×

জাতীয়

ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে ফের তৎপর রওশনপন্থীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:২৫ পিএম

ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে ফের তৎপর রওশনপন্থীরা

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েছিলেন। বলতে গেলে রাজনীতির খেলায় জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে হেরে দলে কর্তৃত্ব হারিয়ে অনেকটা ‘একঘরে’ হয়ে পড়েছিলেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছিলেন রওশন অনুসারী নেতারা।

এ অবস্থায় আসন সমঝোতা নিয়ে সরকারের সঙ্গে জিএম কাদেরের টানাপোড়েনের মধ্যে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর ফের আলোচনায় আসেন রওশন এরশাদ। এর মধ্যদিয়ে রওশন এরশাদ অনুসারীরা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে।

দীর্ঘ ৩২ বছর পর নির্বাচনে নেই জাপার ৮২ বছর বয়সী প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। শুধু রওশন একা নন, নির্বাচনে নেই দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশনের ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদও। সাদ যে আসনের সংসদ সদস্য, সেখানে এরশাদের ভাই, দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের প্রার্থী হয়েছেন।

এর মধ্যদিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কার্যত রওশন এরশাদ, তার ছেলে সাদ এরশাদসহ তার অনুসারীরা মাইনাস হয়ে গেছেন আগেই। এরপর জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদটিও হারানোর শঙ্কায় আছেন রওশন। বলতে গেলে রাজনীতির খেলায় রওশন এরশাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে গেছে। এবার নির্বাচনে অংশ না নেয়ার মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক অধ্যায়েরও শেষ হতে যাচ্ছে।

জাপা সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভরসায় ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ থেকে শুরু করে জমা দেয়ার আগ পর্যন্ত বারবার চেষ্টা করেও সরকারপ্রধানের সাক্ষাৎ না পাওয়ায় রওশনের ক্ষমতা হ্রাস পায়। রওশন এরশাদের নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে থাকার বিষয়টি অনেকেই ভাবতে পারেননি। আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় রওশনপন্থিদের মধ্যে হতাশার ছাপ পড়ে। তার অনুসারীদেরও রাজনীতির ময়দান থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাপা অংশ নিচ্ছে। দলটির নেতারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। এরই মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জাপার টানাপোড়েনের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যায়। গুঞ্জণ ছড়ায় আসন সমঝোতা না হলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারে জাতীয় পার্টি। এমন গুঞ্জণের মধ্যেই মঙ্গলবার দুপুরে আকষ্মিক গনভবনে যান রওশন এরশাদ। বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে।

এই সাক্ষাতে জিএম কাদের অবৈধভাবে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দখল করেছেন অভিযোগ করে ‘খণ্ডিত জাতীয় পার্টি’ ও জিএম কাদেরের সঙ্গে কোনো নির্বাচনী জোট না করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানান রওশন এরশাদ। গণভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কয়েকটি প্রশ্নের জবাবও দেন রওশন। নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেছেন কি না, জানতে চাইলে রওশন বলেন, এখন তো আর সময় নেই। আর কী বলবেন। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে রওশন বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেননি। আমার ছেলের জায়গায় উনি ইলেকশন করছেন। জাতীয় পার্টির নেতাদের প্রতি সমর্থন আছে কি না, জানতে চাইলে রওশন বলেন, আমাদের ইচ্ছা করে বাদ দিয়েছে। কেন সমর্থন থাকবে?

এরপর জাপা নেতা কাজী মামুনুর রশিদ রওশন এরশাদের একটি লিখিত বক্তব্য সাংবাদিকদের কাছে উপস্থাপন করেন। যেখানে বলা হয় জি এম কাদের অবৈধভাবে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দখল করেছেন। সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সুকৌশলে রওশন এরশাদ, সাদ এরশাদসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সরিয়ে দিয়েছেন। দলের মধ্যে ‘ক্যু’ করে নেতৃত্ব নিয়েছেন। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় রওশন এরশাদের সঙ্গে আরো ছিলেন তার ছেলে সাদ এরশাদ, সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্।

গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর রওশন এরশাদের অনুসারী একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে তাদের ভিতর একধরনের চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা যায়। কয়েকজন নেতা জানান খুব শিগগিরই রওশন এরশাদ আহূত জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির কাউন্সিল আহ্বান করা হবে। সেখানে সারাদেশের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা যুক্ত হবে। সেখানে নতুন করে জাতীয় পার্টির ত্যাগী নেতাদের নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। এর মধ্যদিয়ে পঞ্চম বারের মতো জাতীয় পার্টি ভাঙ্গতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রওশনপন্থী এক নেতা ভোরের কাগজকে বলেন, জিএম কাদেরের একক ইচ্ছার কারণেই রওশন এরশাদ কিংবা দলের অনেক সিনিয়র নেতা নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হলেন। জিএম কাদেরকে এটার চরম খেসারত দিতে হবে। এমন সময় আসবে জিএম কাদের নিজেই জাপা থেকে হারিয়ে যাবেন। সামনের দিনে জাতীয় পার্টিতে অনেক কিছু দেখতে পাবেন। আমরা তো নিশ্চয়ই রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাবো না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনই তো একটা দলের সব কিছু নয়। এটা একটা অংশ মাত্র। এর বাইরেও অনেক কিছু থাকে। আশা করি, খুব শিগগিরই সব পরিস্কার দেখতে পাবেন। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াবো।

প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এবারের নির্বাচনে নিজের অনুসারীদের বাদ দিয়ে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি রওশন ও তার ছেলে সাদ এরশাদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App