×

জাতীয়

যৌন হয়রানি নিরোধ আইন ১৪ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৩৮ পিএম

যৌন হয়রানি নিরোধ আইন ১৪ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি

উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঘটনা ও ভয়াবহতা বেড়েছে। প্রচলিত আইনে যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের অনেক বিষয় অনুপস্থিত। আইনের এসব সীমাবদ্ধতার কারণে যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের অনেক বিষয়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। ২০০৯ সালে হাইকোর্ট এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেয়। কিন্তু দীর্ঘ ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আইন আলোর মুখ দেখেনি।

বুধবার (৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

সংগঠনের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলসহ সর্বত্র যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ আইনের খসড়া প্রস্তাবনার সর্বশেষ অবস্থা ও করণীয় বিষয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম। প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের উপ-সচিব মাকসুদা পারভীন ও ইউএনডিপি বাংলাদেশের জেন্ডার টিম লিডার শারমিন ইসলাম। আলোচক ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন বিষয়ক অভিযোগ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জেবঊননেছা, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উপ-পরিচালক মৌলি আজাদ, জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাসিমা আখতার জলি।

ড.কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশনার পর দীর্ঘ ১৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও আইন আলোর মুখ দেখেনি। সংবিধান অনুসারে সকলের সমান অধিকার আছে। নারীর উন্নয়নে নানা অগ্রগতি হলেও নারীর প্রতি সহিংসতা আছে। এর জন্য ক্ষমতার কথা বলা হয়। এই বলয় ভেঙে চিন্তার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের বিষয়টি আনতে হবে। যৌন হয়রানি প্রতিরোধে পৃথক আইন হতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপ নিলে আইন প্রণয়নের সামগ্রিক প্রক্রিয়া তরান্বিত হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগটি গ্রহণ করতে পারে।

ফরিদা পারভীন বলেন, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধে গঠিত অভিযোগ কমিটির কার্যক্রম মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় মনিটর করে। উত্ত্যক্তকরণের ধরন বদলেছে। বিষয়গুলো এই আইনে যুক্ত করতে হবে। যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ আইনের যে খসড়া করা হয়েছে তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে একটি সুনির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও উদ্যোগ নিতে পারে।

মাকসুদা পারভীন বলেন, প্রস্তাবিত আইনটিতে কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি দূতাবাসের কথা যুক্ত করতে হবে। অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা; আইনে থাকা শাস্তির বিষয়ে আরো পুনঃচিন্তা করতে হবে। যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে আলাদা আইনের প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হতে প্রস্তাব করা হলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কাজ করতে পারে।

শারমিন ইসলাম বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সবাইকে একসাথে নিয়ে আইনের খসড়ার পুনঃপর্যবেক্ষণ করতে পারে। প্রতিনিয়ত সহিংসতার ধরণ পরিবর্তন হচ্ছে কাজেই আইনটি পাশ করার আগে একবার পরীবীক্ষণ প্রয়োজন, নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়টি যুক্ত করতে হবে।

নাসিমা আখতার জলি বলেন, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধে আলাদা আইনের প্রণয়ন সকলেরই চাওয়া। পাবলিক প্লেসে নারী ও কন্যার প্রতি যৌন হয়রানির নানা ঘটনায় অপরাধীরা প্রচলিত আইনের ফাকফোকর থাকায় পার পেয়ে যাচ্ছে, এতে সহিংসতা ক্রমাগত বাড়ছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সমাজে থাকা নারীর বিদ্বেষী মনোভাবের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করতে হবে। যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে আলাদা আইন প্রণয়নে বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

মালেকা বানু বলেন, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশনার পর ২০১০ সালের শেষে ধারাবাহিকভাবে মহিলা পরিষদ ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন খসড়া আইনের প্রস্তাবনা জমা দেয়। এই দীর্ঘ সময়ে হাজার হাজার নারী ও কন্যা সহিংসতার শিকার হয়েছে। ২০০৯ এ হাহকোর্ট রায় দেয়ার পরও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে থাকা দীর্ঘসূত্রিতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কিভাবে দ্রুত আইনে পরিণত করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App