×

জাতীয়

এসির ব্যাপক ব্যবহারে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

Icon

এস এম মিজান

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৭ পিএম

এসির ব্যাপক ব্যবহারে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

এসির ব্যাপক ব্যবহারে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। প্রতীকী ছবি

প্রখর রোদের ঝলকানিতে বেড়েছে গরমের তীব্রতা। পৃথিবীব্যাপী ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে তাপমাত্রা। এর মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা অন্যতম। চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল ৫৮ বছরের মধ্যে ঢাকার তাপামাত্রা ছিল সবচেয়ে উত্তপ্ত। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে- ওইদিন বেলা তিনটা পর্যন্ত ঢাকার তাপমাত্রা উঠেছে সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় গরমের আঁচ আরো বেশি অনুভূত হয়। গরম থেকে আরাম পেতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে মানুষ। আর মানুষের এই আরামের জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে পৃথিবীকে। এসি ঘরকে ঠাণ্ডা করলেও বাইরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া এসির রাসায়নিক উপাদান ক্লোরোফ্লোরো-কার্বন (সিএফসি) অথবা হাইড্রো-ক্লোরোফ্লোরো-কার্বন (এইচসিএফসি) নামের রাসায়নিক বাতাসে ছড়িয়ে ওজোন স্তরের ক্ষয় বৃদ্ধি করছে, যা গণপরিবেশ ধ্বংসের অন্যতম কারণ।

গরম বেশি পড়লে দেশের সবখানে গরম নিয়ে আলাপ শুরু হয়। ফ্যান ছাড়লে গরম বাতাস টের পাওয়া যায়। খুব গরম পড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গরম নিয়ে শোরগোল শুরু হয়। কিন্তু শরৎকালেও গরম থেকে নিস্তার নেই। মাঝেমধ্যেই বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি ঝরলেও মিলছে না স্বস্তি। বৃষ্টির সময়ও ঝরছে ঘাম।

বিজ্ঞানীরা বলছেন- সিএফসি ও এইচসিএফসি একটি গ্রিনহাউজ গ্যাস হিসেবে কার্বন ডাইঅক্সাইডের চাইতে কয়েক হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী এবং এটার উচ্ছেদ বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এক হিসেবে দেখা গেছে- প্রতিবছর এই সিএফসি ও এইচএফসির চাহিদা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। এমন বাস্তবতায় এবার বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ওজোন দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘মন্ট্রিল প্রটোকল বাস্তবায়ন করি-ওজোন স্তর রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করি।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ওজোন স্তর নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, ওজোন স্তর ক্ষয় হলে মানুষের বিভিন্ন রকমের কাশি, গলা জ্বালা, বুকে ব্যথা, এজমা, ক্যান্সার এসব হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ওজোন উদ্ভিদের গ্যাসীয় আদান-প্রদানকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ হ্রাস করে এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। তিনি বলেন, দুই ধরনের ওজোন রয়েছে। একটি খারাপ ওজোন যা ভূপৃষ্ঠে থাকে এটিকে গ্রাউন্ড লেভেল ওজোন বলা হয়। অপরটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার থাকে যা ওজন স্তর বা ওজোনস্ফিয়ার নামে পরিচিত। এটিকে ভালো ওজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মহাশূন্যের এই ওজোনস্তর সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মিকে পৃথিবীতে প্রবেশ থেকে বাধা সৃষ্টি করে। ওজোন গ্যাস একটি স্বল্প আয়ুর জলবায়ু দূষক হিসেবে পরিচিত এবং এটি একটি অন্যতম বায়ু দূষক। বায়ুতে ওজোন গ্যাসের উপস্থিতির তারতম্য একদিকে যেমন বায়ুমান খারাপ করে, অপরদিকে এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটও তৈরি করে।

অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা ভোরের কাগজকে বলেন, ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে জলজ ফ্লাইটোপ্লাঙ্কটন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যা ইকোসিস্টেমের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। জীববৈচিত্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে এবং কিভাবে ওজোন স্তরকে রক্ষা করা যায় সেটি গবেষণার মাধ্যমে নির্ণয় করার চেষ্টা করতে হবে।

ক্যাপসের গবেষক ইঞ্জিনিয়ার মারজিয়াত রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, পরিবেশটা আমাদের তাই নিজেদের জন্যই পরিবেশ রক্ষা করতে হবে, ওজোন স্তরের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শুধু বাংলাদেশেরই নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তাই আমাদের শপথ করতে হবে, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সিএফসি গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমরা ওজোন স্তরকে রক্ষা করব।

জানা যায়- ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী দ্রব্যগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করার জন্য ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় ওজোনস্তর ধ্বংসকারী পদার্থের ওপর মন্ট্রিল প্রটোকল গৃহীত হয়। এই দিনের স্মরণে ১৯৯৪ সালে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৬ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক ওজোন স্তর সুরক্ষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে এই মন্ট্রিল প্রটোকলে স্বাক্ষর করে। এরপর থেকে বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। ওজোন স্তরের ক্ষয় ও এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা তৈরির জন্য ১৯৯৪ সালে প্রথম দিবসটি পালন করা হয়। একই বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৬ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক ওজোন স্তর সুরক্ষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে প্রতি বছর ওজোন স্তর সুরক্ষা দিবস পালন করে আসছে গোটা বিশ্ব।

বিজ্ঞানীদের মতে, ওজোন স্তর (ওজোন লেয়ার) হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের এমন একটি স্তর, যেখানে তুলনামূলকভাবে বেশি মাত্রায় ওজোন গ্যাস থাকে। এই স্তরে থাকে প্রধানত স্ট্র্যাটোমণ্ডলের নিচের অংশে, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০-৩০ কিলোমিটার ওপরে অবস্থিত। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে পৃথিবীকে নিরাপদ রাখতে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App