×

জাতীয়

তফসিল ঘোষণা ঘিরে সারাদেশে বাড়তি নিরাপত্তা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:১২ এএম

তফসিল ঘোষণা ঘিরে সারাদেশে বাড়তি নিরাপত্তা

ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও সমমনারা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে- এমন গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে। পুলিশের কাছেও এমন খবর রয়েছে। রাজধানীকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ছাড়াও নির্বাচন কমিশন ও সচিবালয় ঘেরাও এবং অবস্থান কর্মসূচির আড়ালে চোরাগুপ্তা হামলা বাড়তে পারে; এমন আশঙ্কা থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়তি নিরাপত্তার পরিকল্পনা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের সবকটি ইউনিট এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে। মাঠে তৎপর র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা।

পুলিশ হেডকোয়র্টার্স, মেট্রোপলিটন কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপাররা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। দেয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। এরই মধ্যে বিভিন্ন মামলার আসামিদের ধরতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পাশাপাশি যে কোনো ধরনের অরাজকতা ও নাশকতা ঠেকাতে আওয়ামী লীগ তার অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে সতর্কতার সঙ্গে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তারা সভা-সমাবেশ করে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করছে।

নিরাপত্তা প্রস্তুতি প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, তফসিল ঘিরে অবশ্যই নিরাপত্তা পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা দেখেছি ইতোপূর্বে অনেক আন্দোলন-হরতালের নামে সহিংসতা করা হয়েছে। যে ধরনের সমস্যাই আসুক, যে আন্দোলনই আসুক এসব মোকাবিলা করার সক্ষমতা পুলিশের রয়েছে।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (অপারেশন্স) আনোয়ার হোসেন গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ভোরের কাগজকে বলেছেন, তফসিল ঘোষণা ও পরবর্তী সময় নিয়ে বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে। সারাদেশে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হবে। পুলিশ পেট্রলিং বাড়ানো হবে। সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে মাঠে থাকবে পুলিশ। এরপরও যদি কেউ নাশকতার চেষ্টা চালায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তফসিল ঘোষণা হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে- এমন কোনো আশঙ্কা করছেন না তারা। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, যে কোনো বড় কর্মসূচি থাকলেই ডিএমপি বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্রও করে অবশ্যই নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। কারণ একটি মহল আছে- যারা নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে চায়- তাদের প্রতিহত করতে পুলিশ বিশেষ কৌশলে দায়িত্ব পালন করবে। কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করলে তাকে তাৎক্ষণিক আইনের আওতায় আনা হবে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কোনো কুচক্রী মহল নাশকতার চেষ্টা করছে কিনা- তা শনাক্ত করতে আমাদের গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছে। পাশাপাশি তফসিল ঘোষণার আশপাশ এলাকায় আমাদের বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। সারাদেশেই বিশেষ টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। জোরদার রয়েছে সাইবার পেট্রলিংও। তিনি জানান, কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার বা হুমকি দিলেও তা চিহ্নিত করবে র‌্যাবের সাইবার ইউনিট।

জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর ভোটের ক্ষণগণনা শুরু হবে। মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রচার প্রচারণা শুরু হবে। এর মধ্যে যারা নির্বাচন বর্জন করবে তারা নানারকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে হার্ডলাইনে যাবে। সবকটি সংস্থা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে অভিযানে নামবে। বিশেষ করে রাস্তায় নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কৌশলে চলবে অভিযান। মামলায় পরোয়ানাভুক্তদের ধরতে চিরুনি অভিযান চলবে।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ও এর আশপাশে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সামনে চারটি দলে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ভবনে ঢুকতে ফটকের সামনে পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা বসানো হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপরই পুলিশের গাড়ি নির্বাচন কমিশনের সামনে দিয়ে টহল দিচ্ছে।

অপরদিকে, নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তফসিল ঘোষণার পর কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় সেজন্য সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে কোনো প্রকার গুজব ছড়িয়ে কোনো পক্ষ যেন জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যাপারে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কঠোর সর্তকতার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গত রবিবার অনুষ্ঠিত এক ভিডিও কনফারেন্সে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এক গুচ্ছ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও প্রশাসন অনু বিভাগ) মো. আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে ৬৪ জেলার ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করবেন ইউএনও।

পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জানান, এবারের নির্বাচন বিএনপি-জামায়াতের জন্য অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। তারা মরণ কামড় দেবে। রাস্তায় জ্বালাও-পোড়াও ছাড়াও ভোটকেন্দ্র টার্গেট করে নাশকতা চালাতে পারে। এ সবকিছু মাথায় রেখে নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা পরিকল্পনায় প্রয়োজন বিবেচনায় পরিবর্তন আনা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App