×

জাতীয়

ডলারের দাম নির্ধারণে বিদ্যমান মডেল বদলাতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:২৬ পিএম

ডলারের দাম পরিবর্তনে এবিবি এবং বাফেদা ভিত্তিক সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। আর্থিক সংকট নিরসনে ডলার বাজার স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা খুবই জরুরী। এজন্য বিদেশি এই মুদ্রার দাম বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া শ্রেয়। কিন্তু কিছুদিন পর পর অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত বাজারকে আর অস্থির করছে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা শাখার সাবেক এই প্রধান।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ড. জাহিদ হোসেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা জানান বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা শাখার সাবেক প্রধান।

তিনি বলেন, চলমান আর্থিক সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত করা হয়। পরে আমরাও কিছু পরামর্শ দেই। আমরা সবাই জানি চ্যালেঞ্জগুলো কি কি। ঋণের সুদের হার, ডলার মার্কেটে অস্থিরতা এবং ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ এখন সবচেয়ে বড় বোঝা। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ভবিষ্যতে আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী নীতির আরও পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানান তিনি।

জাহিদ হোসেন আরো বলেন, ইতিমধ্যেই ঋণের সুদের হার স্বাভাবিক করার জন্য স্মার্ট পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ঋণের হার পদ্ধতি আরও সহজ করার পরামর্শ দিয়েছি আমরা। ডলার বাজার স্বাভাবিক করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। দুর্দশাগ্রস্থ ঋণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খেলাপিঋণ ছাড়াও যে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণগুলো ছিল সেগুলো ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু সেগুলো নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইন বাস্তবায়ন করাটা খুব জরুরী।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ অক্টোবর গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে সংস্থাটি জানায় ডলার সংকট নিরসনে সম্প্রতি নেওয়া ২ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রণোদনার সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে কাজে আসবে না। ডলার রেট পুরোপুরি বাজারের উপর ছেড়ে দিতে হবে।

সানেম জানায়, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে। ইতিমধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদ হারে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। তবে এটা বাজারভিত্তিক না করলে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না। এছাড়া আন্ডার ইনভারএসিং এবং ও ওভার ইনভয়েজিং নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরী।

সাইমা হক বিদিশা বলেন, 'মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি এবং রাজস্ব নীতি পরিবর্তন ছাড়াও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ আমাদের দেশে মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরীর মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এই জায়গাগুলোতে আলাদাভাবে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।'

তিনি আরো বলেন, 'সম্প্রতি ব্যাংকের পক্ষ থেকে রেমিটেন্স কেনার ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে এটা কাজে আসবে না। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত ডলারের অফিশিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল রেটে পার্থক্য থাকবে ততক্ষণ রেমিটাররা অবৈধ পথেই ডলার পাঠাবেন। এছাড়াও একটা শ্রেণি রয়েছে যারা হুন্ডির মাধ্যমে ব্যবসা করে। এই চ্যানেলটা বন্ধ করার জন্য শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ততক্ষণ ফরেন কারেন্সিতে একটা আশঙ্কা থেকেই যাবে। এছাড়াও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ সহ আর্থিক খাতের সুশাসন ফেরাতে না পারলে নীতি পরিবর্তনের সুফল যথাযথভাবে আমরা পাবো না।'

এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে একই বিষয়ে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেদিন নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। কেননা এ ধরণের প্রবণতা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে।

গণমাধ্যমকে তিনি আরও জানান, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে পণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে বাজারে লাগাম টানার আগে ‘মূল্য প্রত্যাশা’র লাগাম টানার পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি প্রবৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও বলেছি।’ এ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও তাতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে জানান এ অর্থনীতিবিদ। ‘পণ্যের দাম বাড়বে-এমন প্রত্যাশা যখন স্থায়ী হয়, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পণ্যমূল্য বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে পণ্যের দাম বেঁধে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বরং মূল্য প্রত্যাশা কমাতে সমন্বিত ও বিশ্বাসযোগ্য নীতি গ্রহণ এবং তার মাধ্যমে বাজারে সংকেত দিতে হয়। এ ছাড়া দৃশ্যত যেখানে একচেটিয়া ব্যবসা গড়ে ওঠে, সেখানে তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর কথা বলেছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমে সহায়ক হতে পারে বিবেচনায় অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন গভর্নর। তিনি বর্তমান মুদ্রানীতির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেওয়ার জন্য গভর্নরকে পরামর্শ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে অন্যান্য অর্থনীতিবিদ, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, বিভিন্ন চেম্বার অব কমার্স এবং অর্থনৈতিক খাতের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা পর্যায়ক্রমে চলতে থাকবে।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App