×

জাতীয়

ঢাকা জেলার ৫ আসনে লড়াই হবে প্রার্থী বিবেচনায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০১:৩১ এএম

ঢাকা জেলার ৫ আসনে লড়াই হবে প্রার্থী বিবেচনায়

ফাইল ছবি

ঢাকা জেলার ৫ আসনে লড়াই হবে প্রার্থী বিবেচনায়
ঢাকা জেলার ৫ আসনে লড়াই হবে প্রার্থী বিবেচনায়
ঢাকা জেলার ৫ আসনে লড়াই হবে প্রার্থী বিবেচনায়

রাজনীতির সব রকম হিসাব-নিকাশে রাজধানীর পাশে ঢাকা জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবকটি রাজনৈতিক দল আসনগুলো অধিক গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চায় আসনগুলো ধরে রাখতে। এমনিতে ঢাকা জেলার আসনগুলো বিএনপির দখলে থাকলেও ২০০৮ সাল থেকে জয় ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক হলে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। তবে সেই লড়াই সেয়ানে সেয়ানে হবে কিনা, তা নির্ভর করবে বড় দুই দলের প্রার্থী নির্বাচনের ওপর। আবার একটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীও বড় ফ্যাক্টর। ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একক প্রার্থী রয়েছে। ঢাকা-২ আসনে আওয়ামী লীগে দুজন এবং বিএনপিতে একজন সম্ভাব্য প্রার্থী। ঢাকা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একক প্রার্থী। ঢাকা-১৯ আসনে আওয়ামী লীগে পাঁচজন ও বিএনপিতে তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। ঢাকা-২০ আসনে আওয়ামী লীগে চারজন এবং বিএনপি থেকে পাঁচজন মনোনয়ন পেতে আগ্রহী হলেও একজন আশায় বুক বেঁধেছেন।

ঢাকা জেলার পাঁচটি আসনে ভোটের যোগ-বিয়োগ সমীকরণ জটিল। প্রার্থী নির্বাচনে দুই দল হিসাবে ভুল করলে পস্তাতে হবে ফলাফলে। এসব নির্বাচনী এলাকায় ১৫ বছরে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হলেও সঠিক প্রচারণার অভাবে এবং আত্মপ্রচারের কারণে তা সাধারণ মানুষের নজর কাড়তে পারেনি। এই সুযোগ নিচ্ছে বিএনপি।

ঢাকা-১ : নবাবগঞ্জ এবং দোহার উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এই আসনে তাকে ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য কেউ প্রকাশ্যে প্রার্থী হতে চান না। সাবেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান অসুস্থ।

এই আসনে বিএনপি থেকে ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক প্রার্থী হতে চান। জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমানে সংরক্ষিত আসনের এমপি জাপার কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় রয়েছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার জোট হলে হিসাব হবে ভিন্ন। বিএনপি চাইছে তাদের পুরনো এই দুর্গ পুনরুদ্ধার করতে। আর আওয়ামী লীগ চাইছে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে। সালমা ইসলামের অবস্থানও সেখানে পোক্ত। ভোটের অঙ্কে তিনিও শক্ত প্রার্থী। সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদা দল থেকে বহিষ্কার হলে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে এখানে দুর্বল হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার কমতি নেই তাদের। এই আসনে তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী দিলে বিএনপির ভোটে তিনি ভাগ বসাবেন। দোহারে ভোটার ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ জন এবং নবাবগঞ্জে ভোটার ৩ লাখ ৩ হাজার ৩৭৬ জন।

ঢাকা-২ : ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের কয়েকটি ওয়ার্ড, কেরানীগঞ্জ উত্তরের কিছু অংশ এবং সাভার উপজেলার আমিনবাজার, ভাকুর্তা ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ আসনে সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম শক্ত প্রার্থী। তবে কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কেরানীগঞ্জ (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ নৌকা প্রতীক নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার চেষ্টা করছেন।

এই আসনে বিএনপি থেকে সাবেক মন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানের পুত্র ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমি ধানের শীষ প্রতীকে লড়তে চান। এই আসনে আমান উল্লাহ আমানের ব্যক্তি ইমেজ রয়েছে। আর আওয়ামী লীগের কামরুল-শাহীন দ্বন্দ্বে নেতাকর্মীরা বিভক্ত। এ অবস্থায় নৌকার জয় পেতে হলে বিবাদ মিটিয়ে সর্বশক্তি কাজে না লাগালে আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হতে পারে।

ঢাকা-৩ : কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানা নিয়ে গঠিত এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর বিকল্প কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীর তোড়জোড় নেই। বিএনপি থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় না হলে তার পুত্রবধূ ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুন রায় প্রার্থী হতে আগ্রহী। বিপু উন্নয়নমূলক কাজ করলেও বিএনপি চেষ্টা করছে আসনটি পুনরুদ্ধার করার। আমান উল্লাহ আমান এখানকার সাবেক সংসদ সদস্য। এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনির সরকার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে ঢাকা জেলা দক্ষিণের সহসভাপতি সুলতান আহমেদ খান হাতপাখা প্রতীকে প্রার্থী হতে চান।

ঢাকা-১৯ : সাভার উপজেলা এবং আশুলিয়া থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৯ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন, আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মনোনয়নের জন্য প্রচারণায় আছেন। মনোনয়ন পেলে নৌকা প্রতীকে লড়তে চান সাভার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব। সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ তাকিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে। তিনি নেই প্রচারণার মাঠে।

তবে পুরনো ও স্থানীয় নেতারা নিজস্ব প্রচারণায় নামায় বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান সাংগঠনিকভাবে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। তার কাছ থেকে সরে পড়ছেন অনেক চেনামুখ। তুহিন ও সাইফুলের শোডাউন দিন দিন বড় হলেও নেতাকর্মীকে জাগাতে পারছেন না ডা. এনামুর রহমান। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী ও গ্রুপিংয়ের সুযোগ নিতে চাচ্ছে বিএনপি। সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। ডা. সালাউদ্দিন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতির পদ হারালেও লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উজ্জীবিত। ঢাকা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খানও মনোনয়নপ্রত্যাশী। সাভার থানা ও পৌর বিএনপিতে কোন্দল রয়েছে। আশুলিয়া বিএনপিতে আছে নীরব বিভক্তি। তবে বিভক্ত নেতাদের কেউই গোপনেও নেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে। সরকারবিরোধী আন্দোলন ও ধানের শীষ প্রশ্নে বরাবরই তারা একাট্টা হন।

ঢাকা-২০ : ধামরাই উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের বর্তমান এমপি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমেদ। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলীয় প্রার্থী। তবে ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মালেক, উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সিআইপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ আল জামান এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাদ্দেস হোসেন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

বেনজীর আহমেদ শতভাগ আশাবাদী বললেও অন্যরা মনোনয়ন প্রাপ্তির চেষ্টা করছেন। এদের মধ্যে ‘তিন মুক্তিযোদ্ধা’ ঘোষণা দিয়ে পৃথকভাবে মাঠে নেমে গণসংযোগ করছেন। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে। আহমদ আল জামান সপ্তাহে দুদিন গ্রামে থেকে সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে অনুদান দিচ্ছেন।

বিএনপি থেকে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য সুলতানা রহমান, ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদ, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হল শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মনোয়ার হোসেন রানা ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হতে চান। তারা সরকারবিরোধী কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে শোডাউন করে আসছেন। দলের বাইরে তমিজ উদ্দিনের ব্যক্তিগত ভোটব্যাংক রয়েছে। কোন্দল মেটাতে না পারলে এখানে খেসারত দিতে হবে আওয়ামী লীগকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App