×

জাতীয়

৬ মাসে ৬১৮ শিশু নির্যাতন, মামলা ২৪৯

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:০৮ পিএম

৬ মাসে ৬১৮ শিশু নির্যাতন, মামলা ২৪৯

চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬১৮ জন শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ছয় বছরের নিচে ৪৭ জন ও ৭ থেকে ১২ বছরের বয়সী ১১২ জন শিশু সহিংসতার শিকার হয়। এর মধ্যে মাত্র ২৪৯টি ঘটনায় মামলা হয়েছে।

বুধবার (৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে শিশুর অধিকার সপ্তাহ ও বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে 'শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন নিরসনে শিক্ষকদের কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সহযোগিতায় এ সভার আয়োজন করে ৩১ সংগঠনের জোট 'শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন নিরসনে কোয়ালিশন।'

অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ এর অন্যতম প্রণেতা ও এডুকেশন ওয়াচ বাংলাদেশের সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ। টইটম্বুর এর কো-ফাউন্ডার হাসনাইন সাবিহ নায়কের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাইদ খান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইসলাম, আইআইডি'র প্রধান নির্বাহী পরিচালক সাইদ আহমেদ, ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম প্রমুখ।

সভায় অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, ছেলে-মেয়েরা স্কুলে হোক বা বাড়িতে হোক ভুল করতে পারে। প্রচলিত নিয়মের কিছু বরখেলাপ তাদের হতে পারে। তাদের নিয়মানুবর্তী করতে আমরা কিছু বিকল্প ভাবতে পারি। মনোবিজ্ঞানীরাও তাই বলছেন। সেই সঙ্গে আমাদের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। শিক্ষক অভিভাবক উভয়কেই বদলাতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং হ্রাস ও সম্ভাব্য সংঘাত বা বিরোধ নিরসনে বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে হবে।

বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার করা কথা বলে আবু সাঈদ খান বলেন, ধনীদের জন্য এক ধরনের, মধ্যবিত্তদের জন্য একরকম শিক্ষা। আবার নিম্ন বিত্তদের জন্য আছে মাদ্রাসা শিক্ষা। এটা হলো বৈষম্য। এক ধারার, সমন্বিত, ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষা দরকার বলে মনে করেন সাঈদ। তিনি বলেন, শিক্ষক হতে হবে স্যাকুলার অর্থাৎ জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ নিরপেক্ষ, অর্থাৎ মানবিক বোধসম্পন্ন । আমাদের বিদ্যালয় কাউকে হিন্দু বানাচ্ছে, কাউকে মুসলিম বানাচ্ছে। কিন্তু মানুষ বানাচ্ছে না।

শিশুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে এডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, আইন ও সালিক কেন্দ্র পত্রিকার নিউজ থেকে শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংগ্রহ করে। তাদের তথ্যমতে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬১৮ জন শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ছয় বছরের নিচে ৪৭ জন ও ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে আছে ১১২ জন শিশু। ৬১৮ জনের মধ্যে মাত্র ২৪৯টি ঘটনার মামলা হয়েছে। অন্যদিকে ব্লাস্টের তথ্যমতে, জানুয়ারি -জুন পর্যন্ত শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটে ১৯০টি। তিনি মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার, সমাজ সবক্ষেত্রেই শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

মতবিনিময় সভায় কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতি নির্বিশেষে শিশু অধিকার রক্ষায় আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের লক্ষ্যে ৭ দফা দাবী তুলে ধরা হয়েছে ।

  • শিশু আইন, ২০১৩ এর ধারা ৭০ এ শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি প্রদান নিষিদ্ধ করা এবং তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইনের ৭০ ধারা সংশোধন করতে হবে।
  • শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্র আইন, ২০২১ এর ধারা ২৫ সংশোধন করে শারীরিক ও মানসিক শান্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
  • শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে, বিচারিক ও প্রশাসনিক প্রতিকারের ব্যবস্থার উল্লেখসহ প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন পাস করতে হবে।
  • শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কারিকুলাম ও নীতিমালায় শারীরিক শাস্তির সঙ্গে মানসিক শান্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা। শিক্ষক প্রশিক্ষণ কারিকুলাম এবং শিক্ষা সংক্রান্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সকল কোর্সে শারীরিক ও মানসিক শাস্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ মডিউলের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা অনুচ্ছেদে শিশুদের উপর মানসিক শাস্তি দেয়ার নেতিবাচক প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সকল শিক্ষকদের কাছে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক শাস্তি প্রদান নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বার্তা সঠিক ও সুস্পষ্টভাবে পৌছে দেয়ার জন্য মুক্তপাঠসহ বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক শিখন প্লাটফর্মে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
  • শিশু যত্ন বা আশ্রয় বা উন্নয়ন কেন্দ্রের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিয়োগ বিধি ও নির্দেশিকায় শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
  • শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শান্তি নিরসনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পৃথক সেল গঠন করতে হবে।
  • জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড ও জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির নিয়মিত সভায় শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শান্তির বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত করা এবং স্কুলে অভিযোগ বক্স স্থাপন করা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App