×

জাতীয়

সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া, অবস্থা স্থিতিশীল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:০৬ পিএম

সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া, অবস্থা স্থিতিশীল

চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া, অবস্থা স্থিতিশীল। পুরনো ছবি

‘লিভার সিরোসিস’সহ বেশকিছু শারীরিক জটিলতায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে হঠাৎ করেই খবর ছড়িয়ে পড়ে- খালেদা জিয়া জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- দলীয় প্রধানের শারীরিক অবস্থা আগের মতোই আছে। চিকিৎসকেরা তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া উয়িংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান বলেন, বিকেল ৫টায় ম্যাডামের (খালেদা জিয়ার) মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি জানিয়েছেন চেয়ারপারসন মেডিকেল বোর্ডের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। তার জন্য সাবইকে দোয়া করতে বলেছেন ড. জাহিদ’।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ জানতে চাইলে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম ভোরের কাগজেকে বলেছেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। গত কয়েকদিন যেমন ছিলেন তেমনই আছেন। মেডিকেল বোর্ডের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন’। তিনি বলেন, গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় যখন ম্যাডামকে দেখতে গেলাম; তার অবস্থা এতোটাই খারাপ দেখলাম যে- আমি অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম। তার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিলো। কখনো ভাবিনি তাকে এমন সংকাটাপন্ন অবস্থায় দেখতে হবে। হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার পর মনটা ভীষণ অস্থির হয়ে আছে।

বিএনপির এই স্থাস্থ্য সম্পাদক বলেন, সেরোটিক লিভোরের কারণে তার শরীরে নতুন বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এই উপসর্গগুলো পরীক্ষা করেই মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা আপাতত চিকিৎসা দিচ্ছেন। এই রোগের যেহেতু সঠিক কোনো চিকিৎসা দেশে নেই; তাই খালেদা জিয়াকে সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান ড. রফিক।

খালেদা জিয়া যে ধরনের মামলায় আটকে আছেন; এ ধরনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অনেকের বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার উদাহরণ আছে জানিয়ে ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, পূর্বে আমরা দেখেছি আ স ম আব্দুর রব কিংবা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অথবা সংসদ সদ্যস্য হাজী সেলিম আছেন, তারা চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার সুযোগ যদি সরকার প্রথম থেকে করতেন তাহলে তার এই অবস্থা হতো না।

কয়েক বছরে আটবার হাসপাতালে যেতে হলেও তার মূল ঝুঁকি এখন লিভার নিয়ে। সিরোটিক লিভারের কারণে তার ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসে, বমি হয়, তেমন কিছু খেতে পারছেন না। চিকিৎসকেরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ রেখেছেন বিএনপি প্রধানকে। বিএনপির চিকিৎসক নেতারা বলছেন, দুই বছর আগে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী বিদেশে নেয়া গেলে অবস্থা এমন ঝুঁকিপূর্ণ হতো না। বিদেশে নেয়া ছাড়া সম্পূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা সম্ভব নয় খালেদা জিয়ার।

ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ বলেন, সম্ভব হলে আজকেই বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশ নেয়া উচিত। প্রত্যেকটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ। লিভারকে অ্যাড্রেস করলে কিডনি খারাপ হয়, কিডনি অ্যাড্রেস করলে ব্লাড প্রেশারের সমস্যা হয় অথবা হার্টের সমস্যা হয়। প্রতি মুহূর্তে তার অবস্থা ঝূঁকিপূর্ণ।

বিএনপি বলছে, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খালেদা জিয়া। তার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি জানিয়ে দলটির দাবি- দলের নেত্রীকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি সেন্টারে’ পাঠানো দরকার। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে এবার চলমান একদফা দাবির সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি যুক্ত করে রাজপথে আন্দোলন করছে বিএনপি। এই দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা নেতারাও প্রতিটি সভা সামাবেশে খালেদা জিয়ার মুক্তির জোর দাবি জানানো হচ্ছে।

গত রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের প্রতি আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছেন, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা তার কিছু হলে সকল দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। তবে ৪৮ ঘন্টা পার হলেও দলের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।

অন্যদিকে, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশ নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদনের প্রয়োজন হতে পারে। তবে সেটা আইনমন্ত্রী ভালো জানেন।

অন্যদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য- ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়ার দণ্ড শর্তযুক্তভাবে স্থগিত করা হয়েছিল। তাই তাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে আইনের অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই।

৭৮ বছর বয়েসী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার, ফুসফুস, কিডনি জটিলতাসহ হৃদরোগ, ডায়াবেটিক সহ নানা রোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন যাবত। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডাম অত্যন্ত অসুস্থ। প্রায়ই তার অবস্থার অবনতি হলে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নেয়া হচ্ছে।

অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয় গঠিত মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিচ্ছেন। গত ৯ আগস্ট গুলশানের বাসা ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরে নির্বাহী আদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন ২০২০ এর ২৫ মার্চ। এরপর ধারবাহিক বিরতিতে হাসপাতাল আর বাসায় যাওয়া আসা করতে হয় বিএনপি নেত্রীকে। এরমধ্যে কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন খালেদা জিয়া। ডায়াবেটিস, আর্থাইটিস, কিডনি, লিভারসহ নানা রোগ ও জটিলতায় তাকে সবসময়ই চিকিৎসকের নজরদারিতে থাকতে হয়।

এছাড়া, ২০২১ এর ২৫ অক্টোবর তার শরীরে অস্ত্রোপচার হয়। দীর্ঘ ৮১ দিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর বাসায় ফেরেন ২০২২ এর ১ ফেব্রুয়ারি। এরপর তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডও বিদেশে চিকিৎসার বিকল্প নেই বলে জানায়। সবশেষ গত ৯ আগস্ট থেকে হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App