×

জাতীয়

খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে চিকিৎসকরা শঙ্কিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:০৬ পিএম

খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে চিকিৎসকরা শঙ্কিত
খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে চিকিৎসকরা শঙ্কিত

প্রায় ১ মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা শঙ্কাজনক। লিভারের জটিলতা বেড়ে যাওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পেটে পানি জমে যাচ্ছে। ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসে, বমি হয়, তেমন কিছু খেতে পারছেন না। কিডনি ও হৃদযন্ত্রের সমস্যাও জটিল হচ্ছে। তার এসব জটিলতার ক্ষেত্রে উন্নতির কোনো লক্ষণ না দেখায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চিকিৎসকেরা।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন শুক্রবার ভোরের কাগজকে বলেন, ‘ম্যাডামকে ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছ ‘। লিভার ও কিডনি সমস্যা আরও জটিল হওয়ায় তার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে মেডিকেল বোর্ড শঙ্কিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সম্ভাব্য চিকিৎসা যা আছে, চিকিৎসকেরা তার সর্বোচ্চটাই খালেদা জিয়াকে দিয়েছেন। দেশে এরচেয়ে বেশি কিছু করার নেই। আমরা চিকিৎসকরা অসহায় হয়ে যাচ্ছি।

অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিন সকাল-দুপুর-রাত—তিন দফায় বৈঠক করে তার স্বাস্থ্যের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি ভালো নয় বলেই মেডিকেল বোর্ড বারবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেছেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। সেরোটিক লিভোরের কারণে তার শরীরে নতুন বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছে। আর এই উপসর্গগুলো পরীক্ষা করেই মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা আপাতত চিকিৎসা দিচ্ছেন। এই রোগের যেহেতু সঠিক কোনো চিকিৎসা দেশে নেই; তাই খালেদা জিয়াকে সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান ড. রফিক।

২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর চিকিৎসকরা জানান, খালেদা জিয়ার খালেদার লিভার সিরোসিস শনাক্ত করা হয়েছে, যার চিকিৎসা দেশে নেই। বিএনপি প্রধানের মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. শামসুল আরেফিন জানান, ইউরোপ-আমেরিকার বিশেষ কয়েকটি হাসপাতালে এর চিকিৎসা হয়।

ডা. শামসুল আরেফিন বলেন, আমাদের শরীরে দুটি সার্কুলেশন সিস্টেম আছে। একটা হলো পোর্টাল সার্কুলেশন সিস্টেম, আরেকটা সিস্টেমিক সার্কুলেশন সিস্টেম। লিভারে দুটি সিস্টেমই কার্যকর। লিভারে টোটাল যে ব্লাডটা যায়, তার তিন ভাগের এক ভাগ যায় সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে। আর তিন ভাগের দুই ভাগ যায় পোর্টাল সার্কুলেশন থেকে।

তিনি আরও বলেন, এখানে যেটা হয়, তার পোর্টাল প্রেসার বেড়ে গেছে। কারণ তার লিভারের ভেতরে নরমাল চ্যানেলগুলো লিভার সিরোটিক প্রোসেসে ডিস্ট্রয় হয়েছে। যে কারণে পোর্টাল প্রেসার বেড়ে যায়, সেজন্য যেসব ভেন থাকে খাদ্যনালীতে-সেগুলো ফুসে ওঠে এবং ফেটে যায়। সেজন্য সিভিআর ব্লিডিং হয়। এই সিচুয়েশনে আমরা যেটা করেছি সেটা ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস। এটার পরে আবার ব্লিডিং হলে আরও কিছু জিনিস আছে, যেগুলো আমরা করি স্পেশাল কিছু কেমিক্যাল এজেন্ট আছে, সেগুলো ইনজেক্ট করি অনেক সময়। আনফরচুনেটলি সেটা আমাদের দ্বারা সম্ভব হয়নি এবং এখন আমাদের দেশে সেই ওষুধগুলো পাওয়া যায় না।

চিকিৎসক বলেন, তৃতীয়ত যেটা আছে, সেটা হলো সার্বজনীন, সেটা হলো টিপস। লিভারের ভেতরে টোটাল প্রেশার কমানোর জন্য সিস্টেমিক সার্কুলেশন এবং পোর্টাল সার্কুলেশনের মধ্যে একটা কমিউনিকেশন করে দেয়া। এটা একটা হাইলি টেকনিক্যাল কাজ। এটা সচরাচর হয় না। আমাদের দেশে আমি দেখিনি কোনো টিপস করা রোগী এসেছে। যারা আমরা রোগীদের ডিল করি তাদের দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার ব্লিডিং হলে রোগীদের সার্ভাইভ করা কঠিন। সেজন্য এ সেন্টারগুলো মেইনলি আমেরিকা ও ইউরোপ বেজড। স্পেশালি ইউকে-জার্মানি এবং ইউএসএ। এখানে এগুলোর জন্য অ্যাডভান্স সেন্টার আছে। তারা সেখানে করে। তবে সেসব দেশেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নেই। দু-চারটা সেন্টার আছে। বিশ্বের সব রোগীরা সেসব সেন্টারে যায়।

এ সময় চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি, তার যদি পুনরায় রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে সেটা বন্ধ করার মতো সাপোর্টিং টেকনোলজি আমাদের এখানে নেই। সেক্ষেত্রে উনার রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।

এর আগে গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার অ্যানজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদ্যন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদ্রোগে ভুগছেন। তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত।

গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়া কবে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরতে পারবেন, এ মুহূর্তে চিকিৎসকেরা তা বলতে পারছেন না।

এর আগেও গত ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সে সময় পাঁচ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তাঁর হৃদ্যন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদ্রোগে ভুগছেন।

বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর অনুমতি চেয়ে তাঁর ছোট ভাই শামীম ইসকান্দর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন দুই দিন আগে। এই আবেদনে বিএনপির নেত্রীর স্থায়ীভাবে মুক্তি চাওয়া হয়েছে। আবেদনের জবাবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্থায়ী জামিন দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে আইনে কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে খালেদা জিয়াকে স্থায়ী জামিন দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পরিবারের আবেদন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, আইনে কোনো সুযোগ নাই।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে তিনি কারাবন্দী হন। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। তখন থেকে তিনি গুলশানের বাড়িতে থাকেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App