×

জাতীয়

যা ঘটেছে ২৮ অক্টোবর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১১:০৬ পিএম

সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের ঘোষণা করে বিএনপি। সমাবেশকে ঘিরে ২৭ অকো্টবর রাত থেকেই নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকে বিএনপি নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে আইনশৃংখলাবাহিনী। এরপর শনিবার (২৮ অক্টোবর) ভোরের আলো ফোটার আগেই মহাসমাবেশে যোগ দিতে নয়াপল্টন, কাকরাইল ও বিজয়নগর এলাকায় অবস্থান নিতে থাকে দলের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা সরকার বিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে উত্তপ্ত করে তোলে পুরো এলাকা। অন্যদিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয় জামায়াতে ইসলামীও। পুলিশের অনুমতি না থাকলেও ভোর থেকেই রাজধানীর আরামবাগের নটরডেম কলেজের সামনের সড়কটি দখলে নেয় জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা। দুপুরের দিকে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে উত্তেজিত জামায়াত কর্মীরা শাপলা চত্ত্বরের দিকে দৌড়ে যেতে থাকে। কিন্তু একপর্যায়ে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এরপর তারা আরামবাগেই মহাসমাবেশ করে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন জামায়াত শিবির কোনো বিশৃঙ্খলা করেনি। দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগরে বিএনপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে রাজধানীর কাকরাইল জামে মসজিদ এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানেগ্যাস ছুড়ে। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কাকরাইলে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়লে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন বিএনপির নেতাকর্মীরা কাকরাইল মসজিদের সামনের পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। এরপর বিকাল ৩টার দিকে মহসামবেশ পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়ে আধা ঘণ্টায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের পুরো এলাকা ফাঁকা করে দেয়। সংঘর্ষের পর ওই এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সংঘর্ষ চলাকালে ডিউটিরত অবস্থায় পারভেজ নামে পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। নিহত পুলিশ সদস্যের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে। এছাড়া সংঘর্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যমের বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মীও আহত হয়েছেন। বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের ৪১ সদস্য আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যরা রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিকেলে রাজধানীর মৌচাক এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশ বক্স ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশের গাড়ি এগিয়ে আসলে সেটিকেও তারা ধাওয়া করে ও ভাংচুর চালায়। এর ভিডিও ধারণ করতে গেলে ভোরের কাগজ ডিজিটালের ক্যামেরাপার্সন আরিফুল ইসলাম পনির উপর অতর্কিত হামলা চালায় ও ক্যামেরা ভাংচুর তারা। পরে মৌচাক ফ্লাইওভারের উপর একটি বাস ও কমলাপুরে বিআরটিসি বাসে আগুন দেওয়া হয়। বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে তিনটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারে বলাকা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। একই সময়ে কমলাপুরে বিআরটিসির একটি বাসেও আগুন দেয়া হয়। অন্যদিকে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে কাকরাইল মোড়ে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। হামলা থেকে বাদ যায়নি রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালও। সেখানেও ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করে সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা। এদিকে নরসিংদীর রেলস্টেশন থেকে রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান খোকনসহ বিএনপির ৬০ জন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে সমাবেশ থেকে রবিবার (২৯ অক্টোবর) সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি ও ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। তবে বাস মালিক সমিতি জানিয়েছে, হরতাল হলেও রবিবার বাস চলবে। সংগঠনের মহাস‌চিব খন্দকার এনা‌য়েত উল‌্যাহের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, জন‌বি‌রোধী এ হরতালে মালিক-শ্রমিকরা কখ‌নো সাড়া দে‌বে না, এটি প্রত্যাখ্যান ক‌রে‌ছে তারা। তাই হরতাল উপেক্ষা করে রবিবার রাজধানীর অভ্যন্তরীণ সড়কে বাস চল‌বে। যাত্রী পাওয়া সাপেক্ষে চল‌বে দূরপাল্লার বাস। একই সঙ্গে বিএন‌পির হরতাল চলাকালে গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে সড়কে নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে মালিক সমিতি। এদিকে আওয়ামী লীগও রবিবার সারাদেশে শান্তি সমাবেশের ডাক দেয়।    

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App