×

জাতীয়

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের বিষয়টি ভাবছে সরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৫০ পিএম

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের বিষয়টি ভাবছে সরকার

যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে ররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ছবি: ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, নিউইয়র্ক থেকে

আওয়ামী লীগ সরকার ফের ক্ষমতায় আসলে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ণের বিষয়টি দেখবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নেই দাবি করে তিনি বলেন, টুকটাক কিছু ঘটনা ঘটলেও এর বিচার হয়।

নিউইয়র্কের ম্যানহাট্টনে হোটেল মিলেনিয়াম হিলটনে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে এক আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এই সভায় সংগঠনের তিন সভাপতি অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত, ড. টমাস দুলু রায় ও রণবীর বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক ড. দ্বিজেন ভট্টাচার্য্য এবং উপদেষ্টা ড. দিলীপ নাথ ছাড়াও যোগ দেন জগন্নাথ হল এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শ্যামল চক্রবর্তী এবং ইন্টারন্যাশন্যাল মতুয়া মিশন অফ নিউইয়র্কের সভাপতি ও জগন্নাথ হল এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুশীল সিনহা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়ে তারা বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু তা না হওয়ায় একের পর এক ঘটনা ঘটছে।

২০১১ সালে সংখ্যালঘু নির্যাতককে শনাক্ত করে সাহাবুদ্দীন কমিশন যে তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছিল তাদের বিচারকার্য এখনও শুরু না করায় গভীর হতাশা ও বিষ্ময় প্রকাশ করে নেতারা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেতার পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্রধর্ম আইন পাশ করাসহ ধর্মীয় মৌলবাদীদের সকল দাবি-দাওয়াই মেনে নিয়েছে এবং সেটা করা হয়েছে সেক্যুলার ডেমোক্র্যাসি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সম-নাগরিক অধিকার ও জীবনের নিরাপত্তার বিনিময়ে’ দাবি করা হয় বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নেই, সকলেরই সেখানে সমান অধিকার রয়েছে, কিন্ত বাস্তবতা তো এর ঠিক বিপরীত। সংখ্যালঘু নাগরিকদের প্রতি সরকারের এই বৈষম্যমূলক আচরণে উৎসাহিত হয়ে এবং সংখ্যালঘু নির্যাতকদের কোনো বিচার না হওয়ায় প্রশ্রয় পেয়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা সংখ্যালঘুদের ভূসম্পত্তি ও বাড়িঘর দখল করে নিযে, দেবালয়-দেবদেবীর মূর্তি ধ্বংস করে দিয়ে, উচ্ছেদ, ধর্ষন, বিভিন্নভাবে ধর্মান্তরিত করাসহ বর্বর অত্যাচার করে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করছে সংখ্যালঘু নাগরিকদের।

তারা মন্ত্রীকে বলেন, এই নির্মম পরিণতি ঠেকানো সরকারের দায়িত্ব ও নৈতিক কর্তব্য, বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা যখন ক্ষমতায় আসীন। ইতিমধ্যেই দেশে দুর্গা প্রতিমা ধ্বংস করা শুরু করেছে সেটা উল্লেখ করে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন, ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী হয়তো আবারও ২০২১ সালের মত পুজোয়ও হিন্দু সম্পদায়ের ওপর আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই বলে তারা মন্ত্রীকে এ ব্যাপারে ২০২২ সালের মত সরকারকে শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করতে অনুরোধ জানান।

নেতারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, এই সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের একমাত্র পথ একটি কঠোর সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন অবিলম্বে পাশ করে এর প্রয়োগ শুরু করা। বিচার এবং কঠোর শাস্তির ভয় থাকলে, সরকার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীলতার নীতি অবলম্বন করলে এই মানবতা বিরোধী অশুভ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে দাবি করে, নেতারা সংসদে সরকারী দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সদ্ব্যবহার করে বর্তমান সংসদের এই শেষ অধিবেশনেই সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনটি পাশ করে দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকদের সুরক্ষার স্থায়ী ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানান।

নেতারা মন্ত্রীকে বলেন, সংসদের অক্টোবর অধিবেশনে একটি সংখ্যালঘু কমিশন বিল পাশ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে ঢাকায় গণ-অনশনরত সংখ্যালঘু নেতারা অনশন প্রত্যাহার করানো ব্যাপারটাকে তারা এক নিষ্ঠুর পরিহাস বলে উল্লেখ করেন, কারণ জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন শুধু নির্যাতনের কাহিনী লিপিবদ্ধ করতে পারবে, যা মিডিয়া, বিশেষ করে সোসাল মিডিয়াও করে; এই কমিশন না পারবে ত্বরিৎ গতিতে ঘটনার তদন্ত করে, আসামীকে গ্রেফতার করার জন্য র‌্যাবকে নিয়োগ করাতে, না পারবে দুর্বল নির্যাতিত সংখ্যালঘু নাগরিকদের পক্ষে নিজে বাদী হয়ে মামলাও রুজু করে, দ্রতগতিতে বিচার ও রায় প্রদানের ক্ষমতা সম্পন্ন আদালতে অপরাধীর বিচার ও শাস্তি বিধানের নিশচয়তা দিতে। কাজেই ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রতিশ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ সংখ্যালঘু সুরক্ষা এ্যাক্ট বিল পাশ না করে শুধু এর একটি ধারা বা উপ-আইন অর্থাৎ সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা আদৌ কিছু না করার শামিল- এটা ধর্মীয় মৌলবাদী ও উগ্রপন্থী সংখ্যালঘু নির্যাতকেদের আবারও নিশ্চিতভাবে ইঙ্গিত দেবে যে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অপরাধে কারও বিচার/শাস্তি হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App