×

জাতীয়

চট্টগ্রামে শিশু হত্যা মামলায় চার্জশিট দাখিল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:১৬ পিএম

চট্টগ্রামে শিশু হত্যা মামলায় চার্জশিট দাখিল

প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিন হালিশহরে ১১ মাস আগে এক শিশুকে অপহরণ, নৃশংসভাবে খুন ও মরদেহ টুকরো করে ফেলে দেয়ার মামলায় আবীর আলী নামে এক তরুনকে আসামী করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। এছাড়া তাকে সহযোগিতা করায় এক কিশোরকে অভিযুক্ত করে আলাদাভাবে আদালতে দোষীপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় অভিযুক্ত তরুণের বাবা-মা ও বোনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক মনোজ কুমার দে।

রবিবার (৮ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্র ও দোষীপত্র জমা দেন। মামলার ধার্য তারিখে সেগুলো আদালতে দাখিল করা হবে বলে পিবিআই কর্মকর্তা মনোজ কুমার দে জানিয়েছেন। গত বছরের ১৫ নভেম্বর বিকেলে নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানার চার বছর ১১ মাস বয়সী মেয়ে আলীনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হন। ঘটনা জেনেই ছায়া তদন্তে নামে পিবিআই।

২৪ নভেম্বর আবির আলী নামে এক তরুণকে আটক করে পিবিআই জানায়, প্রতিবেশি এই তরুণ আয়াতকে অপহরণ করেছিল। এরপর তাকে শ্বাসরোধে খুন করে ১৬ নভেম্বর সকালে লাশের তিনটি টুকরা নগরীর আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকায় সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ওইদিন রাতে বাকি তিন টুকরা আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে একটি নালায় স্লুইচগেটের প্রবেশমুখে ফেলে দেয় আবির। আবিরের দেয়া তথ্যে গত বছর ৩০ নভেম্বর নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে নালা সংলগ্ন স্লুইচগেট এলাকা থেকে আয়াতের বিচ্ছিন্ন দুই পায়ের অংশ এবং পরদিন খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করে পিবিআই।

গ্রেপ্তার হওয়া আবির আলী (১৯) নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা আজাহার আলীর ছেলে। তাদের বাড়ি রংপুর জেলায়। আবিরের বাবা যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সেটির মালিক আয়াতের দাদা মনজুর হোসেন। এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় সোহেল রানার দায়ের করা মামলা প্রায় ১১ মাস তদন্তের পর দাখিল করা অভিযোগপত্রের বিষয়ে পিবিআই' র পরিদর্শক মনোজ কুমার দে বলেন, ‘আবির আলী হতাশাগ্রস্ত তরুণ। বিভিন্ন জায়গায় চাকরি খুঁজে ব্যর্থ হয়। দ্রুত ধনী হওয়ার নেশাও ছিল তার। এজন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগী এক কিশোরকে নিয়ে আয়াতকে অপহরণ করে।’

‘তিনটি সিএনজি অটোরিকশা কিনে দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় আয়াতকে জিম্মি রেখে তার দাদার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল সে। কিন্তু আয়াতকে মুক্ত করে দিলে ঘটনা জানাজানি হয়ে যাবার ভয়ে তাকে খুন করে।’

পিবিআই জানিয়েছে, দণ্ডবিধির ৩০২ ও ২০১ ধারায় দাখিল করা আবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে ছয়জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। ঘটনার পর আবিরের বাবা আজাহার আলী, মা আলিমনা আলো এবং তার কিশোরী বোনকেও গ্রেপ্তার করেছিল। তবে তদন্তে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে গ্রেপ্তারের পর আবীর আলীর দেয়া তথ্যে পিবিআই তার ঘনিষ্ঠ ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে ৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করেছিল। ওই কিশোর নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট এলাকায় আয়াতের বাসার অদূরে ‘ভাই ভাই হোটেলের’ মেসিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিল। একই এলাকার সাইফুল কলোনিতে ব্যাচেলর বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতো।

গত ৭ ডিসেম্বর ওই কিশোর আদালতে জবানবন্দি দিয়ে আয়াতকে অপহরণ ও হত্যার বিষয়ে অবগত থাকার কথা স্বীকার করে। জবানবন্দিতে সে জানায়, মানুষ সন্দেহ করবে- এই ভয়ে আয়াতকে মেরে ফেলার বিষয়টি জানার পরও সে কাউকে কিছু জানায়নি। এরপর থেকে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত সে নিজের মতো করে স্বাভাবিক থাকে। পিবিআই জানায়, দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় কিশোরকে অভিযুক্ত করে আদালতে পৃথক দোষীপত্র দাখিল করা হয়েছে। কিশোর বয়সী হওয়ায় তার বিচার পৃথক আদালতে চলবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App