×

জাতীয়

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের ৭৫তম জন্মদিন আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৪৬ পিএম

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের ৭৫তম জন্মদিন আজ

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীকের ৭৫তম জন্মদিন আজ। এ দিনে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।

সৈয়দ মুহাম্মদ বীরপ্রতীক এই নামটির মধ্যে একটি তারুণ্য আছে। অত্যন্ত মেধাবী সেনানায়ক এবং সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। ছাত্রজীবন থেকেই সাফল্যের যাত্রা শুরু করে সমর জীবন শেষ করে অবসর জীবনেও তিনি অবসের না থেকে বরং তার কাজের মাধ্যমেই মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।

পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি এই শ্লোগানকে ধারন করে শুরু করেন রাজনীতি। রাজনৈতিক জীবনে স্পষ্টবাদী এবং অত্যন্ত নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবেই পরিচিত জেনারেল ইবরাহিম।

পারিবারিক জীবনে তিনি এক পুত্র ও এক কণ্যা সন্তানের জনক। বড় সন্তান সৈয়দ ফজলুল করীম মুজাহিদ একজন ব্যাংকার। কন্যা শারমীন ফাতিমা ইন্না একজন ডিজিটাল ক্রিয়েটর। তার স্ত্রীর নাম ফোরকান ইবরাহীম। মিসেস ফোরকান ইবরাহিম এর পিতা, বড় বোনের স্বামী এবং ছোট বোনের স্বামী- সবাই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

পার্টির তরুণ নেতাকর্মীদের কাছে মাতৃতুল্য মিসেস ইবরাহিম, কল্যান পার্টিরও একজন নিবেদিতপ্রাণ স্নেহশীল নেতা। আমরা আবিষ্কার করেছি যে, জেনারেল ইবরাহিম এর রাজনীতির অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছেন মিসেস ইবরাহিম এর ত্যাগ ও পরিশ্রম।  মেজর জেনারেল ইবরাহিম এর পিতা জনাব এস এম হাফেজ আহমেদ চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা ছিলেন; তিনি ১৩ বছর আগে ইন্তেকাল করেন।

জেনারেল ইবরাহিমের মা ৯১ বছর বয়সে এখনো পরিবারের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ আছেন। জেনারেল ইবরাহিম এর জিবীত কনিষ্ঠ তিন ভাইয়ের মধ্যে প্রথমজন অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ও নিউরোসার্জন, দ্বিতীয়জন অবসরপ্রাপ্ত মেজর, তৃতীয়জন পুরষ্কারপ্রাপ্ত অনুকরণীয় মাঝারী শিল্প উদ্যেক্তা এবং চার বোন সবাই মেজর জেনারেল ইবরাহিম এর রাজনীতিতে সহায়ক শক্তি।

মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক ১৯৪৯ সালের  ৪ অক্টোবর তারিখে  চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানাধীন মদুনাঘাটের বুরিশ্চড় গ্রামের তালুকদার বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। তার প্রাইমারী শিক্ষা প্রথমে হয় বুড়িশ্চর ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে। অতপর  চট্টগ্রাম বন্দর প্রথমিক বিদ্যালয়ে।

তিনি ১৯৬২ সালে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন  এবং ১৯৬৮ সালে এইচ এস সি পরিক্ষায়  মানবিক বিভাগ  থেকে কুমিল্লা বোর্ড এ প্রথম স্থান অধিকার করেন।

৯ জানুয়ারি ১৯৭০ সালে পকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুল জয়েন করেন। ৬ ই সেপ্টেম্বর ১৯৭০ সালে কমিশন লাভ করেন এবং কোর্সে বেস্ট অলরাউন্ড বা সর্বোত্তম ক্যাডেট হয়ে, লেফটেনেন্ট  জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন এর কাছ থেকে, সোর্ড অফ অনার এর সমতূল্য কমান্ডার ইন চীফস কেইন নামক পুরষ্কার  গ্রহন করেন।প্রথম চাকুরী শুরু করেন তৎকালীন ঢাকা জেলার জয়দেবপুরে অবস্থিত ভাওয়াল রাজার রাজবাড়িতে অবস্থানরত দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এ যোগদানের মাধ্যমে।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারা সবাই একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন।১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে আখাউড়া বিজয়ের যুদ্ধে তার অসম সাহসী ভূমিকার জন্য বীরপ্রতীক খেতাব পান।  মুক্তিযুদ্ধের পর  ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এ চাকুরী শুরু হয়।  ১৯৭৩ সালে মার্চ এপ্রিল মাসে সিলেকশন সার্ভিস কোর্স সম্পন্ন করে আসেন ভারত থেকে।

১৯৭৩ সালের আগষ্ট মাসে আর্মি সিলেকশন বোর্ডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং জিটিও এর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৪ পর্যন্ত যা পরবর্তিতে আইএসএসবি বা ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ড নামকরন করা হয়। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ সাল এর মার্চ  পর্যন্ত   সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল এর উপ-অধিনায়ক ছিলেন।

তিনি মার্চ ১৯৭৯ থেকে  অক্টোবর ১৯৮০  পর্যন্ত সপ্তম ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক ছিলেন। ২২ শে অক্টোবর ১৯৮০ থেকে ১৮ অক্টোবর ১৯৮২ পর্যন্ত  জি ওয়ান সামরিক প্রশিক্ষন অধিদপ্তর এ নিয়োগ ছিলেন। ১৯৮৩ সালে পিএসসি করতে যুক্তরাজ্যের  দি রয়েল স্টাফ কলেজ ক্যাম্বার্লি- তে যান। ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি থেকে মিরপুর স্টাফ কলেজের ডাইরেক্টিং স্টাফ বা ইন্সট্রাকটর ছিলেন ১৯৮৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। ৮৭'র জানুয়ারি থেকে জুলাই ১৯৮৭ পর্যন্ত   পার্বত্য চট্টগ্রামের বিলাইছড়িতে  ২৫ ইস্ট বেঙ্গল এর কমান্ডিং অফিসার ছিলেন।

১৯৮৭ সালের জুলাইতে  কর্ণেল হয়ে রাঙ্গামাটি জেলা সদরে অবস্থিত  ৩০৫ ব্রিগেড, কমান্ড করেন। ২০ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে অবস্থিত  ২০৩ পদাতিক  ব্রিগেড কমান্ড করেন ১৯৮৯ সালের জুন মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত। ১৯৭৫ সালে গঠিত  পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংহতি সমিতি ও এর সশস্ত্র উগ্র অংগ সংগঠন "শান্তি বাহিনীর" মাধ্যমে 'ইন্সার্জেন্সি সংঘাত ' শুরু হয়।

এই যুদ্ধাবস্থা ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি সাক্ষরের পূর্ব পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২২ বছর চলমান থাকে। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও অধিনস্থ আধা সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে বাংলাদেশের এক দশমাংশ ভূমি রক্ষা করতে সক্ষম হয়। বিরাজমান এই সংঘাত এবং এর থেকে উত্তরনের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে চুড়ান্ত ত্যাগ এবং জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে। এর সাথে আছে শান্তি বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা তথা বাঙ্গালী নিধনের ইতিহাস। ২২ বছরের এই সংঘাতকে শান্তিতে রূপ দেবার প্রধান কারিগর ছিলেন বাংলাদেশের অনেক দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাবৃন্দ।

তাদের মধ্যে পুরধা হলেন ১৯৮৭-৮৮-৮৯ সালের কর্ণেল সৈয়দ ইবরাহিম বীর প্রতীক । তিনি তার মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেন এবং সমস্যা সমাধানে প্রভূত জ্ঞান অর্জন তথা এই সংঘাতের শান্তিপূর্ন সমাধানের উপায় বের করতে সক্ষম হন। জানবাজ সেনা নায়ক  সৈয়দ ইবরাহিম যুদ্ধের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান  এই জাতীয় সমস্যারটির একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য শান্তি বাহিনীর নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তি বর্গের সাথে, সরকারের অনুমোদন নিয়ে, নিয়মিত সাক্ষাৎকারার আয়োজন করেন।

অনেক সময় শান্তি বাহিনীর শর্ত অনুযায়ী অকুতোভয় সৈনিক ইবরাহিম তার টিম নিয়ে অস্ত্রবিহীন অবস্থায় সশস্ত্র ও উগ্র এই সংগঠনের সাথে দুর্গম এলাকায় মিলিত হতেন। তার এই সাহসিকতাপূর্ণ দায়িত্ববোধের ফলে শান্তিচুক্তি একটি ফলপ্রসু পর্যায়ে পৌছে। এমন সময় (মার্চ ১৯৮৯) হংকং থেকে প্রকাশিত  বিশ্ব বিখ্যাত আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ফার ইস্টার্ণ ইকোনোমিক রিভিউ-তে তৎকালীন কর্নেল ইবরাহিমের পূর্ন ছবি বা কাভার ফটো সহ এক বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয় যা একজন বাংলাদেশি সেনা অফিসারের জন্য বিরল প্রাপ্তি। ১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে র ইউএস আর্মি ওয়ার কোর্সে সম্পন্ন করার জন্য যান।

আমেরিকা থেকে ফেরত এসে, ১৯৯০ সালের জুলাই থেকে ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে ডিএমও বা ডাইরেক্টর অফ মিলিটারি অপারেশনস ছিলেন।  ১৯৯৩ সালের ১০ মে থেকে ১৯৯৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির কমান্ডান্ট ছিলেন। বিএমএ হচ্ছে কমিশন অফিসার তৈরি করার কারখানা। ২৪ ডিসেম্বর মেজর জেনারেল এর র‌্যাংক পরিধান করেন এবং ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ১৯৯৬ সালের ৭ জুন ঢাকা মহানগরে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ এর মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালের ১৫ জুন তিনি বাধ্যতামূলক অবসরে যান।

সমর জীবনে দেশের প্রয়োজনে এই বীর গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অনিবার্য নিহত হবার মত বিপদসংকুল সেই মুহূর্তগুলোতে অদম্য এবং সাহসী ভূমিকার জন্য পেয়েছেন ‘বীরপ্রতীক’ খেতাব। তার ২৮ বছরের সেনা জীবন ছিল বর্ণাঢ্য। সেখানে তিনি প্রতিটি অধ্যায়ে তাঁর মেধা, বিশ্বস্ততা এবং ত্যাগের চুড়ান্ত নজরানা পেশ করেছেন।

তিনি বীর প্রতীক খেতাব ছাড়াও বিজয়ের রজত জয়ন্তী পদক, সমর পদক, শক্তি তারকা, বাংলাদেশ নিরাপত্তা পদক, বাংলাদেশ দাবানল পদক, বাংলাদেশ প্লাবন পদক ১৯৮৮, ঘূর্ণিঝড় ১৯৯১, জয় পদক, সংবিধান পদক, সংসদীয় নির্বাচন ১৯৯১ পদক,স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তি, সামরিক জৈষ্ঠতা পদক এক এবং সামরিক জৈষ্ঠতা পদক দুই অর্জন করেন।

সেনা জীবন থেকে অবিসরের পর তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখা শুরু করেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক এন্ড পিস স্টাডিজ এর প্রতিষ্ঠাতা এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ছিলেন। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সভাপতি ছিলেন। ২০০৭ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন এর লক্ষ্যে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। কল্যাণ পার্টির   মৌলিক লক্ষ্য, সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আমি কল্যাণ পার্টিতে  যোগদানের পর থেকে, রাজনীতিবীদ জেনারেল ইবরাহিম-কে ঘনিষ্টভাবে দেখার সুযোগ পাচ্ছি।

এখনো নিয়মিত বই পড়েন তিনি। ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন টেস্ট কিংবা বিসিএস পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা যেভাবে দাগ দিয়ে দিয়ে বই পড়ে, ঠিক তেমন করেই এখনো বই পড়েন তিনি। পড়াশুনা ছাড়া কোন সেমিনারে কিংবা সমাবেশে  তিনি বক্তব্য দিতে যান না। জ্ঞান আহরণের অসাধারণ মৌমাছি জেনারেল ইবরাহিম।

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর উপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি বইয়ের কয়েকটি তথ্যগত ভুলের কথা বললে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে যান। এবং বলেন জেনারেল সাহেব আগের মতই থেকে গেলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App