×

জাতীয়

ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধি গ্রাহক স্বার্থ বিরোধী, প্রত্যাহার করতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৩ পিএম

ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধি গ্রাহক স্বার্থ বিরোধী, প্রত্যাহার করতে হবে

প্যাকেজ সংখ্যা কমানোর নামে স্বল্প মেয়াদী প্যাকেজ তুলে দেয়া হলে তা গ্রাহকের প্যাকেজ বেছে নেয়ার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করবে, গ্রাহকের ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বৃদ্ধি করবে, অন্যদিকে তা নির্দিষ্ট মোবাইল অপারেটরের ব্যবসা বৃদ্ধি করে বাজার প্রতিযোগিতার সাম্যাবস্থা নষ্ট করবে। গ্রাহক স্বার্থবিরোধী এমন সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে স্বল্প আয় ও প্রান্তিক গ্রাহকদের ব্যবহৃত স্বল্প মেয়াদি ও স্বল্প মূল্যের ইন্টারনেট প্যাকেজ বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গ্রাহক সমাবেশে এম মতামত দেন বক্তারা। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।

বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বক্তব্যে বলেন, বাজারে গিয়ে জনগণ যদি দেখে এক কেজির নিচে কোন বাটখারা নেই, তাহলে তারা পণ্য কিনবে কিভাবে। ঠিক একই ভাবে ৩ দিন মেয়াদী প্যাকেজ বাতিল করে সাধারণ মানুষকে ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত করা জনস্বার্থ বিরোধী।

আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় তরুণ সংঘের চেয়ারম্যান ফজলুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী রিচার্জ এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলু, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিন্টু, গ্রীণ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ খান, এনডিএম’র সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন নুরুজ্জামান হীরা, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য শাজাহান খান, ডা. আমিনুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক শেখ ফরিদ প্রমুখ।

মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মোবাইল অপারেটরদের ব্যবসা বাড়ানোর হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সরকার, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো একজোট হয়ে কাজ করছে। বর্তমান যুগের বাস্তবতায় মোবাইল ইন্টারনেট এখন কোনো বিলাসী পণ্য-সেবা নয়, বরং খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের মতো এটিও একটি মৌলিক পরিষেবা হয়ে উঠেছে। অথচ নানা সময় বিভিন্ন ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে সরকার অথবা সেবাদাতা মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো মোবাইল ইন্টারনেটের দাম বাড়িয়েছে । যেখানে অপারেটরদের এ হেন অশুভ তৎপরতা রুখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির এগিয়ে আসার কথা সেখানে উল্টো মোবাইল ইন্টারনেটের দাম বাড়াতে তারা যেন অপারেটরের সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, সরকার যখন 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ১, ২ অথবা ৩দিন মেয়াদের মতো স্বল্প মেয়াদী ইন্টারনেট প্যাকেজ বাদ দিয়ে প্যাকেজ সংখ্যা কমিয়ে পরোক্ষভাবে ইন্টারনেটের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যা এই পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গত ৩ সেপ্টেম্বর জারি করা এক নির্দেশনায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল অপারেটরদের ১৫ অক্টোবর থেকে ৩ ও ১৫ দিন মেয়াদি ইন্টারনেট ডেটা প্যাকেজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। কিসের ভিত্তিতে এমন গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বিটিআরসি নিলো সেটি আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। কারণ, বিটিআরসির নিজস্ব জরিপেই উঠে এসেছে, মানুষ প্যাকেজ বেছে নেয়া স্বাধীনতা চায়। যেখানে অপারেটর ভেদে বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ গ্রাহক ৩ দিন বা তারও কম মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করেন সেখানে এই সিদ্ধান্তকে গণবিরোধী ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়।

টেলিযোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞ ও মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, এর মাধ্যমে একদিকে ভোক্তাদের পছন্দের স্বাধীনতা সীমিত করা হবে, অপরদিকে এই উদ্যোগটি তৃণমূল, নিম্ন-আয়ের ও তরুণদের ওপর ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বৃদ্ধি করবে । ফলত, টেলিযোগাযোগ পরিষেবা, বিশেষত মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার কমে যাবে। আমরা মনে করি, প্রত্যেক গ্রাহকের নির্দিষ্ট প্যাকেজ বেছে নেওয়া স্বাধীনতা থাকা উচিৎ। অপারেটরদের বর্তমানে ৯৫ ধরনের প্যাকেজ আছে, যার মেয়াদ এক ঘণ্টা থেকে শুরু করে অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যন্ত আছে। কিন্তু অপারেটরদের প্যাকেজ সংখ্যা ৪০ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ করার নামে যদি স্বল্প মেয়াদের সব প্যাকেজ বাদ দিয়ে দেয়া হয় তাহলে তা হবে অনেকটা 'মাথা ব্যথা কমাতে গিয়ে মাথা কেটে ফেলার' মতোন একটি অবস্থা। বিটিআরসির ঘোষণায় স্বল্প মেয়াদী প্যাকেজ ব্যবহারকারী প্রান্তিক গ্রাহকরা এখন কি মূল্যে, কত সময়ের জন্য ইন্টারনেট প্যাকেজ ক্রয় করবে তার কোন ব্যাখ্যা নাই। এই ঘোষণায় সাধারণ গ্রাহকরা ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহ হারাবে বলে উপস্থিত ব্যক্তারা মনে করেন। প্রান্তিক ও স্বল্প আয়ের সাধারণ শ্রেণীর গ্রাহকদের ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনতে হলে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে অবশ্যই স্বল্প সময়ের প্যাকেজগুলি অব্যাহত রাখতে হবে। তাছাড়া অব্যবহৃত ইন্টারনেট ডাটা পরবর্তীতে ব্যবহারের সুযোগ অবশ্যই রাখতে হবে। অনুষ্ঠানে সাধারণ শ্রেণীর গ্রাহকরা কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে বর্তমানে প্রচলিত প্যাকেজ বহাল রেখে মানসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা মহোদয়কে বিষয়টি পূনঃবিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি আরো বলেন আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এবং আবেদন প্রধানমন্ত্রী বরাবর উপস্থাপন করতে একটি স্মারকলিপি প্রদান করতে যাচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App