×

জাতীয়

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৫২ পিএম

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে

ছবি: ভোরের কাগজ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বক্তারা। বুধবার (৪ অক্টোবর) নির্বাচন কমশনে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ বলেন, একটা দেশের সরকার পরিবর্তন করা বা সরকারে থাকার জন্য একমাত্র আইনগত পদ্ধতি হচ্ছে স্বাধীনভাবে নির্বাচন করা। আর সেই নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। বর্তমান কমিশন প্রানন্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখনকার যে অবস্থা, প্রধান দুই দল দুই মেরুতে অবস্থান করছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে তাদেরকে একত্রিত করা বা কাছে আনার খুব একটা পদ্ধতি আছে বলে আমার মনে হয় না। নির্বাচন কমিশন যা করতে পারে, সুন্দরভাবে নির্বাচন করতে পারার প্রস্তুতি নেয়া, জনমনে এই ধারণা সৃষ্টি করে দেয়া যে, দলগুলো যেই অবস্থানে থাকুক জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। আপাতদৃষ্টিতে আমার মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ইসির প্রথম কাজ হচ্ছে নিবন্ধিত দলগুলো যেন নির্বাচনে আসে। বিভিন্ন কারণে কেউ নির্বাচনে আসতে চাচ্ছে, কেউ আসতে চাচ্ছে না। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সরাসরি কিছু করার নেই। নির্বাচন কমিশন সুন্দর ভোটের ক্ষেত্র তৈরি করে দেবে, ভোটাররা নিশ্চিন্তে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে- এই পরিবেশ তৈরির জন্য ইসির নেতৃত্বে দেশের যত সংস্থা আছে তারা কাজ করে যাবে। সেই সঙ্গে সরকার ইসিকে পূর্ণ সহযোগিতা করবে- এটাই ইসির চাহিদা হওয়া দরকার। নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়, শতভাগ স্বচ্ছ হয় না, ব্যালটবক্স ছিনতাই হয়- এসব ব্যাপারে ইসি পদক্ষেপ নেবে আশা করি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সবদলগুলো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং তাদের প্রার্থীর পক্ষে এজেন্টরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে নির্বাচনের অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। একইসঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। তাদেরকে জানিয়ে দিতে হবে, কোনো কর্মকর্তা অনিয়ম বা ভুল করলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাহলে কেন্দ্রের পরিস্থিতি অনেকটা ভালো থাকবে। একটা সুন্দর নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা দরকার। এজেন্টরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে নির্বাচন অনেকটা এগিয়ে যাবে। সাবেক ইসি কবিতা খানম বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবার আশঙ্কা আছে। সাধারণত: যত দলই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক না কেন, প্রধান বিরোধী দল অংশ না নিলে তা অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না বলে আমরা মনে করি। কিন্তু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার পরিবেশ দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন প্রথম থেকে সংলাপসহ বিভিন্ন আলাপ আলোচনা করে আসছে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল সেভাবে সহযোগিতা না করার কারণে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে কী না- সেই আলোচনা হচ্ছে। সব দলকে নির্বাচনে আনা রাজনৈতিক বিষয়, এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয়। নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে কবিতা খানম বলেন, সব সময় নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় দাড় করানো হয়। কারণ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজন করে। যদি নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে কোনো কারণে ব্যাহত হলে সেটার জবাবদিহিতা নির্বাচন কমিশনের কাছে করতে হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের যে অঢেল ক্ষমতার কথা বলা হয়, সেই জায়গায় আমার একটু আপত্তি আছে। কবিতা খানম বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে সুষ্ঠু নির্বাচন করার কমিটমেন্ট থাকতে হবে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে, সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে। জেসমিন টুলী বলেন, নির্বাচনে কমন অভিযোগ হচ্ছে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে, এজেন্টকে তুলে নেয়া হয়েছে, বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেছে। এসব অভিযোগে কেন করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখলে এই সমস্যা থাকবে না। তিনি বলেন, জানুুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনের ওই পরিবেশটা এখনও পাইনা। আমরা স্বীকার করি বা না করি বড় দুই দলের ভোট কাছাকাছি। একদল যখনই নির্বাচনে আসে না, তখন ইসি আপ্রাণ চেষ্টা করলেও সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা বা মোটামুটি মানসম্মতভাবে সম্পন্ন করা যায় না। এক্ষেত্রে নির্বাচনী পরিবেশ বলতে যা বুঝায় সেটা এখনও দেখা যাচ্ছে না। ২০১৪ সালের নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ওই কঠিন সময়ে প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছেছিল নির্বাচন কমিশন। ওই সময়ে থাইল্যান্ডেও নির্বাচন হয়। সেখানে বিশৃঙ্খলার কারণে সব কেন্দ্রে মালামাল পৌঁছাতে পারেনি সেদেশের কমিশন। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ওই রকম পরিস্থিতিতে ভোট আয়োজনের কোনো কাজ বাদ রাখেনি, সবকেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল পৌঁছাইছে। তারপরও নির্বাচনের ব্যর্থতার দায়ভার নির্বাচন কমিশনকে নিতে হয়েছে। কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নিলে, নির্বাচনের পরিবেশ সঠিক না থাকলে- সব দায়ভার ইসির কাঁধে এসে পড়ছে। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচনের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে, সেই দায়িত্ব পালনে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে আমরা সেগুলো চিহ্নিত করতে পারি। ওই প্রতিবন্ধকতা সমাধানে কি কি করতে পারি সেই পথ বের করতে পারি। আমি মনে করি সামনের নির্বাচনে কী কী প্রতিবন্ধকতা আছে তা চিহ্নিত করেছে। কবিতা খানম বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচন হয় তাহলে কমিশনের প্রথম কাজ হবে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাসহ সবাই যেন নিরপেক্ষ ভূমিকায় যেন তারা কাজ করে। তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে পারলে, কমিশনের যে নির্দেশনা দেবে তা তারা পালন করতে বাধ্য থাকবে। এই নিরপেক্ষ ভূমিকা কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা কী দেখলাম, রাজনৈতিক দল নির্বাচনে এসেছে, তাদের এজেন্টদের হয় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে নয় কেন্দ্র থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। কারা নিয়েছে, কে নিয়েছে... কথা বললে আসলে অনেক নেগেটিভ কথা চলে আসে। নেগেটিভ কথা না নিলে সমাধানের পথ খুঁজে পাবো না। আমরা চাই না দেশে আবার খারাপ একটি নির্বাচন হোক। দেশের স্বার্থে ভালো নির্বাচন করতে হবে। সিইসি কাজী হাবিবুর আউয়াল এর সভাপতিত্বে আজ এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সাবেক ইসি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. হারুন আর রশীদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App