নিরাপত্তার স্বার্থে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৫৬ পিএম
ছবি: ভোরের কাগজ
দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের এক দশমাংশ জায়গা। সম্পদের শক্তিশালী উৎস এ অঞ্চল। পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তর পূর্বে ভারত, মায়ানমার। অন্যদিকে মিজোরাম, মনিপুর। এই এলাকাগুলো অসহিষ্ণু অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। একে ঘিরে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পুরাতন পরিকল্পনা করছে। সুতরাং বাংলাদেশকে তার নিরাপত্তার জন্য, ভূখণ্ডের অখণ্ডতা জন্য, দেশের জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার জন্যই এ শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন জরুরি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর উপলক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন জাতীয় প্রেস ক্লাবে আজ বুধবার এ সভার আয়োজন করে। সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।
সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়ক জাকির হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- ঢাবি শিক্ষক মেসবাহ কামাল, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা দীপায়ন খীসা, ঐক্য ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম এ সবুর, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুল রশীদ ফিরোজ প্রমূখ।
সেইসঙ্গে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে যে বিরুধী পক্ষ রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করা উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের এক দীর্ঘ প্রেক্ষাপট রয়েছে।কিন্তু এই চুক্তি বাস্তবায়নে প্রথম বাধা আসে বিএনপির আমলে। চুক্তিবিরোধী শক্তি আগের চাইতে আরো সক্রিয় হয়েছে,ফলে পুরো পরিস্থিতি এক জটিল রূপ ধারণ করেছে। যার সমাধান অনেক জরুরি। এ চুক্তির বড় বিষয় ছিল বেসামরিকীকরণ। এখন উল্টো ঘটনা ঘটনা ঘটছে। সেখানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কথা বলে সামরিকীকরণ আরো বেশি করে হচ্ছে বলে আমার নিজের ধারণা।
তিনি বলেন, বর্তমানে সমতলের আদিবাসীদরাও সংকটে আছে। উত্তরাঞ্চলে তাদের উচ্ছেদ অভিযান চলছে।
তিনি আহ্বান জানান, সামনে নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী প্রচারের মধ্যে এ বিষয়গুলো নিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক সমাধানের ভিত্তিতে যে চুক্তি হয়েছিল, সেভাবে এ চুক্তি বাস্তবায়নে করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
মেসবাহ কামাল বলেন, বাংলাদেশ যে বহু জাতির দেশ, বহু সংস্কৃতির দেশ এটা অন্তত ফুটে উঠছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউ ৪১টি ভাষার খোঁজ পেয়েছে। আমরা আরডিসি থেকে ৪৩টি ভাষা পেয়েছি। ২০৩০ এর মধ্যে ভাষা সংখ্যা কমে যাবে আর ৫০ সালের মধ্যে কাউকে খুজে পাওয়া যাবে না। যেখানে এত ভাষা আছে, এত বৈচিত্র্য আছে সেটাকে আমরা এক জাতির রাষ্ট্র বানাতে চাচ্ছি। এটা চরম স্বৈরাচারিতা, অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দিক।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারো ১৯৯৭ আগের পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে বলে, এমন ধারণা করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমাধানের পথ ছিল এই চুক্তি। সেই সময় সরকার একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে এই চুক্তি বলিষ্ঠ ছিল। কিন্তু পঁচিশ বছরেরও এ চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি।
মতবিনিময় সভায় এ চুক্তি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ তুলে ধরেন অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম।
# সকল বাম-প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক দলসমূহকে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ আদিবাসী সম্পর্কিত নীতি ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
# প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ২০২৪ সনের সাধারণ নির্বাচনের নির্বাচনী ইশতেহারে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের উত্থাপিত ৫ দফা দাবিসহ সমতলের আদিবাসীদের দাবিগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
# রাজনৈতিক দল ও সহযোগী সংগঠন সমূহে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ আদিবাসী জনণের বিষয়ে একজন মুখপাত্র ও সাংগঠনিকভাবে সম্পাদকীয় পদ তৈরী করতে হবে।
# জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় সরকার পরিষদসমূহে সকলরে আদিবাসী মনোনয়ন প্রদান করতে হবে।