×

জাতীয়

আজ মহাষ্টমী, হবে কুমারী পূজা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৩৪ এএম

আজ মহাষ্টমী, হবে কুমারী পূজা

ফাইল ছবি

মৃণ্ময়ী প্রতিমা এখন ভক্তের কাছে হয়ে উঠেছে চিন্ময়ী। দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমীর দিন গতকাল শনিবার নবপত্রিকা স্নান ও পূজার পর দেবীর চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। আজ শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমী উদযাপন করবে হিন্দু সম্প্রদায়। মহাষ্টমীতে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজার বিশেষ পর্ব ‘কুমারী পূজা’।

হিন্দু পুরাণ মতে, মহাসপ্তমীতে ভক্তদের কল্যাণ ও শান্তির আশীর্বাদ নিয়ে হিমালয় কন্যা দেবী দুর্গা পূজার পিঁড়িতে বসেন। শুরু হয় মূল পূজা। আর মহাষ্টমী অনুষ্ঠিত হবে ‘কুমারী পূজা’।

গতকাল ভোরে নবপত্রিকা স্নান। স্নানের পর দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা। তারপর শাস্ত্রমতে ষোড়শ উপচারে অনুষ্ঠিত হয় পূজা। পূজার শুরুতেই আয়নায় দেবী দুর্গার প্রতিবিম্ব ফেলে বিশেষ ধর্মীয় রীতিতে করানো হয় স্নান। শুধুমাত্র সপ্তমীই নয়, মহাষ্টমী ও মহানবমীর দিনও পূজার মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে মহাস্নান অনুষ্ঠিত হয়। দেবী দুর্গার প্রতিমার সামনে একটি আয়না রেখে সেখানে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে মহাস্নান করানো হয়। বলা হয়ে থাকে এই সব রীতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের কৃষিসম্পদ, খনিজসম্পদ, বনজসম্পদ, জলজসম্পদ, প্রাণীজসম্পদ, ভূমিসম্পদ প্রভৃতি রক্ষার জন্য সাধারণ মানসে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়। নৈতিকতা স্থাপনে সর্বভূতে দেবীরই অধিষ্ঠানস্বরূপ পতিতোধ্বারের ভাবটিও ফুটিয়ে তোলা এই মহাস্নানের উদ্দেশ্য। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ বিশ্ব সংহতি ও বিশ্বের কাছে এক অসা¤প্রদায়িক স¤প্রদায়ের সমন্বয় বার্তা দেয়া হয়।

এছাড়া করা হয় নবপত্রিকা স্থাপন। যার আরেকটি নাম হলো কলা বৌ স্নান। বেল-তুলসী, আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দনসহ ১৬টি উপাচারে দেবী দুর্গাকে পূজা করা হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী, নবপত্রিকা মানে ৯টি গাছ। এই গাছগুলো আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকস্বরূপ। এরপর ত্রিনয়নী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। শাস্ত্র মেনে চক্ষুদানের সময় কাপড় দিয়ে প্রতিমা ঢেকে ফেলা হয়। কুশ ও কাজল দিয়ে চক্ষুদান করা হয়। কুশের অগ্রভাবে কাজল দিয়ে দেবীর চক্ষুদান করা হয়। এই চক্ষুদানের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ বিধান। ত্রিনেত্র (তিন চোখ) যুক্ত দেব-দেবীর ক্ষেত্রে সবার আগে উপরের নেত্রের চক্ষুদান করা হয়। এরপর দেবীর বাম চোখ ও পরে ডান চোখে চক্ষুদান করা হয়। দেবতার ক্ষেত্রে ডান চোখের পর বাম চোখে চক্ষুদান করা হয়। পূজার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে হাতে ফুল, বেলপাতা নিয়ে ভক্তরা মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে দেবীর পায়ে অঞ্জলি দেন।

গতকাল দুপুর থেকেই মন্দির ও মণ্ডপে প্রতিমা দর্শনে বেরিয়ে পড়েন অনেকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড়। পূজার আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি বিকাল থেকে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভক্তিমূলক সংগীত, রামায়ণ পালা, আরতি, শিশুদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা গতকাল থেকেই বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রবিবার দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ও রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের মণ্ডপ পরিদর্শন করবেন।

আজ মহাষ্টমী। মণ্ডপ-মন্দিরে ভক্ত দর্শনার্থীরে ভিড় আরো বাড়বে। হবে আরতী। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকানুযায়ী আজ সকাল ৬টা ১০ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর মহাষ্টম্যাদি বিহিত পূজা শুরু হবে। রাত ৮টা ৬ মিনিট থেকে ৮টা ৫৪ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে সন্ধিপূজা। অষ্টমী তিথি শেষ হওয়ার শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথি শুরু হওয়ার প্রথম ২৪ মিনিটকে বলে সন্ধিক্ষণ। এই সময়েই দেবী দুর্গা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই ভয়ঙ্কর অসুরকে নিধন করেছিলেন। এই ঘটনাটিকে স্মরণ করার জন্যই প্রতি বছর অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে এই সন্ধিপূজা করা হয়। সন্ধিপুজার অন্যতম উল্লেখযোগ্য নৈবেদ্য হল পদ্ম।

এই পুজোয় দেবীকে ১০৮টি পদ্ম অর্পণ করা হয়, ১০৮টি বেলপাতা এবং ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। নৈবেদ্যয় দেয়া হয় গোটা ফল, জবা ফুল, সাদা চাল, শাড়ি, গহনা এবং সাজ-সজ্জার দ্রব্য। এছাড়া মহাষ্টমীতে অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা। দেবী পুরাণে কুমারী পূজার সুষ্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এ বছরও রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, সিলেটের বাহুবল উপজেলার জয়পুর গ্রামে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মাতুলালয় শচীঅঙ্গন ধামসহ কয়েকটি স্থানে অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। রামকৃষ্ণ মিশনে বেলা ১১টায় কুমারী পূজা শুরু হবে।

রাজধানীর শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, ধানমন্ডি সর্বজনীন পূজা কমিটি, গুলশান বনানী সর্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, রমনা কালী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, কাওরানবাজার এটিএন নিউজ কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মণ্ডপসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ও ব্যক্তিগতভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে উৎসবমুখর পরিবেশে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App