×

জাতীয়

রাজধানীতে পুলিশ কনস্টেবল হত্যার আসামী যুবদল নেতা চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:১২ পিএম

রাজধানীতে পুলিশ কনস্টেবল হত্যার আসামী যুবদল নেতা চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার

রাজধানীতে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি' র মহাসমাবেশে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে হত্যা মামলার এজাহার নামীয় আসামি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধুরী’কে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়, ওই আসামীকে নগরীর চান্দগাঁও এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর সেখানে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে যে, মনোবল ভেঙে দেয়ার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক পুলিশের ওপর বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলা চালিয়েছেন তিনি।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধুরী এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানা, চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় সরকারী সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, বেআইনি সমাবেশ, নাশকতা, হত্যাচেষ্টাসহ সর্বমোট ০২টি মামলার তথ্য পাওয়া যায়। গ্রেপ্তারকৃত আসামি সংক্রন্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

র‌্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নির্দেশে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধুরী তার অনুসারীদের নিয়ে মহাসমাবেশ স্থলে অবস্থান নেয়। মঞ্চে অবস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল যে, পুলিশের ওপর বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলা চালিয়ে তদের মনোবল ভেঙে দিতে হবে।

উক্ত নির্দেশনা মোতাবেক কাকরাইলে উপস্থিত কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করলে, পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। কাকরাইলের সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি পার্টি অফিস সংলগ্ন ভিক্টরি হোটেলের পাশের গলি দিয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধুরী তার অনুসারীদের নিয়ে পুলিশের ওপরে হামলার উদ্দেশ্যে এগিয়ে যায় । সেই দলের একটি অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে বিজয় নগর পানির ট্যাংকির দিকে যায় এবং অপর অংশটি ছাত্রদল নেতা আমান এবং জাকির হোসেন জসিম নেতৃত্বে বক্স কালভার্ট রোডের অপর প্রান্তের দিকে অগ্রসর হয়। রোডের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছানোর পর ছাত্রদলের কর্মীরা সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপরে অতর্কিত হামলা করে।

ওই হামলার প্রেক্ষিতে পশ্চিম প্রান্তে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদেরকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে অপর প্রান্তের পুলিশ সদস্যরা পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়। পশ্চিম দিকে অগ্রসরমান পুলিশ সদস্যদের ওপর ছাত্রদল নেতা আমান, যুবদল নেতা জাকির হোসেন জসিম এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধুরী এর নেতৃত্বে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। জানমাল এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য পুলিশ সদস্যরা অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়।

এতে আরও বলা হয়, নাশকাতকারীদের বিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে যায়। এমন সময় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করতে থাকে। উপর্যপুরি আঘাতের ফলে কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং রক্তাক্ত অবস্থায় তার নিথর দেহটি রাস্তায় পড়ে থাকে। পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজের মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। বিক্ষোভকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কনস্টেবল পারভেজের নিথর দেহের ওপর বর্বরভাবে আঘাত করতে থাকে। আঘাতের একপর্যায়ে কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের মৃত্যু নিশ্চিত করে ছাত্রদল নেতা আমান, যুবদল নেতা জাকির হোসেন জসিম এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধুরী তাদের অনুসারীদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৬৭ জনকে নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলানং-৫৪, তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ধারা-১৪৭/১৪৮/১৪৯/১৮৬/ ৩২৩/৩৩৩/৩০২/৩৫৩/৪২৭/১০৯/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০।

র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরদারীর এক পর্যায়ে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গত ২৭ নভেম্বর আনুমানিক পৌনে একটায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সূত্রে বর্ণিত মামলার ১৬৩ নং এজাহার নামীয় আসামি মুরাদ চৌধুরী (৩৮) (সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদল), পিতা- মোহাম্মদ আলী, সাং- পূর্ব সরফভাটা, থানা-দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া, জেলা- চট্টগ্রাম’কে কে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App