×

জাতীয়

পুলিশ হেফাজতে দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু: ওসিসহ ৪ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:২০ পিএম

পুলিশ হেফাজতে দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু: ওসিসহ ৪ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা
চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় নগরীর চান্দগাঁও থানার ওসিসহ চার পুলিশ কর্মকর্তা এবং একইসঙ্গে আরও পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আদালত মামলা রেকর্ড করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার (১৬ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. জেবুন্নেছা বেগমের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন মৃতের স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার। আদালত সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন, ২০১৩ এর ১৫ (২) এবং দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ এনেছেন মামলার বাদী। অভিযুক্ত নয়জন হলেন, চান্দগাঁও থানার ওসি খাইরুল ইসলাম ও পরিদর্শক (তদন্ত) মবিনুল হক, এএসআই মো. ইউসুফ ও সোহেল রানা এবং চান্দগাঁও থানা এলাকার বাসিন্দা এস এম আসাদুজ্জামান, জসিম উদ্দিন, মো. লিটন, রণি আক্তার তানিয়া ও কলি আক্তার। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মামলার অভিযোগের বিষয়ে আদালতে ত্রিশ মিনিট শুনানি হয়। আদালত শুনানি শেষে মামলাটি থানায় রেকর্ড করার জন্য নির্দেশ দেন। পাশাপাশি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলার আরজিতে শহীদুল্লাহ’র স্ত্রী অভিযোগ করেন, জায়গা-জমি দখলের জন্য আসাদুজ্জামান, জসিম, লিটন, তানিয়া ও কলি মিলে তার স্বামীকে মিথ্যা মামলার আসামি করেন। এতে তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তা দেন চান্দগাঁও থানার অভিযুক্ত চার পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া যে আদালতে মামলা দায়ের হয়, সেই আদালতের বেঞ্চ সহকারি হারুন উর রশিদ ষড়যন্ত্র করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে শহীদুল্লাহ’র বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায়। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, শহীদুল্লাহ হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। এছাড়া তিনি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। এএসআই ইউসুফ ও সোহেল রানাকে গ্রেপ্তারের সময় তাকে গালাগাল করেন। টেনেহিঁচড়ে তাকে থানায় নিয়ে গিয়ে জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে বিবাদীদের সঙ্গে আপসের জন্য চাপ দেন। গ্রেপ্তারের সময় পরিবারের সদস্যরা প্রয়োজনীয় ওষুধ ও নাইট্রোমিন স্প্রে দিতে চাইলে সেগুলোও নিতে দেননি দুই এএসআই। মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে তার মৃত্যু ঘটানো হয়েছে। প্রসঙ্গত আদালতে দায়ের হওয়া মামলায় পরোয়ানামূলে গত ৩ অক্টোবর রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানা পুলিশ দুদক’র অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে (৬৪) নগরীর চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, হুমকি-ধমকি ও মানহানির অভিযোগে গত ২৯ আগস্ট শহীদুল্লাহসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাটি দায়ের করেছিলেন রণি আক্তার তানিয়া। পরোয়ানামূলে গ্রেপ্তারের পর তাকে চান্দগাঁও থানার ওসি’র কক্ষে বসানো হয়। কিছুক্ষণ পর তিনি অসুস্থবোধ করতে থাকেন। হৃদরোগে আক্রান্ত শহীদুল্লাহ’র মুখে এসময় ইনহেলার স্প্রে করেন তার সঙ্গে যাওয়া ছোট ভাই। কিন্তু অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে শুরু করলে ছোট ভাইয়ের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ শহীদুল্লাহকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে শহীদুল্লাহ’র মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ নির্দয় আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শহীদুল্লাহকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে বিধিবর্হিভূত কোনো কাজ করা হয়েছে কি না এবং থানায় নিয়ে যাবার পর তার সঙ্গে নিয়ম বর্হিভূত কোনো আচরণ করা হয়েছে কি না সেটা নির্ণয়ের জন্য সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনারকে প্রধান করে কমিটিতে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) এবং বিশেষ শাখার সহকারী কমিশনারকে সদস্য করা হয়েছে। এরপর গ্রেপ্তার অভিযানে যাওয়া চান্দগাঁও থানার দুই এএসআই মো. ইউসুফ ও সোহেল রানাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। এছাড়া রণি আক্তার তানিয়ার দায়ের করা মামলায় আদালতের সমন গোপন রেখে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করানোর বিষয় তদন্তে এক সদস্যের কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম। এ অভিযোগে সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম-৬ আদালতের বেঞ্চ সহকারি হারুন উর রশিদকে বিচার সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম থেকে সরিয়ে ‘ক্যাশিয়ার’ পদে বদলি করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App