×

জাতীয়

নিবিড় পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৫৩ পিএম

নিবিড় পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া
নিবিড় পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া

লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২ মাস ধরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এভায়কেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনেই চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন তিনি।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে একথা জানান। তিনি বলেন, ম্যাডাম অত্যন্ত অসুস্থ্য। গতকাল শুক্রবার তার অবস্থার অবনতি হলে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নেয়া হয়েছিলো। বিকালের দিকে তার শারীরিক অবস্থা স্টেবল হলে আবার কেবিনে নিয়ে আসা হয়। এখন কেবিনে সিসিইউ সেটআপে চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক নিবিড় অবজারভেশনে তিনি আছেন।

৭৮ বছর বয়েসী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার, ফুসফুস, কিডনি জটিলতাসহ হৃদরোগ, ডায়াবেটিক প্রভৃতি রোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন যাবত।

অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিসকদের সমন্বয় গঠিত মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিচ্ছেন।

গত ৯ আগস্ট গুলশানের বাসা ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

খালেদা জিয়ার জীবন সংকটাপন্ন জানিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসছেন বিএনপির নেতাকমীরা। গতকাল শুক্রবার এক সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে যখন তার (খালেদা জিয়া) জীবন-মরণ সমস্যা… তখন তাকে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন বন্দি নন, এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক নম্বর নেত্রী…..। একবার নয় তিন বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, দুইবার বিরোধী দলীয় নেত্রী। এখনো কারাগারে থেকেও এই অসুস্থবস্থায় এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন। এই নেত্রীকে আজ তারা বন্দি রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, দেশনেত্রীর যদি সুচিকিৎসা না হয়, তাকে যদি বিদেশে পাঠানো না হয় চিকিৎসার জন্য আরো অবনতির দিকে যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ড তাদের প্রতিবেদনে অবিলম্বে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রেরণের সুপারিশ করেছেন। তারা বলেছেন, ম্যাডামের লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সেজন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।

সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তি শর্তাবলীতে বিদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকায় খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো যাচ্ছে না।

এদিকে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে আজ শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে প্রেরণের বিষয়ে আমার কাছে কোনো আবেদন আসেনি। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। এরপর আমাদের কাছে মতামত চাওয়া হবে।

আইনমন্ত্রী বলেন, উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে প্রেরণের বিষয়ে আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হবে। এরপর আইন মন্ত্রণালয় বিষয়টি কাগজপত্রের আলোকে ভেবে দেখবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেয়া যায় কিনা।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি হয়েও এখন যে মুক্ত হয়ে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন সেটাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় ও মহানুভবতায়। বিএনপির হরতাল কর্মসূচির হুংকার বিষয়ে সাংবাদিকদের পশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ আইন ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আইনি কোনো সুযোগ নেই। তবে বিএনপি নেত্রীর মুক্তির আগের বাড়ানো মেয়াদ আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে একই শর্তে মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে।

আবেদনে বিদেশে নেয়ার বিষয়টি ছিল- এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, আবেদনে বিদেশে নেয়ার বিষয়টি ছিল। কিন্তু সেই বিষয়ে আইনি কোনো সুযোগ নেই। আইনি সুযোগ থাকলে আমরা বিবেচনা করতাম।

খালেদা জিয়ার পরিবার ফের আবেদন করবেন কিনা? জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতি মাসেই সরকারের কাছে আবেদন করছি। গত মাসেও পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট করেই উল্লেখ করা আছে যে, ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হোক। তিনি বলেন, তারপর ওনারা যদি ম্যাসেজ দেয়, মনোভাব যদি ইতিবাচক হয়, তাহলে আমাদের জানালে আমরা আবারও আবেদন করব। কারণ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের এখন চিকিৎসা প্রয়োজন।

আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার ব্যপারে ফের আবেদন করা হবে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ভোরের কাগজকে বলেন, কয়েকদিন আগেই পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতেই ম্যাডামের মুক্তির মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। এখন আবার নতুন করে আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে দুটি শর্তে সরকারের নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল ২০২০ সালের ২৫ মার্চ। তখন করোনা মহামারির মধ্যে তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। যে দুটি শর্তে নির্বাহী আদেশে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে, তার প্রথমটি হলো তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। দ্বিতীয় শর্তটি হলো- তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App