×

জাতীয়

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:১০ পিএম

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে

ছবি: ভোরের কাগজ

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে

সরকারের অবহেলা এবং স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু মহামারি আকারে ধারণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ডেঙ্গুতে দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে, হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। অথচ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন নির্বিকার। এছাড়া ডেঙ্গু মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে টিআইবির সুপারিশ আমলে না নেয়া, মশার বিস্তার রোধে ব্যবহৃত স্প্রে, সরাঞ্জাম অপ্রতুলত।

রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদত্যাগও দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে কাঁপছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যখাতে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। এ বছর অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ডেঙ্গু মৃত্যুদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু সংবাদই হচ্ছে এখন প্রধান শিরোনাম। প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ২০ জন করে লোক মারা যাচ্ছে। শুধু সরকারী হিসেবেই গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৭৪৮ জন। এ বছর মোট মৃত্যু ৭১৬ জন যার মধ্যে ৫১৩ জন ঢাকাতে এবং ২০৩ জন ঢাকার বাইরে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৩৫ জন যার মধ্যে ৬৬ হাজার ৬৫ জন ঢাকাতে এবং ৭৯ হাজার ২৭০ জন ঢাকার বাইরের।

মির্জা ফখরুল বলেন, নিম্নমানের কীট ও সরকারের উদাসীনতার জন্য আমরা জানি না কি পরিমান রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, আসল রোগীর সংখ্যা কত তা সহজেই অনুমেয় যে, কয়েকগুন বেশি হবে। ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুকে আমরা চিনছি, জানছি। ২০১৮ সালে এসে তা বিভীষিকাময় রূপ দেখায়। ২০১৮ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৬ জন, ২০১৯ সালে ১৭৯ জন, ২০২০ সালে ৭ জন। ২০২০ সালে করোনায় যে পরিমাণ মানুষ মারা গিয়েছিল তার হিসাব রাখাই ছিল দায়। ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে মারা যান ১০৫ জন, ২০২২ সালে ২৮১ জন আর ২০২৩ এখন পর্যন্ত ৭১৬, আর কত?

তিনি বলেন, হাসপাতালে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না, আবার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে মানুষ। লাশের সারি প্রতিদিনই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শিশুরা মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে, মৃতের একটা বড় অংশ শিশু। সম্প্রতি ৭ দিনের ব্যবধানে ২ সন্তান হারিয়ে ঢাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার খবর কি ব্যর্থ এই সরকারের বিবেককে নাড়া দেয় না ? তাদের এসব নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, জবাবদিহিতা নেই। শুধুমাত্র সরকারের দূর্নীতি ও অবহেলার কারণে এই রোগ এখন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেছে।

তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি যেমন, মশা মারার ঔষধ, স্প্রে, স্যালাইন; রোগ নির্ণয়ের কিটের অপ্রতুলতা ও নিম্নমানের জন্য ডেঙ্গু রোগ প্রকট রূপ নিয়েছে। ঢাকার বাহিরে রোগ নির্ণয়ের কিট পাওয়া যাচ্ছে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধের নামে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন হাজারো কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে। ২০১৯ সালেই টিআইবি ডেঙ্গু নিয়ে দুর্নীতির কথা বলেছিলো। তারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ১৫টি সুপারিশ করেছিলো, কিন্তু সম্প্রতি টিআইবি জানাচ্ছে তাদের সুপারিশ আমলে নেয়া হয়নি। তাই এই ভয়াবহ অবস্থা।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে দুজন সরকারী মুখপাত্রের মতামত প্রণিধানযোগ্য- ১. ‘এ বছর ৬৪ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ কোন ধরনের মশায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, তা আমরা জানি না’। —অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২. ‘মশার প্রাণরাসায়নিক চরিত্র এবং মশার আচরণগত পরিবর্তন কী হয়েছে, তা নিয়ে নিয়মিত গবেষণা হওয়া দরকার’। —স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান মো. গোলাম ছারোয়ার এই যদি হয় দায়িত্বশীলদের অসহায় আত্মসমর্পন তাহলে এতো এতো টাকা লোপাট ছাড়া আর কি কিছুই করা হয়নি?

মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু ঢাকা সিটিতেই মশা নিধনে বাৎসরিক বাজেট প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা যা ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই আত্মসাত করছে। ডেঙ্গু শুরু হওয়ার সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মেয়র পরিবারের প্রমোদ ভ্রমণেই প্রমাণিত হয় এই রোগ নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর অবহেলা ও উদাসীনতা। মানবতাহীন অনির্বাচিত গণবিরোধী সরকার বলেই তারা জনস্বাস্থ্যের প্রতি ভ্রক্ষেপহীন। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও দুই মেয়রের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করছি।

মির্জা ফখরুল দেশের সকল দেশপ্রেমিক মানুষ এবং বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সকল নেতাকর্মীদের দেশের এই দুর্যোগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আমাদের প্রার্থী ইশরাক হোসেন ও তাবিথ আওয়াল এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ড্যাব যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে সকলকে সহযোগিতা করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, ওলামা দলের সভাপতি শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, হাফেজ মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App