×

জাতীয়

বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজন নীতি সংস্কার ও সমন্বয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:১৪ পিএম

বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজন নীতি সংস্কার ও সমন্বয়

রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘Validation Workshop on the Report of the Study on Expanding Private Investment in the Context of LDC Graduation’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: ভোরের কাগজ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জনাব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেছেন যে দেশে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার ও সমন্বয় অপরিহার্য। একই সাথে তিনি বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে আরও সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘Validation Workshop on the Report of the Study on Expanding Private Investment in the Context of LDC Graduation’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ কথা বলেন।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) উক্ত কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব শেখ ইউসুফ হারুন এবং ইআরডি এর প্রাক্তন সিনিয়র সচিব শরিফা খান। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব জনাব মো. শাহ্‌রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।

স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়াকে মসৃণ ও টেকসই করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে উত্তরণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির দিকনির্দেশনায় এবং ইআরডি-এর এসএসজিপি প্রকল্পের সহযোগিতায় উত্তরণের সম্ভাব্য প্রভাব পর্যালোচনা এবং তদনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

সেই প্রেক্ষাপটে উত্তরণের ফলে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ সম্প্রসারণের কি ধরনের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সুযোগের সদ্ব্যবহারের জন্য কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে তা পর্যালোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুরোধে এসএসজিপি প্রকল্পের আওতায় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের সহযোগিতায় ‘Study on Expanding Private Investment’ শীর্ষক একটি গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।

এমতাবস্থায় উক্ত গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রধান প্রধান দিকসমূহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীদারদের নিকট তুলে ধরা এবং তা প্রয়োজনীয় পর্যালোচনাপূর্বক প্রতিবেদনটি চূড়ান্তকরণের উদ্দেশ্যে কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়।

মুখ্য সচিব বলেন যে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুত হতে গেলে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উপর জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি বেসরকারি খাতে ব্যাপকভাবে গবেষণা ও উন্নয়নের উপর বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহবান জানান।

ইআরডি সচিব জনাব মো. শাহ্‌রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী তাঁর বক্তব্যে দেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির উপর জোর আরোপ করেন। ইআরডি এর প্রাক্তন সিনিয়র সচিব শরিফা খান তাঁর বক্তব্যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সমুহের পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বেজা-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, সরকার প্রতি বছর চারটি করে অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু করার লক্ষ্যে কাজ করছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- ইআরডি-এর অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জনাব ফরিদ আজিজ। জনাব ফরিদ আজিজ তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে উত্তরণের প্রভাবসমূহের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া, উত্তরণ পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখা এবং জাতীয় জীবনের বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী অভীষ্টসমূহ অর্জনের লক্ষ্যে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিতকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কর্মশালায় উল্লিখিত গবেষণাকর্মটির প্রধান প্রধান দিকসমূহের আলোকপাত করে একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। জনাব সেলিম রায়হান তাঁর উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করার ক্ষেত্রে বৃহৎ পরিসরের অবকাঠামো একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। সে কারণে মেগা প্রকল্পসমূহের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের উপর ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে নির্ভর করবে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য শুল্ক ও কর পদ্ধতি আরও যৌক্তিকীকরণ, আইন, বিধি ও নীতিমালার সময়োপযোগী সংস্কার, বিভিন্ন দেশের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন এবং মানবদক্ষতা উন্নয়ন, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পসমূহকে সুনির্দিষ্ট সহায়তা প্রদান, আঞ্চলিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক সংহতি বৃদ্ধি এবং ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো পদ্ধতি ব্যবস্থার প্রবর্তনের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়।

কর্মশালায় প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমিন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার মো. সামির সাত্তার এবং বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)-এর চিফ এক্সেকিউটিভ অফিসার ফেরদৌস আরা বেগম।

ব্যারিস্টার মো. সামির সাত্তার তাঁর বক্তব্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দেশেই একটি শক্তিশালী আরবিট্রেশন (arbitration) ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং সেই লক্ষ্যে তিনি বিদ্যমান সালিশি আইনটি যুগোপযোগী করার পরামর্শ দেন।

ইআরডি ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উক্ত কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App