×

জাতীয়

ছাদ থেকে পড়ে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪১ এএম

ছাদ থেকে পড়ে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

কাজী ফিরোজ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হল থেকে পড়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শিক্ষার্থীর নাম কাজী ফিরোজ। তিনি চাইনিজ ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কালচার বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষবর্ষের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। থাকতেন হলের ২০৩ নাম্বার রুমে৷ তাঁর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়।

কাজী ফিরোজের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় মেডিকেলে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিজয় একাত্তর হলের যমুনা ব্লকে রাত পৌনে ১ টার সময়ে কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পায় শিক্ষার্থীরা। পরবর্তী সময়ে একজনকে পড়ে থাকতে দেখেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা সহপাঠীদের। কাজী ফিরোজের পাশের রুমে থাকেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ বলেন, আমি রাত ১২টার সময় ওর বেডেই শুয়ে ছিলাম। সেও রুমে ছিল তখন। এদিক সেদিক পায়চারী করছিল। সে আমাকে বলে, ‘বন্ধু, তোর মোবাইলটা একটু দে। আমি একটা জায়গায় ফোন দিব।’ এরপর সে আমার মোবাইল নিয়ে কোনো একটা নম্বরে ফোন দেয়। একটু পরে আমাকে ফোন ফেরত দিয়ে দেয়। পরে আমি ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে রুম থেকে বের হয়ে চলে আসি।

কাজী ফিরোজের আরেক বন্ধু আবদুল্লাহ বলেন, কবি জসিমউদদীন হল মাঠে আনুমানিক রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। অনেকদিন পর দেখা হওয়ায় কুশল বিনিময় করলাম। পরে সে আমার মোবাইল নিয়ে কাকে যেন ফোন দিয়েছিল। তখন তাকে ডিপ্রেসড মনে হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর সে আমার মোবাইল ফেরত দিয়ে দেয়। পরে আমি চলে আসি।

ফিরোজের এক রুমমেট বলেন, রাত ১০টার পরে সে রুমে আসে। তার জন্য তার টেবিলে খাবার রাখা ছিল। আমি তাকে বলি, খাবার তো নষ্ট হয়ে যাবে। খাবার খেয়ে নে। সে বলে, খামু। এরপর সে অযু করে এসে নামাজ পড়েছে। নামাজ শেষে সে তার টেবিলে বসলো। আমরা ভেবেছি, সে হয়তো পড়তে বসেছে। এরপর আমরা রুমের লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়ি। এরপর সে বের হয়ে যায়। এ সময় তার বেডমেট জিজ্ঞেস করলো, কই যাস? তখন সে বলে আসতেছি।

‘এর অল্প সময় পর আমরা খবর পাই, বিজয় একাত্তর হল থেকে কেউ একজন নিচে লাফ দিছে। এটা শুনার সঙ্গে সঙ্গে আমি শোয়া থেকে ওঠে পড়ি। যেহেতু ফিরোজ শেষ কিছুদিন ধরে একটু ডিপ্রেসড ছিল, তাই আমি সবাইকে বলি, ফিরোজ কই? দেখি, রুমে ফিরোজ নেই। এরপর আমরা সবাই দৌড় দিয়ে বিজয় একাত্তরের সামনে আসি। তৎক্ষণে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আমরা হাসপাতালে এসে দেখি, ফিরোজই।’

ফিরোজের বেডমেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমি লাইব্রেরি থেকে যখন রুমে আসি এর কিছুক্ষণ পর ফিরোজ রুমে আসে। সাড়ে ১০টার দিকে সে সবাইকে বলছে, তোরা কেউ আমার কাছ থেকে কোনো টাকা পাস কি-না বল। এমনকি দুই টাকা হলেও বল। আমি দিয়ে দিতে চাই। পেলে এখনই বল। এর কিছুক্ষণ পর সে মানিব্যাগ এবং মোবাইল রেখে রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল। তখন আমি বলি, কই যাচ্ছিস? সে বলে আমি একাত্তর হলে যাচ্ছি, একটু কাজে। এরপর আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি। মাসুম জানান, তার জন্য রাখা খাবারটা সে অল্প একটু খেয়েছে। বেশিরভাগ খাবারই সে রেখে দিয়েছিল।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, "এখন পর্যন্ত যতটুকু এভিডেন্স আমাদের কাছে আছে, এটা একটা সুইসাইড। কারণ তার সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে। সে যখন রুম থেকে বের হয়েছে, তার মোবাইল, মানিব্যাগ, সুইসাইড নোট রুমে রেখে এসেছে।"

জিয়াউর রহমান হলের ২০৩ নাম্বার রুমে কাজী ফিরোজের লেখা একটি ডায়েরি পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল, ‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। আমার মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ।’

এ লেখার নিচে মাঝ বরাবর লেখা, ‘ফিরোজ।’ এর নিচে লেখা হয়েছে, ‘রাত: ১১টা ৩।’

পৃষ্ঠার বাকি অর্ধেকে আরও লেখা আছে, ‘আমার ওয়ালেটের কার্ডে কিছু টাকা আছে। বন্ধুদের কাছে অনুরোধ রইল মায়ের হাতে দিতে। কার্ডের পাসওয়ার্ড ৮০৭৯, আর ফোনের লক খুলে দিয়ে গেলাম। আমার লাশের পোস্টমর্টেম না করে যেন বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কোনোরূপ আইনি ঝামেলায় কাউকে যেন জড়ানো না হয়। সবাই বাঁচুক। শুধু শুধু পৃথিবীর অক্সিজেন আর নষ্ট করতে চাই না।’

এই লেখার নিচে আবারও লেখা, ‘ফিরোজ।’ এর নিচে লেখা হয়েছে, ‘রাত ১১টা ৫।’

কাজী ফিরোজের কয়েকজন সহপাঠী জানান, কিছুদিন থেকেই সে টেনসনে থাকতো। সাম্প্রতিক সময়ে প্রেমঘটিত কারণে সে চুপচাপ থাকতো বেশি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App