×

জাতীয়

ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের রূপকার

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১৯ এএম

ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের রূপকার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের রূপকার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তার জন্ম। তার জন্মের সময় বঙ্গবন্ধু কলকাতায় ভারত ভাগের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দাঙ্গা প্রতিরোধ এবং লেখাপড়া নিয়ে মহাব্যস্ত। দাদা-দাদির স্নেহ-আশীর্বাদ নিয়ে তার জীবন শুরু হয়। দাদা শেখ লুৎফর রহমান তার নাম রাখেন ‘হাসিনা’। বঙ্গবন্ধু ডাকতেন ‘হাচুমনি’। বঙ্গবন্ধুর সেই আদরের নয়নমণি ছোট্ট ‘হাচুমনি’ একদিন বড় হয়ে বাংলাদেশের জনগণের প্রিয় নেত্রী হয়ে উঠলেন এবং ধীরে ধীরে বিশ্বনেত্রীর মর্যাদায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন।

১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ যান। নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার খবর পান। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার কোনো পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। তার স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়া ৯ মে ২০০৯ তারিখে ইন্তেকাল করেন। রতœগর্ভা শেখ হাসিনার জ্যেষ্ঠপুত্র সজীব ওয়াজেদ একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশারদ। তার একমাত্র কন্যা সায়মা ওয়াজেদ একজন মনোবিজ্ঞানী এবং তিনি অটিস্টিক শিশুদের উন্নয়নে কাজ করছেন। ’৭৫-এর পর ভারতে ৬ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে শেখ হাসিনা ’৮১-এর ১৭ মে দেশে ফেরেন আওয়ামী লীগের নতুন নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে। সেদিন থেকে বাংলাদেশ যেন নির্বাসন থেকে অস্তিত্বে ফিরল। ’৯১-এর নির্বাচনী বিপর্যয়ের পর শেখ হাসিনা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের মনের কথা উচ্চারিত হয়েছিল জননী সাহসিকা বেগম সুফিয়া কামালের কণ্ঠে। বেগম সুফিয়া কামাল তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ‘তোমাকে থাকতে হবে এবং বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে’। জনগণের প্রতি সম্মান রেখে শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল এবং বাংলাদেশের অর্জন এখন পুরো দুনিয়ার নজরকাড়া। নজর কেড়েছেন তিনিও।

বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ, যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার ইতিহাস। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। তার সাহসী এবং গতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কাঠামোগত রূপান্তর এবং উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। স্বাস্থ্য খাতেও অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে (১৬১ জন প্রতি লাখে)। শিশু মৃত্যুহার কমেছে (২১ জন প্রতি হাজারে)। বিপুল জনগোষ্ঠী ও সীমিত সম্পদ নিয়ে এ অর্জন যে প্রশংসনীয় ব্যাপার তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবাই স্বীকার করেন। স্বাস্থ্য খাতের এই অসাধারণ অর্জনের জন্য ৩টি জাতিসংঘ পুরস্কারসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত। সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড, এমডিজি অ্যাওয়ার্ড এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কোভিড-১৯ মহামারি মানুষের জীবন কেড়ে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবন-জীবিকাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে¦ বাংলাদেশ এ অবস্থা সফলভাবে মোকাবিলা করেছে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানোসহ কমপক্ষে ২০ বার তাকে হত্যা করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করবেন বলেই হয়তো মহান আল্লাহতায়ালা শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র এখনো তার পিছু ছাড়েনি। অদম্য সাহস, দৃঢ় মনোবল, সততা, নিষ্ঠা, মেধা-মনন, প্রজ্ঞা ও দক্ষতার বলেই তিনি আজ সফল রাষ্ট্রনায়ক থেকে হয়েছেন বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা।

ব্যক্তিজীবনে আমি খুব সৌভাগ্যবান! কারণ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাছ থেকে দেখার দুর্লভ সুযোগ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চাকরির সুবাদে বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীকে দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী খুব সহজ নিরাভরণ জীবনযাপন করেন। সাধারণ খাবার খান। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন তিনি। ভোরে কুরআন তেলাওয়াত করা তার প্রাত্যহিক রুটিন। তিনি নিজে ধর্মের অনুশাসন মানেন, ধর্মীয় বিধান পালন করেন। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ এমন বাংলাদেশ চান, যেখানে অসাম্প্রদায়িকতার বন্ধনে জীবনের জয়গান গাইবে মানুষ। গণমানুষের প্রতি তার ভালোবাসা অপরিসীম। বঙ্গবন্ধুকন্যা বঙ্গবন্ধুর মতোই তার ব্যক্তিত্বে ধারণ করেন দুস্থ মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা। ‘মানবতার জননী’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক গুণাবলি পেয়েছেন উত্তরাধিকার সূত্রে তার পিতার কাছ থেকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারই একটি মানবিক দৃষ্টিসম্পন্ন পরিবার, যারা সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন এ জাতিকে। মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, অসহায়ের প্রতি সংবেদনশীলতা বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঐতিহ্য।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে সাধারণ মানুষের আবেদনগুলো পড়ার সৌভাগ্য মাঝে মধ্যেই হয়। সেগুলো সুপারিশ আকারে তার কাছে পাঠালে তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সহায়তা অনুমোদন করেন। ছোট ছোট বিষয়ও তার দৃষ্টির বাইরে থাকে না। বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত দরিদ্র মানুষ চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী সমীপে আবেদন করলেই তিনি সাড়া দেন। অনেক ভাগ্যহত মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল তিনি অকাতরে সাহায্য করেন। দলমত, ধর্ম-বর্ণ কোনোকিছু বাছ-বিচার না করে তিনি সহায়তা দিয়েছেন এবং দিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কোনোদিন তার কাছ থেকে খালি হাতে ফেরেনি। একবার এক স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। চলচ্চিত্র পরিচালকের সন্তানরা এলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে, চাইলেন আর্থিক সহায়তা। তিনি কোন দলের সমর্থক তা চিন্তা না করেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিলেন প্রধানমন্ত্রী। এমনই মানবিক আমাদের প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা কেবল একজন রাষ্ট্রনায়ক কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের সভানেত্রী নন, তিনি বাংলার মানুষের কাছে একটি অনুভূতির নাম। একটি কথা বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বত্র প্রচলিত। সবাই বলে এবং বিশ্বাস করে বাংলাদেশে সবকিছু কেনা যায় শুধু শেখ হাসিনাকে ছাড়া। কথাটির যৌক্তিকতা খুঁজে পাই সাবেক সচিব এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সম্মানিত কিউরেটর মো. নজরুল ইসলাম স্যারের স্মৃতিচারণায়। ঘটনাটি সুধা সদনের। প্রধানমন্ত্রী তখন সবে বিরোধীদলীয় নেত্রী। একটি প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূত এসেছেন দেখা করতে। কথোপকথনের মাঝে খনি বিষয়ের কথা এসে গেল। রাষ্ট্রদূত যা বললেন তার অর্থ হলো যদি খনির ব্যাপারে সায় না দেন তবে ক্ষমতায় যেতে পারবেন না।

শেখ হাসিনা যা বললেন তার বাংলা অর্থ- ‘আমার বাপ বেইমানি করে যাননি, আমিও বেইমানি করতে পারব না’। এই কথা বলে ঘরের ভেতরে চলে গেলেন আর ফিরলেন না। ওই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আর কখনোই দেখা করেননি। এমনকি রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎকারেও না। সততার এমন পরাকাষ্ঠা আমাদের প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম আর সততার আদলে গড়ে ওঠা আমাদের প্রধানমন্ত্রী। দেশের জনগণকে ভালোবাসা তিনি শিখেছেন তার পিতার কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রীর কথায় এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়- ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) নেই। কিন্তু আমি তো আছি। যে দেশের জন্য, যে জাতির জন্য ৫৪ বছরের ২৫টি বছর তিনি অন্ধ কারাকক্ষের কড়িকাঠ গুনে গুনে অতিক্রম করে গেছেন প্রচণ্ড যৌবন কারাগারের উঁচু প্রাচীরের সীমানার মধ্যে। ফাঁসির রুজ্জুকে যিনি উন্নত মস্তকে ধারণ করতে এগিয়ে গেছেন বহুবার, শুধু এই জাতির জন্য। এ দেশের মানুষের জন্য! সেই মহান মানুষের ভালোবাসার জাতি আর মানুষই আমার কাছে তার বড় আমানত। আর সেই আমানতকে শিরোধার্য করেই আমি জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত থাকতে চাই সোচ্চার, এদেশের মানুষের অধিকারের প্রশ্নে, তাদের স্বার্থের প্রশ্নে।’

আজ বিশ্ব বিবেক শেখ হাসিনাকে বলে ‘মানবতার জননী, স্টার অব দ্য ইস্ট’। তিনি এখন বিশ্বনেত্রী। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পৃথিবীতে পরিচিত। দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে

নিয়ে যেতে ইতোমধ্যে তিনি ‘রূপকল্প ২০৪১’ ঘোষণা করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাহসিকতা, সততা, সৃজনশীলতা, মানবিকতা, আত্মত্যাগ, দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। ১৭ কোটি মানুষ এখন মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে তার হাতেই রয়েছে বাঙালি জাতির উন্নয়নের শিখরে পৌঁছার চাবিকাঠি। প্রধানমন্ত্রীর ৭৭তম জন্মদিনে গভীর শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রধান কাণ্ডারি তিনি। বর্তমানে বাঙালির শেষ আশ্রয়ের নাম শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্মদিনে সর্বান্তকরণে তার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয়তু শেখ হাসিনা।

ডা. মুহাম্মদ সারোয়ার হোসেন : জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App