×

জাতীয়

দেশে চীনের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় হবে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৫০ পিএম

দেশে চীনের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় হবে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র

ছবি: সংগৃহীত

দেশে চীনের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় জামালপুরের মাদারগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি সোলার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানিটির ৩০ শতাংশ মালিকানা বিআরপিএলের আর ৭০ শতাংশ মালিকানা চায়নার কাছে থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে এ কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এরআগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এ বৈঠকে এমন সিদ্ধান্তের নীতিগত অনুমোদনও মিলেছে।

প্রসঙ্গত, সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সরকারের বর্তমান মেয়াদের ১২৬তম, আর ২০২৩ সালের ১৯তম মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে। মোট ১৫টি বিষয় এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত ছিল, সেগুলো এতে উপস্থাপিত ও আলোচিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশে চীনের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে কৌতুহল শুরু হয়েছে। কারণ চীন শুধু টাকাই দেবে না, তার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ঋণও এনে দেবে। এর দায়দায়িত্ব চীনের।

সভার পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এই কোম্পানি গঠনে চীনের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বিস্তারিত তথ্য নেই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য পাওয়া যাবে। তবে চীনা কোম্পানি ৭০ শতাংশ মালিকানা থাকলেও পুরো ঋণের দায়িত্ব তাদের। তিনি বলেন, তারা দেশি ও বিদেশি ঋণের দায়িত্ব নেবে। অর্থাৎ এই কোম্পানি গঠনে বাংলাদেশকে কোনো সভরেন গ্যারান্টার দিতে হবে না। পাশাপাশি তাদের আনুপাতিক বিনিয়োগও থাকবে।

তিনি আরো বলেন, জামালপুরের মাদারগঞ্জে সোলার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি জয়েন্ট ভেনচার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রায় সাড়ে ৩০০ একর জমিতে চীনা প্রতিষ্ঠান সিআরইসি ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়াবাল এনার্জি কোম্পানি ও বাংলাদেশের বি.আর পাওয়ারজোন লিমিটেডের (বিআরপিএল) যৌথ উদ্যোগে এই কোম্পানি গঠন হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও আরইবির মালিকানাধীন কোম্পানি বিআরপিএল। মাহবুব হোসেন বলেন, এই কোম্পানিটির ৩০ শতাংশ মালিকানা থাকবে বিআরপিএলের আর ৭০ শতাংশ চীনা কোম্পানির। এখানে ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এ জন্য ২০ বছর মেয়াদি চুক্তি সই হয়েছে। এছাড়াও মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি অধ্যাদেশ প্রণয়নের জন্য তোলা হয়েছিল বলে জানান মাহবুব হোসেন।

মাহবুব হোসেন বলেন, এটি ছিল জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধ্যাদেশ। তবে মন্ত্রিসভা মনে করেছে, এটিকে অধ্যাদেশ করার দরকার নেই, নির্বাচনের পর যখন সরকার গঠিত হবে, তখন এটি উপস্থাপন করা হবে। সাধারণত অতি-জরুরি প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। যে কারণে এটি জরুরি না হওয়ায় আগামী সরকারের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবীরা পাবেন আইডি কার্ড : স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত এবং সহযোগিতা করার জন্য ‘জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক নীতিমালা ২০২৩’ -এর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নীতিমালায় স্বেচ্ছাসেবীদের আইনি জটিলতা এড়ানো ছাড়াও ছবিসহ পরিচয়পত্র দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, স্বেচ্ছাসেবা বাংলাদেশে খুবই ভালো একটি ক্ষেত্র। ইতোমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবায় আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবা করে। স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে ভালোভাবে কাজ করছে। তাদের কাজকে সহযোগিতা করার জন্য, তাদের কীভাবে আরও উৎসাহিত করা যায়, সেগুলো নিশ্চিত করার জন্য এ নীতিমালা করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বেচ্ছাসেবীদের বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হবে। তাদের প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে। তাদের ছবিসহ আইডি কার্ড থাকবে। তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। কাজ করতে গিয়ে তারা যদি আইনি কোনো সমস্যায় পড়েন, সেখানেও তাকে সহযোগিতা করা হবে। বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কাউন্সিল গঠিত হবে। কারণ সারা বিশ্বে স্বেচ্ছাসেবকদের চাহিদা আছে। বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকরা যাতে বিভিন্ন দেশে কাজ করতে পারে সেজন্য তাদের প্রশিক্ষিত করা হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে পারে।

সমুদ্রবন্দরে জেটি নির্মাণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর : বাংলাদেশের বিভিন্ন সমুদ্র বন্দরে জেটি নির্মাণের জন্য নির্দেশ দিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে সামুদ্রিক পর্যটন নীতিমালার খসড়া অনুমোদনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

বৈঠক শেষে বিকেলে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন আমাদের এরকম টার্মিনাল করা যায় বা জেটি নির্মাণ করা যায়। স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেখানে নির্মাণকাজটি যেন দ্রুত শুরু করতে পারেন। এজন্য সমীক্ষা পরিচালনা এবং এ ব্যাপারে কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের যে সমুদ্র তীর আছে সেখানে ডেক বা জেটি নেই। আপনারা যারা বিদেশে গিয়েছেন তারা দেখেছেন যে সব সমুদ্র বন্দরে একটি জেটি থাকে, মানে একটি টার্মিনালের মতো। সেখানে জাহাজগুলো থাকে এবং ওখান থেকে যাত্রী নেয় তারা। সমুদ্রে ট্যুর করে ওখানে আবার যাত্রী নামিয়ে দেয়।

প্লেন চলাচলে ইইউর সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে : বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে প্লেন চলাচলে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে সম্মতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এজন্য বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে স্বাক্ষরের লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক প্লেন চলাচল চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমরা প্লেন চলাচলের জন্য চুক্তি করে থাকি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের প্লেন চলাচল চুক্তি আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তারা চুক্তি করতে চান। প্রথম যখন প্রস্তাব এসেছিল তখন ব্রিটেনসহ ছিল। পরবর্তী সময়ে এটি যখন চূড়ান্ত হয়ে যায় ততক্ষণে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেক্সিট প্রোগ্রামে বেরিয়ে যাচ্ছিল। এখন যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে রয়েছেন তারা প্রস্তাব দেয়। তাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখন তাদের সঙ্গে চুক্তি হবে। চুক্তির বৈশিষ্ট্য জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোন দেশের সঙ্গে আমরা প্লেন চলাচল চুক্তি করি। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে স্ট্যান্ডার্ড (মান) সেটি মেইনটেইন করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে স্ট্যান্ডার্ড বা টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন আছে, যে লাইসেন্সিং শর্তগুলো আছে, সেগুলো মেনটেইন করতে হবে। খসড়া চুক্তিতে এটিই বলা হয়েছে। বিদ্যমান যে চুক্তিগুলো আছে, সেগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমান চুক্তির আলোকে বাস্তবায়ন করব সেটাই এখানে বলা হয়েছে।

মাহবুব হোসেন আরও বলেন, বাংলাদেশ ও কসোভোর মধ্যে স্বাক্ষরের লক্ষ্যের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তির খসড়াও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এটি সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় উপস্থাপন করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App