×

জাতীয়

নির্বাচনের তফসিলে কী থাকে ও এসব সিদ্ধান্ত কারা নেয়?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৩৮ এএম

নির্বাচনের তফসিলে কী থাকে ও এসব সিদ্ধান্ত কারা নেয়?

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে একাদশ সংসদের মেয়াদ ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী এইসময়ের মধ্যে বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আর এজন্য পরবর্তী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। তফসিলের মাধ্যমে জানা যাবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠিক কবে অনুষ্ঠিত হবে। রেওয়াজ অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট গ্রহণের দিনের মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের পার্থক্য থাকে। বুধবার তফসিল ঘোষণা করা হলে আর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হলে প্রায় ৫০ দিনের পার্থক্য থাকবে। এরমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু তফসিল মানে শুধুই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নয়। নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত খুঁটিনাটি আরো অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত জড়িত থাকে এই তফসিলের সঙ্গে। কী সেগুলো? নির্বাচনের তফসিলে কী থাকে? নির্বাচন আয়োজন করার জন্য যেসব কাজকর্ম জড়িত রয়েছে তার সবকিছুর জন্যে একটি সময় বেঁধে দেয়া হয় তফসিলে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, খুব সহজ ভাষায় এটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখের একটি আইনি ঘোষণা।যেমন: প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতার মনোনয়নের কাগজ কত তারিখ জমা দেয়া শুরু করতে পারবেন সেটি ঘোষণা করা হয়।মনোনয়নের কাগজ নির্বাচন কমিশন কতদিনের মধ্যে বাছাই করবে, বাছাই প্রক্রিয়ায় যদি সেটি বাতিল হয়ে যায়, তাহলে প্রার্থিতা প্রত্যাশী ব্যক্তি কতদিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবে তার সময় বেঁধে দেয় কমিশন। যারা প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাবেন তাদের তালিকা কবে নাগাদ ছাপানো হবে, নির্বাচনী প্রচারণা কবে থেকে শুরু করা যাবে আর কতদিন পর্যন্ত তা চালানো যাবে-সেটির উল্লেখ থাকে। সাধারণত প্রার্থীর নির্বাচনী প্রতীক ঘোষণার সাথে প্রচারণা শুরুর তারিখ সম্পর্কিত থাকে। নির্বাচন কত তারিখ হবে, কোন সময়ে শুরু হবে আর কোন সময় পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে তার বিস্তারিত এবং ভোটের পর ভোট গণনা কিভাবে এবং কোথায় হবে তারও পরিষ্কার উল্লেখ থাকে। এই পুরো বিষয়টির সমষ্টিকেই নির্বাচনের তফসিল বলা হয়। এসব সিদ্ধান্ত কারা নেয়? কিছু বিষয় সংবিধানে একদম নিশ্চিত করে বলা আছে। তাই সেগুলো নিয়ে আদৌ কোন সিদ্ধান্ত নেয়ারই দরকার হয়না। যেমন: সংবিধানে বলা আছে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। অর্থ্যাৎ ২৮শে জানুয়ারি সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কিন্তু এই ৯০ দিনের মধ্যে কবে নির্বাচনের তারিখ সেটি ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। কমিশনারদের মধ্যে সেটি নিয়ে এবং নির্বাচনের তফসিলের অন্যান্য সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তারপর বেশিরভাগ কমিশনার যে সিদ্ধান্ত দেয় সেটি গৃহীত হওয়ার কথা। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর কি বদল করা যায়? নির্বাচন কমিশন চাইলে সংসদ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ঐ ৯০ দিনের মধ্যে দেয়া নির্বাচনের তারিখ বদলাতে পারে। যদি সেটি দরকার হয় তাহলে নির্বাচন কমিশনের সেই এখতিয়ার রয়েছে। সেক্ষেত্রে তফসিল সংশোধন করে দেয়া যায়। এরসঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য তারিখগুলো পরিবর্তন করে দিতে পারে কমিশন। ডঃ এম সাখাওয়াত হোসেন একটি নমুনা দিয়ে বলছিলেন, ২০০৮ সালে ডঃ এটিএম শামসুল হুদার নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ নির্বাচনের তারিখ দিয়েছিলো। কিন্তু বিএনপি তখনো নির্বাচনে আসবে কিনা সেনিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছিল। এরপর বিএনপির সাথে আলোচনার পর তাদের দাবির ভিত্তিতে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে ২৯ ডিসেম্বর করা হয়েছিলো। সেসময় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংলাপের মাধ্যমে সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী তফসীল ঘোষণা না করার অনুরোধ জানিয়েছিল। ২০০৬ সালে একবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক সংকটের মুখে নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছিলো। কিন্তু নির্বাচনের তারিখটি রয়ে গিয়েছিলো। সেই তারিখ পরে বাতিল করেছিলো আদালত। অন্য দেশেও কি একইভাবে তফসিল দেয়া হয়? সাধারণত বাংলাদেশের তফসিলে যেসব কার্যক্রম দেয়া থাকে তা করার জন্য সবমিলিয়ে পুরো সময়কাল ৪৫ দিন হয়ে থাকে। সেটাই সাধারণত বাংলাদেশের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটেনে তফসিলের সময়কাল হল সব মিলিয়ে ১৭ দিন। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ১৭ দিনের মধ্যে সেখানে নির্বাচন সহ তার আগের সবকিছু শেষ করতে হবে। সেখানে আইন করে স্থায়ী একটি তফসিল তৈরি করাই রয়েছে। আর সেখানে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজন করে না। সেটি করে থাকে স্থানীয় কাউন্সিল। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, বিলুপ্ত হওয়া লোকসভা বা বিধানসভার সর্বশেষ অধিবেশন থেকে নতুন সরকার গঠনের মধ্যে সময়সীমা ছয় মাসের বেশি হতে পারবে না। এই সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পরবর্তী আট দিনের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হয়। এরপর বাছাইয়ের জন্য একদিন বরাদ্দ থাকে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য দুইদিন বরাদ্দ থাকে। এরপরে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়।নির্বাচনী প্রচারণার জন্য সাধারণত দুই সপ্তাহ সময়সীমা দেয়া হয়ে থাকে। তবে নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচারণা বন্ধ করতে হয়।পাকিস্তানে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা, বাছাই, প্রচারণায় সবমিলিয়ে ৫৪ দিনের মতো সময় পাওয়া যায়। ভারতের মতো এখানেও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর বাছাই, প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার পর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়। পাকিস্তানের নিয়ম অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর অন্তত ২২দিন পরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App