×

জাতীয়

ঢাবিতে সৈয়দ আহমাদুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সেমিনার অনুষ্ঠিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১৭ পিএম

ঢাবিতে সৈয়দ আহমাদুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সেমিনার অনুষ্ঠিত

ছবি: ভোরের কাগজ

উপমহাদেশের সুফি গবেষক 'বাংলার রুমি' সৈয়দ আহমদুল হকের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে 'বাংলাদেশে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বিকাশে বাংলার রুমি সৈয়দ আহমদুল হক' শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ এবং আল্লামা রুমি সোসাইটি বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে এই সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

আল্লামা রুমি সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি ড. মো. আব্দুল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে ভারতের কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার আশুতোষ (চেয়ার) অধ্যাপক ড. অমিত দে উপস্থিত ছিলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাবি ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাবি ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান।

ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো আহসানুল হাদির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আরো বক্তব্য দেন আল্লামা রুমি সোসাইটির সহ-সভাপতি সৈয়দ রেজাউল করিম, সাবেক সচিব মুহাম্মদ আলকামা সিদ্দিকী, শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রিন্সিপাল সুকোমল বড়ুয়া, সৈয়দ আহমাদুল হকের ছেলে ও আল্লামা রুমি সোসাইটির উপদেষ্টা সৈয়দ মাহমুদুল হক প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, বর্তমানে আমরা প্রযুক্তির দুনিয়ায় ডুবে আছি। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে দৈনন্দিন কাজগুলো সম্পন্ন করছি। আমরা যারা হাতে হাতে প্রযুক্তি আর প্রগ্রতির কথা বলি, তাদের ভেবে দেখার সময় এসেছে, প্রকৃতিকে বিনাশ করে, স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রকৃত অবস্থাকে ভুলতে বসেছি-সেটির যাত্রাতেই কি প্রকৃত মুক্তি নাকি স্রষ্টা আর প্রকৃতির সুরক্ষাতে প্রকৃত মুক্তি রয়েছে। এসময় সকল ধর্মের মূল্যবোধ চর্চার স্যস্কৃতির প্রতি সকলকে আরো বেশি গুরত্ব দিতে তিনি আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. অমিত দে বলেন, আমরা নানাবিধ কারণে হৃদয়কে বিসর্জন দিয়েছি, হৃদয়ের দিকে আমরা তাকানোর ফুসরতও পাচ্ছি না। বাংলার রুমিকে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে আমরা সেই হৃদয়ের জগতে ফেরার প্রয়াস চালাতে পারি। আমরা দেখতে পাই বাংলার রুমি সাহিত্যের রস আস্বাদন করে শুধু একটি উক্তি দিয়েই ক্ষান্ত হয়ে যাচ্ছেন না। বরং তিনি বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। তাই তো বাংলার রুমি আমাদের কাছে এখনো গ্রহণযোগ্য এবং তার রচনাগুলো এখনো আমাদের কাছে অম্লান।

তিনি আরো বলেন, রুমিকে শুধু আক্ষরিক অর্থে বোঝা যায় না। তার বিষয়গুলোকে বুঝতে হলে 'রিডিং বিটুইন দ্য লাইন' বুঝতে হয়। অনেকগুলো রূপক বিষয় নিয়ে তিনি লিখেছিলেন। সেগুলোর প্রকৃত বিষয় বাংলার রুমি সৈয়দ আহমদুল হক সঠিকভাবে বুঝেছিলেন এবং বর্ণনা করেছিলেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, অসাম্প্রদায়িক ও সুফিতাত্ত্বিক পরিবারের ঐতিহ্যিক প্রভাবে বাংলার রুমি একজন দেশপ্রেমিক, সুশিক্ষিত, কর্মবীর ও উদারনৈতিক চিন্তাধারার অধিকারী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। তবে বাংলার রুমির অসাম্প্রদায়িক, মানবতাদী ও আত্মাধর্মীয় সম্প্রীতির চেতনা-সমৃদ্ধ মানস গঠনে যাঁর প্রভাব সবচাইতে বেশি তিনি হলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক কবি ও দার্শনিক আল্লামা জালালুদ্দিন রুমি। তাঁকে বলা হয় 'দ্যা ম্যাসেঞ্জার অফ লাভ এন্ড উইজডম' অর্থাৎ প্রেম ও প্রজ্ঞার বার্তাবাহক। বাংলার রুমি ছিলেন সেই জালালুদ্দিন রুমিরই ভাবশিষ্য।

তিনি আরো বলেন, বৃটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশ এতদঞ্চলের ঐতিহাসিক এই তিন কালের সাক্ষী ছিলেন বাংলার রুমি। প্রাতিষ্ঠানিক অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে তিনি যেমন ছিলেন সর্বোচ্চ শিক্ষার আলোকপ্রভায় বিকশিত তেমনি জীবন ও জগত-সংসারের পর্যাপ্ত জ্ঞান ও প্রসার মিশেলে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন একজন অনুসরণীয় পরিপূর্ণ মানবের দৃষ্টান্ত হিসেবে। মানবতার প্রতি সর্বজনীন ও উদারনৈতিক দর্শন চর্চা এবং নিরবচ্ছিন্ন সাধনাই তাকে একজন আদর্শ মনীষীর সুউচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছিল।

আলোচকের বক্তব্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, প্রেমের মাধ্যমে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে যে একই মালার নিচে গাঁথা যায় তা আল্লামা রুমি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। সকল ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি সহিষ্ণু হতে পারা এবং সকল মতকে নিজের মতের মতই ধারণ করতে পারার মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এ জন্য সকলকে কাজ করতে হবে। তাহলে সমাজে হানাহানি থাকবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App