×

জাতীয়

দেবী আজ ফিরবেন কৈলাসে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৪২ এএম

দেবী আজ ফিরবেন কৈলাসে

ছবি: সংগৃহীত

অশুভ শক্তির বিনাশ করতে ভক্তের আবাহনে কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে এসেছিলেন দেবী দুর্গা। এ উপলক্ষে আনন্দ-আয়োজনে মেতে ছিল ভক্তরা। দেখতে দেখতে সেই সময় ফুরালো। সময় হলো দেবীর কৈলাসে ফিরে যাওয়ার। চারদিকে আনন্দ আর শান্তি বিলিয়ে দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে দেবী ফিরে যাবেন। আরতিতে ধূপের ধোঁয়ায় দেবীর মুখটা সে কারণেই যেন আবছা লাগছিল ভক্তদের কাছে। ঢাকঢোলের বাদ্যি, কাঁসর ঘণ্টায়ও যেন ছিল বিদায়ের সুর। সব আয়োজনেই যেন ছিল বিষাদের ছায়া।

সোমবার শারদীয় দুর্গোৎসবের নবমীর দিন হোমাগ্নিতে করা হয় দেবীর স্তুতি। প্রথা মেনে কোনো কোনো মন্দিরে হয়েছে নবমীর বিশেষ পূজা। কোথাও হোম, কোথাও হয়েছে ফল বলি। পূজা শুরুর সময় যেমন সংকল্প, তেমনই পূজা শেষের প্রক্রিয়া দক্ষিণান্ত। নানা উপাচারে দেবীর আরাধনা।

শাস্ত্রে আছে, নবমী তিথিতে রাবণ বধের পর শ্রীরামচন্দ্র এই পূজা করেছিলেন। নীলকণ্ঠ ফুল, যজ্ঞের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় নবমী বিহিত পূজা। নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদ লাভ হয়। শাস্ত্র

অনুযায়ী, মহানবমী বা দুর্গা নবমী হলো আসুরিক শক্তি বধে বিজয়ের দিন। শ্রী চণ্ডী থেকে জানা যায়, দুর্গা রুদ্ররূপ (মা কালী) ধারণ করে মহিষাসুর এবং তার ৩ যোদ্ধা চণ্ড, মুণ্ডা এবং রক্তবিজকে হত্যা করেন। নবমী তিথি শুরুই হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। সন্ধিপূজা হয় অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর সূচনার প্রথম ২৪ মিনিট জুড়ে। নবমীর বিশেষত্ব হচ্ছে হোমযজ্ঞ।

শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে গতকাল দশভুজা দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা শুরুর পর ভক্তরা প্রার্থনা করতে থাকেন দেবীর উদ্দেশে। নীল অপরাজিতা ফুল নবমী পূজার বিশেষ অনুষঙ্গ। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেয়া হয়। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়। পূজা শেষে যথারীতি অঞ্জলি। প্রতিটি মণ্ডপেই কয়েক দফা করে পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হয়। এরপরই ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয় প্রসাদ। নবরাত্রির নবমীতে দুর্গার ৯টি রূপ হিসেবে মেয়েদের পূজা করে খাওয়ানোর রীতিও রয়েছে।

সোমবার শেষবারের মতো দেবীকে প্রাণ ভরে দেখায় বাগড়া হয়ে দাঁড়িয়েছিল বৃষ্টি। দুপুর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই অনেকে গেছেন প্রতিমা দর্শনে। সকালে পূজানুষ্ঠান, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ যেমন ছিল তেমনি প্রায় সব মণ্ডপেই ছিল কীর্তন-ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান। সন্ধ্যায় মণ্ডপে মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছে আরতি প্রতিযোগিতা। ঢাকের তালে ধুনচি। শঙ্খধ্বনির প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনেক মন্দির-মণ্ডপে স্বেচ্ছায় রক্তদান, বস্ত্রবিতরণও করা হয়েছে।

আজ বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসব। আজ সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে দশমী পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন করা হবে। এরপর ঢাকা শহরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ হতে প্রতিমা নিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হলে বিকাল ৪টায় ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে বের হবে শোভাযাত্রা। পরে নগরীর ওয়াইজঘাট, তুরাগ, ডেমরা, পোস্তগোলা ঘাটে বিসর্জন করা হবে প্রতিমা। প্রতিমা বিসর্জনের পরও অনেক মণ্ডপে আরতি হবে। হবে উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনির প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ, ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান। মঞ্চস্থ হবে নাটক।

সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় সপরিবারে দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) এসেছিলেন ঘোড়ায় চড়ে। ফিরবেনও ঘোড়ায় চড়ে। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে, দেবীর ঘোড়ায় আগমন ও গমন অশুভ ইঙ্গিত দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইঙ্গিত করে। সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে এসবই অনুমান ভিত্তিক। দেবী নিজেই প্রকৃতির স্বরূপ। তাই দেবী কীভাবে ধরাধামে আসবেন, বা কীভাবে গমন করবেন, তা শুধু তিনি স্বয়ং জানেন। আসা-যাওয়ার লক্ষণ শুভ না হলেও ভক্তের বিশ্বাস, দেবী মঙ্গলময়ী। তিনি জগতের মঙ্গলই করবেন। সন্তানদের আশীষ দেবেন দু’হাত ভরে। বিজয়া দশমী উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা স¤প্রচার করছে। তাছাড়া জাতীয় দৈনিকগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App