×

জাতীয়

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতে ঐক্য পরিষদের গণঅনশন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:২৫ পিএম

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতে ঐক্য পরিষদের গণঅনশন

ছবি: ভোরের কাগজ

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতে ঐক্য পরিষদের গণঅনশন
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতে ঐক্য পরিষদের গণঅনশন
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতে ঐক্য পরিষদের গণঅনশন
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতে ঐক্য পরিষদের গণঅনশন

# প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকার পদক্ষেপ নেবেন আশাবাদ রাণা দাশগুপ্তের # দুর্গাপূজা চলাকালে রাজনৈতিক দলগুলোকে কর্মসূচি না দেয়ার অনুরোধ

সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু বান্ধব অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি চলছে।

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচিতে অংশ নিতে ভোর থেকেই জড়ো হতে থাকেন ধর্মীয় ও জাতীগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা ও কর্মীরা। ৪৮ ঘণ্টার এই কর্মসূচি শেষ হবে রবিবার ভোর ৬ টায়।

কর্মসূচি শুরুর পর সকালে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনসমূহের ঐক্যমোর্চার প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত। এসময় তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম ২০২১ সালের মধ্যে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিবে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত না হওয়ায় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে আমরা দাবি আদায়ে পর্যায়ক্রমে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছি। আন্দোলনের পাশাপাশি ঐক্য পরিষদ সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায়ও বসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ারের সাথে ইতোমধ্যেই বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে আমাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের আশ^াসও তারা দিয়েছিলেন। কিন্তু এ পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।

শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে সরকার, প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানদের উদ্দেশ্যে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, অক্টোবরে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলা শুরু হয়ে গেছে। এই ভাঙচুর করতে গিয়ে একজনকে ধরা হলেও পরে বলা হয় ওই ব্যক্তি পাগল। অতীতেও এই ঘটনায় হামলাকারীকে ধরার পর বলা হয় হামলাকারি পাগল। এমন ঘটনা যাতে না ঘটে এর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আমরা সাক্ষাৎ করে বৈঠক করেছি। একটি কথা আবারও বারবার বলছি। আবারও বলতে চাই, নির্বাচন পূর্বাপর অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য সুখকর নয়। আমরা ২০০১ থেকে ২০০৬ দেখেছি। ১৯৯১ সালের নির্বাচন পূর্বাপর এবং ১৯৯০ সালে অক্টোবর মাসের ঘটনা আমরা ভুলি নাই। আমরা এগুলোকে ভুলতে পারিনা। এই সময় রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়েছে। আর ২০১১ সালের পর থেকে যা চলছে সেগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক সহিংসতা। একাত্তরের পরাজিত শক্তি এই সহিংসতার সাথে যুক্ত। আবার সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বর্ণচোরা লোকেরা এই সহিংসতার সাথে যুক্ত হয়েছে। এসব কথাই আমরা শুধুমাত্র মাঠে বলেছি তা নয়। সরকার, প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপে আমরা বলিষ্ঠভাবে আমাদের এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। আমাদের গণঅনশন ও গণ অবস্থান কর্মসূচি রবিবার ভোর ৬ টায় শেষ হবে। এর পরেই ৬ই অক্টোবর আমরা মহাসমাবেশ করবো।

আসন্ন দুর্গাপূজা চলাকালে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, আগামী অক্টোবরে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু। এই শারদীয় দুর্গাপূজা চলাকালে কোন রাজনৈতিক দল কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি দয়া করে নিবেন না, যাতে এ বিষয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং পূজারীরা কোনভাবে শঙ্কিত হয়। যারা আমাদের এই আহবানে সাড়া দেবেন আমরা তাদের বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই। আর সাড়া না দিলে আমরা এটুকুই বলবো ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তারা অন্তরায় সৃষ্টি করছে।

সকাল থেকে শুরু হওয়া ঐক্য পরিষদের এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের নেতারা সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখছেন। বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি ঐক্য পরিষদের দাবির সাথে একাত্ম প্রকাশ করে সংসদে এ বিষয়ে তার মত তুলে ধরবেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব বেশ কিছু অঙ্গীকার করে। এর মধ্যে ছিলো- সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু বিষয়ক জাতীয় কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন প্রণয়ন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন। কিন্তু আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমাগত হলেও এখনও পর্যন্ত বিগত নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়ন করেনি সরকার। এই প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ, দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন, সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোডমার্চ করে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ এবং দেশব্যাপী মশাল মিছিল কর্মসূচি ইতিমধ্যেই পালন করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের বিভিন্ন দিনে দেশের বিভাগভিত্তিক জেলা ও মহানগর পর্যায়ে সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি চলছে। আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনাও চালিয়ে যায় ঐক্য পরিষদ। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ারের সাথে বৈঠক করা হয়েছে।

৪৮ ঘণ্টার এই কর্মসূচিতে ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, ছাত্র ঐক্য পরিষদ, যুব ঐক্য পরিষদ, মহিলা ঐক্য পরিষদ, আইনজীবী ঐক্য পরিষদ, শিক্ষক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার অন্তর্ভুক্ত সংগঠনসমূহের নেতারাও বক্তব্য রাখবেন। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার চট্টগ্রাম বিভাগের ১২ জেলা ও ১ মহানগরে এবং বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা ও ১ মহানগরে ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এবং রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলায় সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। অনুরূপভাবে বরিশাল বিভাগের বরিশাল মহানগর, বরিশাল জেলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা ও ঝালকাঠী জেলায় কর্মসূচি পালিত হবে।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলা ও ২ মহানগরে। ঢাকা বিভাগের ঢাকা জেলা, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, গাজীপুর জেলা ও মহানগর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলা ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে এদিন কর্মসূচি পালন করা হবে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App