×

জাতীয়

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি ওয়াশিংটন দূতাবাসের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:০৪ পিএম

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি ওয়াশিংটন দূতাবাসের
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি ওয়াশিংটন দূতাবাসের
বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি বা দিকনির্দেশনা ঘোষণার পরে ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। এতে জানানো হয়েছে, শ্রম অধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বা দিকনির্দেশনা ঘোষণার আওতায় দেশটির বাণিজ্য ও ভিসা নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হতে পারে বাংলাদেশ। চিঠিটি গত ২০ নভেম্বর পাঠানো হয় বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এটি ওয়াশিংটন দূতাবাস থেকে কোনো সতর্কতা নয় বলে জানিয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেন, এটি একটি স্বাভাবিক যোগাযোগ। শ্রম অধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের বক্তব্যের বিষয়টি জানিয়ে ওয়াশিংটন দূতাবাস বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে (সাধারণ যোগাযোগ কার্য হিসেবে) এই চিঠি দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন বাণিজ্যসচিব। প্রসঙ্গত, গত ১৬ নভেম্বর ব্লিংকেন বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি বা দিকনির্দেশনা ঘোষণা করেন। সে সময় তিনি জানান, বিশ্বজুড়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, শ্রমিক অধিকারের পক্ষের কর্মী, শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যে বা যারা হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করবে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনবে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য, ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যত ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে, তা প্রয়োগ করা হবে। বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১৬ নভেম্বর প্রথমবারের মতো একটি মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেন। বিষয়টিকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে হোয়াইট হাউস। এ মেমোরেন্ডাম স্বাক্ষরের পরে সানফ্রান্সিসকোর একটি হোটেলে শ্রমিক নেতাদের সামনে এর বিস্তারিত তুলে ধরেন ব্লিংকেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের বক্তব্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় এসব শ্রমিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বিশ্বের অনেক স্থানে শ্রমিকদের এ সুযোগ দেয়া হয় না। শুধু তাই নয়, কিছু স্থানে শ্রমিকদের মানসম্পন্ন জীবনযাপনকেও অস্বীকার করা হয়, তাদের হয়রানি করা হয় এবং ক্ষতি করা হয়। এমনকি তাদের অধিকার চাইতে গেলে হত্যার শিকার হতে হয়। শ্রমিক ইউনিয়ন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, তারা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত বন্ধু। আর এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাদের রক্ষায় এগিয়ে এসেছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নয়, বিশ্বব্যাপী। এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা বাংলাদেশি গার্মেন্ট ও অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের মতো মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। এদিকে, শ্রম অধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্মারকে শ্রমিকদের অধিকার হরণ করলে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ নানা নিষেধাজ্ঞা কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে দেয়া হবে, তা গভীরভাবে পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ সরকার। সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রোডম্যাপ অনুযায়ী ৯০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। সম্প্রতি পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরি নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলেও তাতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন। রপ্তানিকারকদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কেননা, বাংলাদেশের একজন শ্রমিক অধিকারকর্মীকে উদাহরণ হিসেবে সামনে আনা হয়েছে। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাস ঢাকায় সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বব্যাপী শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি যে স্মারকটি ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশ তার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে এবং শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে এই নীতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রের ওপর আরোপের সুযোগ রয়েছে। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাসের লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, যদিও স্মারকটি একটি বৈশ্বিক নীতি, যা সব দেশের ওপর আরোপিত হতে পারে; তারপরও এটা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে বাংলাদেশ এই নীতির লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। স্মারকটির প্রকাশ অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত শ্রমমন্ত্রী বাংলাদেশের শ্রমসংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। চিঠিতে বলা হয়, স্মারক অনুসারে বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলো শ্রমসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে সরাসরি কাজ করতে পারবে। তাই এই নীতি আগ্রহী মার্কিন দূত বা মিশনগুলোকে দেশি বা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে উৎসাহিত করতে পারে। এটা মনে হচ্ছে, শ্রম অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে এমনটি তারা মনে করলে বা বিশ্বাস করলে এই নীতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আরোপ করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের দূতাবাসের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, স্মারকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় শঙ্কিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এই স্মারকে শ্রম অধিকারের বিষয়ে যা বলা হয়েছে, তার পেছনে রাজনীতি রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্নভাবে এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যবহার করতে পারে। চিঠিতে বলা হয়, সে কারণে এই স্মারক বাংলাদেশের জন্য একটি বার্তা। কারণ, শ্রম অধিকারের অজুহাতে স্মারকে উল্লেখ করা যেকোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র নিতে পারে। এই স্মারকের প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক খাতের ওপর পড়তে পারে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৯৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৫১ কোটি ডলার। এর আগে গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি ভিসা নীতি ঘোষণা করে। ওই নীতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন বলে জানানো হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App