×

জাতীয়

কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীরা মৃত্যু ঝুঁকিতে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৪১ পিএম

কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীরা মৃত্যু ঝুঁকিতে

ছবি: সংগৃহীত

দেশের কারাগারগুলোতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিঙে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, কেউ যাতে টু-শব্দও না করতে পারে সেজন্য কারাগারের ভেতরে-বাইরে চলছে বিরোধী দলের সক্রিয় নেতা-কর্মীদের নানাবিধ অমানবিক আচরণ। কারাবন্দিদের নির্যাতন করা হচ্ছে অবর্ণনীয় পৈশাচিক কায়দায়, বন্দিদের চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। অসুস্থ বন্দিকে হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে কারা হাসপাতালে ফেলে রাখা হচ্ছে। কারাগারে দমবন্ধ করা সেলে দিনরাত লকআপে রেখে গরু-ছাগলের খাবারের জন্য প্রযোজ্য অতি নিম্নমানের খাবার দিয়ে অসুস্থ বানিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এমতাবস্থায় মৃত্যুর দেশের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর দায় এড়াতে গল্প সাজিয়ে মিথ্যাচার করছে।

বিষয়টি নিয়ে হুশিয়ারি দিয়ে রিজভী বলেন, তবে জেল হেফাজতে মৃত্যুর দায় এড়াতে পারবে না শেখ হাসিনা এবং তার মাফিয়া চক্রের কারা কর্মকর্তারা। প্রতিটি মৃত্যু ও হত্যার জন্য তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

দেশের বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর সরকারের দমনপীড়নের বিষয়ে সম্প্রতি ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে রিজভী বলেন, সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী সাম্প্রতিককালে ধর-পাকড় চালিয়ে হাজার হাজার বিরোধী নেতা, কর্মী, সমর্থক দিয়ে বাংলাদেশের কারাগারগুলো ভরে ফেলেছে। কারাগারে তারা অসুস্থ হচ্ছেন এবং ধুঁকে ধুঁকে সেখানে মরছেন।

দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৪৩ হাজারের কম হলেও সেখানে দেশের গণমাধ্যমের হিসেবে প্রায় ৮৮ হাজার বন্দি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবৈধ দখলদার সরকার তাদের দখলদারিত্ব ধরে রাখার জন্য পুরো দেশকে নরকপুরিতে পরিণত করেছে। ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই। সরকারের প্রতিপক্ষদের জীবন রাষ্ট্রীয় নজরদারি বন্দুকের নলের নিচে বন্দী। দুর্বিনীত দুঃশাসনের করাল গ্রাসে দেশবাসী অজানা আশঙ্কায় আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে।

বাইরের মতো কারাগারগুলোও পরিণত হয়েছে মৃত্যু উপত্যকায়, কারাগারগুলোকে নাৎসিদের গ্যাস চেম্বারের মতো শেখ হাসিনার গ্যাস চেম্বারের পরিণত করা হয়েছে। দেশের ৬৮ টি কারাগার একেকটি টর্চার সেল। যেখানে প্রতি মূহুর্তে মৃত্যুর আতংকে থাকেন রাজনৈতিক বন্দীরা। গায়েবী মিথ্যা মামলায় সুস্থ সবল নেতাকর্মীদের ধরে নির্যাতন করে কারাগারে নিক্ষেপের পর লাশ বানিয়ে বের করা হচ্ছে। কারাগার থেকে বেরুচ্ছে লাশের সারি।

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘‘ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির নেতা-কর্মীসহ চলতি বছরে জেল হেফাজতে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে জেল হেফাজতে ৯৩ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে। যা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সর্বোচ্চ। গত বছর জেল হেফাজতে মৃত্যু হয় ৬৫ জনের। যাঁদের বেশীরভাগই বিএনপি নেতাকর্মী। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিরোধীদের বিরুদ্ধে চলমান ক্র্যাকডাউনের মধ্যে চলতি ডিসেম্বরে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর বেশিরভাগই বিএনপির নেতাকর্মী।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে যে নির্মম নির্যাতন করে তাকে অসুস্থ করা হয়েছে তারও কথা বলেন রিজভী।

‘বাজারে সিন্ডিকেটের নৈরাজ্য’

রিজভী বলেন, দেশে পেঁয়াজ-রসুন-ডাল-চালের দাম নিয়ে চলছে নৈরাজ্য, সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছেন। সরকারের কোনো বিধি-বিধান তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সরকার যদি নির্বাচিত হতো বা জনগণের ভোটের প্রয়োজন পড়তো তাহলে দলীয় ব্যবসায়ীদের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতো না।

ভারতের বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন লোকসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটির সরকার বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা ভোটারদের মনো-তুষ্টির জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে। আর শেখ হাসিনা ভোট ডাকাতির নতুন ফন্দি করতে ব্যস্ত। শেখ হাসিনা মনে করছেন, ভোটাররা গোল্লায় যাক, কিন্তু আমার সোনার হরিণ চাই। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি বানিয়ে রাখছে, এ নিয়ে তার কিছু আসে যায় না। আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড এক নিরব দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিনাতিপাত করছে দেশের কোটি কোটি মানুষ।

‘৩৬ ঘণ্টার অবরোধ সফল করুন’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, এক দফার দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এবং অবৈধ তফসিল বাতিলের প্রতিবাদে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো আগামীকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি হবে। এই কর্মসূচি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই কর্মসূচি মানুষের কথা বলা, এই কর্মসূচি মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, এই কর্মসূচি প্রতিটি ব্যক্তি ও মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য। এই কর্মসূচি এদেশের কোটি কোটি মানুষের সমর্থন রয়েছে।

এই কর্মসূচিতে বিএনপিসহ গণতন্ত্রমনা সমস্ত দল, সকল নিপীড়ন-নির্যাতিত তারা রাস্তায় এসে দাঁড়াবে, এই প্রত্যয় নিয়ে, এই দৃঢ়তা নিয়ে তারা প্রায় এক মাসের অধিক সময় ধরে কাজ করছে, আবারো তারা কাজ করবে। তাদের জেল-জুলুম-গ্রেফতার সমস্ত কিছু ধেয়ে আসবে কিন্তু সমস্ত কিছু মোকাবিলা করেই তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে অংশগ্রহণ করবেন এবং গণতন্ত্রের বিজয় তারা নিশ্চিত করবেন। একটি মাফিয়া সরকারকে জোর করে ক্ষমতা থাকা থেকে বিরত করতে সেই সরকারের পতন ঘটানোর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশের গ্রাম থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে, জনপদ থেকে জনপদে, লোকায়ের পর লোকালয়ে প্রত্যেকটি জায়গায় গণতন্ত্রকামী মানুষ তারা রাস্তায় নেমে আসবে।

প্রতিদিনের মতো গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০ জনের অধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘‘ গত ২৪ ঘণ্টায় ৫টি মামলায় ৪৩৬ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App