×

জাতীয়

আরো ১৩০০ জাপানি কোম্পানি বিনিয়োগ করতে আসতে চায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৩৯ পিএম

আরো ১৩০০ জাপানি কোম্পানি বিনিয়োগ করতে আসতে চায়

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিডা কনফারেন্স রুমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জাপানের ২৭ কোম্পানির ৩৫ জন প্রতিনিধি দল। ছবি: ভোরের কাগজ

বাংলাদেশে এসে মুগ্ধতার কথা জানিয়ে এখানে বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকায় অবস্থানরত জাপানের ২৭ কোম্পানির ৩৫ জন প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কনফারেন্স রুমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তারা এ কথা বলেন। এসময় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশনের (বিডিএ) থেকে জানানো হয়, জাতীয় নির্বাচনের পরে আরো ৩০০ জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে আসবে। আর আগামী একবছরের মধ্যে আরো একহাজার জাপানি কোম্পানি বিনিয়োগ করতে আসবে। অর্থ্যাৎ ১৩০০ জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করবে। এরআগে গতকাল সকালে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় তিনি জাপানি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলো উল্লেখ করে, কেন এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগের সেরা সময়, প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন। এসময় জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের ইকোনমিক জোন, ট্যুরিজম ও অন্যান্য সেক্টরে বিনিয়োগ করার কথা জানান। জাপানি ব্যবসায়ীরা বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগকে সেরা সুযোগ মনে করে তারা এসেছে। বাংলাদেশে আসার পর ৩ দিনে অনেক জায়গা ঘুরে দেখে তারা আনন্দিত। বাংলাদেশ সম্পর্কে আগে যা শুনতেন, বাস্তবে তার ভিন্ন। চারিদিকে উন্নয়নের ছাপ। কিছু কিছু বিষয়ে এখনো বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। যেমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ময়লার স্তুপ পড়ে আছে। আমরা এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও কাজ করতে আগ্রহী। আমাদের টিমের সঙ্গে এরকম একটি কোম্পানি রয়েছে, যারা জাপানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করায় নাম্বার-ওয়ান। এছাড়াও আইটি সেক্টর, ইকোনমিক জোন, ভোলা গ্যাস ফিল্ড ও ব্লু ইকোনমিতেও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এছাড়াও বাংলাদেশের জিডিপি বাড়বে, এমন সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে এই সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়েছে। জাপান বাংলাদেশে অনেক বিনিয়োগ করছে, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্পেও যুক্ত রয়েছে। বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানের ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। আমরা মনে করি, ভবিষ্যতে দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরো ভালো হবে। বাংলাদেশে বেশি বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে সালমান এফ রহমান আরো বলেন, সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি ও ট্যুরিজমে। কৃষি ও বিভিন্ন খামারের জন্য যদি আধুনিক টেকনোলজি আনা যায়, তাহলে বেসরকারি খাত থেকে সহযোগিতা করা হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা খাতে বিনিয়োগ করলে সবচেয়ে বড় সুবিধা, আন্তর্জাতিক মার্কেটের পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরিন মার্কেটেও ব্যবসা করার সুযোগ রয়েছে। আর ট্যুরিজমের উন্নয়নে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এই খাতে বেশি বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়াও হাসপাতাল ও মেডিকেল যন্ত্রপাতি বিষয়ে বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে, লাভবান হবে জাপানিরাও। বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, প্রথমবারের মতো জাপানের এতো বড় একটি টিম বাংলাদেশে এসেছে দেখে আমরা আনন্দিত। বাংলাদেশ ১০০টি ইকোনমিক জোন করার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটির কাজ চলছে। এগুলোতেসহ ট্যুরিজমের ব্যাপক সম্ভাবনা বাংলাদেশে রয়েছে। বিশ্বে সুবৃহৎ সমুদ্র সৈকত ও ম্যানগ্রোভ বনসহ দর্শনীয় সেন্টমার্টিন দ্বীপ রয়েছে বাংলাদেশে। এসব জায়গায় বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়ার সূবর্ণ সুযোগ রয়েছে। বিডিএ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (জাপানের স্বমন্বয়কারী) মো. নেওয়াজ শরীফ বলেন, জাপানের ২৭ কোম্পানির ৩৫ জন প্রতিনিধি বাংলাদেশে এসে বিনিয়োগের জায়গাগুলো ঘুরে দেখছে এবং বাংলাদেশে কি কি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে সেটি বোঝার চেষ্টা করছে। পরে আরো ৩'শ জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে আসবে। এরপর আগামী একবছরের মধ্যে আরো একহাজার জাপানি কোম্পানি বিনিয়োগ করতে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিডিএ-এর বাংলাদেশী স্বমন্বয়কারী শামীম মোহাম্মদ আরিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসা জাপানি কোম্পানিগুলো খুবই আনন্দিত। বাংলাদেশের জিডিপি বাড়াতে তারা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করবেন বলে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এমনকি পাটুরিয়ায় প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামও বন্ধুত্বের উপহার হিসেবে করে দিতে চায় তারা। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় আসেন ২৭ জাপানি কোম্পানির ৩৫ জন প্রতিনিধি দলটি। পরে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানান, ৬টি প্রকল্পে (মানিকগঞ্জ ইকোনমিক জোন, রিভার ট্যুরিজম মানিকগঞ্জ ইকোনমিক জোন, লক্ষ্মীপুর স্পেশাল ইকোনমিক জোন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইকোনমিক জোন, ব্লু ইকোনমি ও ভোলা গ্যাস ফিল্ড) বিনিয়োগ করতে চায় তারা। বিডিএ বলছে, ওই ৬ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১-২% বেড়ে যাবে। সেইসঙ্গে আগামী একবছরের মধ্যে আরো এক হাজার জাপানি কোম্পানি বিনিয়োগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App