় সেখানে তিনি পুড়ে অঙ্গার হয়ে গিয়েছেন।

বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী শহীদুল্লাহ্ কায়সার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারাবন্দী ছিলেন। আরেকজন শহীদ সিরাজউদ্দীন হোসেন। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার শিকার। অবরুদ্ধ সময়ে ইত্তেফাক পত্রিকার 'হাল'(দায়িত্ব পালন করা) ধরেছিলেন।

অবরুদ্ধ দেশে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বুটের নিচে তিনি স্বদেশি মুক্তির আকুতি ইত্তেফাক পত্রিকায় তুলে ধরেছিলেন। সাংবাদিক জগতে তিনি নজির স্থাপন করেছেন। এমন আরো আছেন - তোফাজ্জেল হোসেন মানিক, সিরাজউদ্দীন হোসেন। বঙ্গবন্ধু যে জাতীয় জাগরণ তৈরি করেছেন, সেখানে সাংবাদিকদের ভূমিকা আমাদের নানাভাবে অনুপ্রাণিত করে। তারা মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে দুইজন পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিক নিখোঁজ হয়েছেন। সাংবাদিকরা আপোষহীন মনোভাব দেখিয়েছেন, তাই তাদের হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সাংবাদিকতায় কতটুকু তাদের(মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের) আদর্শ ধরে রাখতে পেরেছি?

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সাংবাদিকতায় সবসময় নিরপেক্ষতা থাকে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্পষ্টভাবে সাংবাদিকরা দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ২৫ বছর ধরে জনমত গঠন ভূমিকা রেখেছিল সাংবাদিকরা। তাই ১৪ ডিসেম্বর(বুদ্ধিজীবী দিবস) সাংবাদিক মেরে ফেলা হয়েছে। ভারতেরও কয়েকজন সাংবাদিক ছিল। তাদের পরিবার এখনো অপেক্ষায়। সেসময় সাংবাদিকরা ছিল আপোষহীন। এখন সাংবাদিকদের হত্যা করার দরকার নেই। চাইলে কিনে নেয়া যায়।

সাইফুল আলম বলেন, গত ৫১ বছর ধরে এই দিবস পালন করছি। কিন্তু মূল ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। সামরিক, অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক সরকার সুষম বণ্টন ব্যবস্থা বাধা গ্রস্ত করেছে। স্বাধীন গণমাধ্যমও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবুও সব প্রগতিশীল আন্দোলনে সাংবাদিকরা ভূমিকা পালন করেছে। অনেক ইতিহাস লেখা হয়েছে। প্রকৃত ইতিহাস লিখতে হলে সময়ের প্রয়োজন। ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে পেরেছি? বিচার করেছি?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App