×

জাতীয়

১০ সংখ্যালঘুবিরোধী পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৩৮ পিএম

১০ সংখ্যালঘুবিরোধী পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন

ছবি: ভোরের কাগজ

গণতান্ত্রিক ধারাকে শক্তিশালী করতে রাজনীতি এবং নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ করা এবং নির্বাচন পূর্ববর্তী, নির্বাচনকালে ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক কৌশলের নামে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, সাম্প্রদাায়িক, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারী, জায়গা-জমি ও মন্দির দখলকারীদের নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্যেও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নির্বাচনে সহিংসতা : উত্তরণের পথ’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনার উল্লেখ করে কয়েকজন বক্তা বলেছেন, রাষ্ট্রই তাদের সংখ্যালঘু বানিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম যুক্ত হয়েছে, যা বাতিলে রাজনৈতিক কোনো উদ্যোগ নেই। সংবিধানে যতদিন রাষ্ট্রধর্ম থাকবে ততদিন ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা সংখ্যালঘুই থাকবেন। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিকের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল, সাংবাদিক-লেখক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সাংবাদিক ও কবি সোহরাব হাসান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের মহাসচিব ডা. মামুন আল মাহতাব।

আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ জন এমপি মনোনয়ন পেয়েছেন যারা সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত এমন অভিযোগ করে সভায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে আর কোনো দিনই সম্ভব হবে না রাষ্ট্রধর্ম সরানো। এখন নির্বাচনে আর সংখ্যালঘুদের ভোট প্রয়োজন হয় না মন্তব্য করে শ্যামল দত্ত বলেন, আমাদের (সংখ্যালঘু) এখানে তো এখন ভোটও লাগছে না। আমাদের গুরুত্বও তো নাই। আপনি যে ৮ দশমিক ৯ ভাগ ভোট দেবেন, সেটাও তো প্রয়োজন হচ্ছে না। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত এই সংস্কৃতির পরিবর্তন না হয়, ততক্ষণ এর সমাধান হবে না।

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ধর্মব্যবসায়ীদের সঙ্গে আপোস করে রাজনীতি ও নির্বাচনের বিরোধিতা করে বলেন, এতে বিভেদ-বিভাজন ও ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে জাতি মুক্তি পাবে না। সম্প্রতি ধর্মীয় বিদ্বেষের সঙ্গে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে ভারত বিদ্বেষও নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে। অথচ ভারত আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু, দুর্দিনের সাথী।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশকে চেনা যায় না। মুক্তিযুদ্ধের চার নীতি এখন কাগজে কলমে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বাস করছি, একথা মনে করার কোনো কারণ নেই। আগামী নির্বাচনে সংখ্যালঘুবিরোধী ও হিন্দুবিরোধী অনেকেই মনোনয়ন পেয়েছেন বলে দাবি করে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, অনেকেই মনোনয়ন পেয়েছেন অত্যন্ত স্পষ্টভাবে সংখ্যালঘুবিরোধী, হিন্দুবিরোধী, যারা দুর্নীতি করছেন, নানাভাবে লুটতরাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন। প্রতিদিনই কোনো না কোনো সহিংসতা হচ্ছে এবং নির্বাচন বা পূজার মতো বিশেষ সময়ে সেটি আরও তীব্রতর হয় বলে মন্তব্য করেন সুলতানা কামাল।

তিনি বলেন, কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা হয়, তা নয়। আমরা আসলে একটা সহিংস সমাজের মধ্যে বাস করছি। প্রতিটি মানুষ আজকে সহিংসতার শিকার। কিন্তু যার শক্তি কম, যারা প্রতিবাদ কম করতে পারে, তাদের ওপর অত্যাচার অনেক বেশি হয়। কারণ অত্যাচারী জানে, এখানে সহিংসতা করলে সে পার পেয়ে যাবে। পার পেয়ে যায় বলে সংখ্যালঘু নির্যাতন বেশি হয়। শুধু নির্বাচনের সময় না, পূজার সময় না, বছরের ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টা সবার নিরাপত্তার দাবি জানান সুলতানা কামাল।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, একটি মহল বলে যে বিএনপি আমলে সাম্প্রদায়িকতা ছিল, আওয়ামী লীগ আমলেও আছে। সুতরাং এই গ্রুপকে বাদ দিয়ে একটা কিছু করতে হবে। তাহলে বিকল্প কোথায়? এখন আমাদের মন্দের ভালো আওয়ামী লীগ। শাহরিয়ার কবিরের এ কথার জবাবে সুলতানা কামাল বলেন, মন্দের ভালো দিয়ে তো আমার কোনো লাভ হচ্ছে না। আমার মধ্য থেকে তো শঙ্কা দূর করতে পারছি না যে না, রাষ্ট্রের একজন অভিভাবক আছেন, যিনি থাকাতে আমাকে শঙ্কার মধ্যে থাকতে হচ্ছে না। মন্দের ভালো নিয়ে যদি আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয় সেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App