×

জাতীয়

তামাক মুক্ত দেশ গড়তে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:৫২ পিএম

তামাক মুক্ত দেশ গড়তে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার

ছবি: ভোরের কাগজ

আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে এখনো তামাক আইন ও তার প্রয়োগিক দিকের বাস্তবায়ন সেভাবে হয়নি। তামাক আইন সম্পর্কে বেশিরভাগ লোকই জানে না। আইন প্রয়োগের বিষয়ে উদাসীনতা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তামাক মুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে সচেতনতা তৈরিসহ রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবতা’ শীর্ষ এক আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। আলোচনা অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এবং মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা মানস।

আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আজ দেশের মধ্যে ইয়াবা আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও এর থাবায় আক্রান্ত হচ্ছে। ধূমপানের সাথে সকল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই আইনের প্রয়োগ করতে হবে। এজন্য আমাদের আরও সচেতনতা প্রয়োজন। অফিস বা অন্য কোথাও খোলা স্থানে ধূমপানের পরিবর্তে একটি নিদিষ্ট জোন করতে হবে, যেখানে তারা ধূমপান করবে। এর বাইরে কোথাও করা যাবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, তামাক বিরোধী আইন আছে আবার নেই। আইনে আছে শিশুদের কাছে তামাক বিক্রি করা যাবে না...কিন্তু বিক্রি হচ্ছে। আইনে বলা আছে প্রকাশ্যে পাবলিক প্লেসে ধূমপান করা যাবে না কিন্তু করা হচ্ছে। এর কারণ হলো আইন আছে কিন্তু এর প্রয়োগ নেই। আমাদের এই দ্বৈত আচারণ বন্ধ করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে হবে, এটার জন্য সামাজিক আন্দোলন দরকার।

তিনি আরো বলেন, উন্নত দেশে তামাক খাওয়া বন্ধ করেছে, উৎপাদনও নেই। তবে উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশের উৎপাদন ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। আমরা তামাকের বিরুদ্ধে কথা বলছি আবার তামাক উৎপাদনকারীকে সংবর্ধনা দিচ্ছি। এভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। আমি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর অনেক তামাক কোম্পানি এসেছেন স্পন্সর নিয়ে আমি নেইনি। তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গিকার দরকার, সামাজিক আন্দোলন দরকার।

এ সময় শ্যামল দত্ত বলেন, ভোরের কাগজ ৩২ বছরের একটি পুরোনো পত্রিকা। আমারা শুরু থেকেই কখনো মাদকের বিজ্ঞাপন ছাপিনি। আগে এখনকার মতো এত নিয়ম না থাকলেও আমাদের কমিটমেন্ট ছিল। দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা এ কাজটি করিনি। তো সমাজের সব অংশীজনকেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, ১৮ বছরের নীচে কারো কাছে তামাকজাত পণ্য বিক্রি করা যাবে না এটা আমরা কতোজন জানি। অনেকেই জানি না। আইন প্রয়োহ করবে যারা তাদেরও অনেকে জানেন না। আমাদের এসব বিষয়ে আরও সচেতন করতে হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক নির্মুলের যে কমিটমেন্ট সেটা আর মাত্র ১৭ বছর সময় আছে। আমাদের এখনই রাষ্ট্র ও প্রশাসনের দিক থেকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মানসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর দেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাকজাত পণ্য ব্যবহরা করে থাকেন। গণপরিবহনসহ জনসমাগম স্থলে প্রায় ৮ কোটি মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে থাকেন। পরোক্ষ ও পত্যক্ষ কারনে দেশের প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্য হচ্ছে তামাকজাত পণ্যের কারনে। বছরের ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে চিকিৎসার জন্য।

তিনি আরো বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ প্রণয়ন করে সরকার, এর ফলে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৮ শতাংশ ব্যবহার কমে আসে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহার নির্মূলে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।

উম্মে জান্নাতের পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর কনসালটেন্ট মো. ফাহিমুল ইসলাম ও হেড অব প্রোগ্রামস মো. শফিকুল ইসলামসহ প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App