×

জাতীয়

সতর্ক সরকার, প্রস্তুত দল : ডেডলাইন ২৮ অক্টোবর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৪৯ এএম

সতর্ক সরকার, প্রস্তুত দল : ডেডলাইন ২৮ অক্টোবর

ফাইল ছবি

বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ও ‘মহাযাত্রা’র হুমকিকে নিছক ফাঁকা আওয়াজ হিসেবে দেখছে না আওয়ামী লীগ। প্রতিপক্ষের সম্ভাব্য প্রতিটি কৌশলের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। তবে বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জনগণ যেন আতঙ্কিত না হন, সেজন্য অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সতর্ক আওয়ামী লীগ। সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে রাজপথে রয়েছে দলটি। এছাড়া ‘তৃতীয়’ কোনো শক্তি যেন কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না আসতে পারে, সেদিকে বিশেষ নজর রয়েছে সরকার ও দলের। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে; ততই সরকার পতনের এক দফা দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে মাঠ গরমের চেষ্টা করছে বিএনপি। অন্যদিকে সমান তালে মাঠে থেকে বিরোধীদের অপরাজনীতির জবাব দিয়ে ভোটের পথে হাঁটছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এমন অবস্থার মধ্যেই বিএনপির আল্টিমেটাম ‘২৮ অক্টোবর’; সেদিন মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতন আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’ শুরুর কথা বলছে দলটি। তারপর থেকেই রাজনীতিতে নতুন করে ছড়াচ্ছে উত্তাপ। রাজধানী দখলে রাখতে একইদিন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও। আবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকেও রাখা হয়েছে সতর্ক অবস্থান। এসবের মধ্যে আবার ২৮ অক্টোবর সামনে রেখে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ, তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো। এমন পরিস্থিতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থানের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রবিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে এই ষড়যন্ত্র চলছে- বিষয়টি এমন নয়; তৃতীয় কোনো শক্তিকে ক্ষমতায় এনে দেশকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে। এখন আমাদের দেশেও যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে, দেশটা ধ্বংস করে দেবে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ক্ষমতায় থাকার লোভে দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০০৬ সালে বিএনপির ব্যর্থতার সুযোগে যেভাবে ওয়ান-ইলেভেনের জন্ম হয়েছিল, আগামী নির্বাচনকে ঘিরে আবারো পুরনো ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে একটি মহল। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করে এ দেশ থেকে চলে গেছে। কিন্তু তাদের এ দেশীয় দোসররা রয়ে গেছে। এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা সতর্ক থাকতে পারিনি। তাই পঁচাত্তরের পনের আগস্ট বঙ্গবন্ধুর

নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এরপর থেকেই ষড়যন্ত্র চলছে। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার জন্য বারবার ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, বিএনপির ভোট কারচুপির কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্ম; আবার বিএনপির ব্যর্থতার কারণেই ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি এবং পরে আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলোপ। আগামী নির্বাচন নিয়েও যে ষড়যন্ত্রকারীরা এমন ষড়যন্ত্র করবে না, তা তো নয়। এজন্য শুধু সরকার বা সরকারি দলকেই নয়, সাধারণ জনগণকেও সতর্ক থাকতে হবে।

এদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির ‘সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সবস্তরের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপির ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আগামী ২৮ অক্টোবর তথাকথিত সমাবেশের নামে জনমনে ভীতি সঞ্চার করছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শান্তিকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সতর্ক অবস্থান নেবে। মন্ত্রী বলেন, বিএনপি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ব্যাহত এবং অনির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার পথ সৃষ্টি করছে। নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। উসকানি দিয়ে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে রাজপথে আ.লীগ : জেলা ও উপজেলা থেকে দলের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসার ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়তে পারেন- এমন আশঙ্কায় সমাবেশের আগেই ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলটির নেতাকর্মীরা বাধাহীনভাবে কীভাবে ঢাকায় আসতে পারেন ও গ্রেপ্তার এড়িয়ে কীভাবে থাকতে পারবেন, সে বিষয়েও নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।

হেফাজতে ইসলামের মতো বিএনপি রাস্তায় বসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা সরকারি দলের। যদিও বিএনপি বলেছে, তাদের নেতাকর্মীদের ঢাকায় এসে বসে পড়তে বলা হয়নি। তবে বিএনপির ‘অরাজকতা’ ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও শক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। রবিবার রাতে সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করলে কোনো বাধা দেয়া হবে না। তারা আন্দোলন করতে চায়, করবে। কোনো সমস্যা নেই। আমরা বাধা দেবো না। তবে, অগ্নিসন্ত্রাস, ভাঙচুর করলে ছাড় দেয়া হবে না।

২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে বিএনপি নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে- এমন আশঙ্কা আওয়ামী লীগ নেতাদের। এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তারা বলেছেন, ধৈর্য ধরে আছি বলে তারা দুর্বল ভাবছে। আমরা কিন্তু ঘুরে দাঁড়ালে তারা রাস্তায় দাঁড়াতে পারবে না। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের কাগজকে বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকা শহর থাকবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের দখলে। সমাবেশে ১০ লাখ লোকের সমাগমের মাধ্যমে বিএনপির কবর রচনা করা হবে। রাজধানী ঢাকায় সারা বাংলাদেশ থেকে যে সন্ত্রাসীদের ঢুকিয়েছে বিএনপি, ঢাকাবাসীর শান্তির শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ওই সব সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করা হবে।

এদিকে বিএনপিকে মোকাবিলায় ‘বড়’ প্রস্তুতি নিলেও আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, বিএনপির আল্টিমেটামের কোনো বাস্তব প্রতিফলন নেই। তারা একের পর এক আল্টিমেটাম দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু জনসমর্থন পাচ্ছে না। জনগণ তাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। তারা বিএনপির উদ্দেশে ষড়যন্ত্র পরিহার করে সাংবিধানিক পথে আসার আহ্বানও জানাচ্ছেন।

দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপি চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অশুভ রাজনৈতিক দল। এদের বিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জনগণের নিরাপত্তায় সরকার রয়েছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী রয়েছে। সরকারি দল হিসেবে আমরা রাজপথে থাকব। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করব।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, ২৮ অক্টোবর ঘিরে পুরো প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের তিনটি সভা হয়েছে। আমাদের কর্মসূচি সফল করতে মহানগর, সংসদীয় আসনের জনপ্রতিনিধি, থানা, ওয়ার্ড, ইউনিটের নেতা ও কাউন্সিলরদের নিয়েও বসছি। মহানগরে কেউ টুঁ শব্দটিও করতে পারবে না। আর কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করলে পাড়ায়-মহল্লায় আমাদের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে।

সতর্ক থাকতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশ : এদিকে আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে কারণে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে- সে ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, বিএনপির সমাবেশে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, জনগনের দুর্ভোগ না হয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে- এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) মো. আনোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, আপাতত কোনো আশঙ্কা আমরা দেখছি না। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। আশা করি, দুই দলই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শেষে ঘরে ফিরে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App