×

জাতীয়

এক দফা দাবিতে রাজপথে নামার ডাক দিলেন ফখরুল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৭ পিএম

এক দফা দাবিতে রাজপথে নামার ডাক দিলেন ফখরুল

গণসংহতি আন্দোলনের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণতন্ত্রের সংগ্রাম ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ৩১ দফা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: ভোরের কাগজ

এক দফার আন্দোলনে সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ‘রাজপথে নেমে আসার ডাক দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আজকে বড় দল-ছোট দল-মাঝারি দল, এটা বড় কথা নয়। বিএনপি নাকি নাগরিক ঐক্য নাকি গণসংহতি আন্দোলন না গণতন্ত্র মঞ্চ, এটা বড় কথা নয়। আমাদের দেশ, আমাদের মানুষ আজকে বিপদগ্রস্ত, বিপন্ন। এদের অস্তিত্বকে রক্ষা করার আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব নিয়ে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণতন্ত্রের সংগ্রাম ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ৩১ দফা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই ডাক দেন।

বিরোধী রাজতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, আমরা আসুন গণতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আমাদের রাজপথে নেমে পড়বো। যেখান থেকে উচ্চারিত কন্ঠে আমরা উচ্চারণ করব আর নয়, এক দফা দাবি তুমি যাও। এনাফ ইজ এনাফ। এখন দয়া করে ছেড়ে দিয়ে জনগণের একটা রাষ্ট্র, জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের সমাজ তৈরি করবার ব্যবস্থা করে দাও। অন্যথায় পালাবার পথটা খুঁজে পাবে না। এটা আমি বার বার বলেছি। আসলে পায় না কিন্তু। অতীতে দেখবেন ডিক্টেটররা কিন্তু পালাবার পথ খুঁজে পায় নাই বলে হুশিয়ারি দেন বিএনপি মহাসচিব।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে তরুণ যুবকের আছেন এই সাকি (জোনায়েদ সাকি) দলে এবং অনেকে আছেন তরুণ যুবক.. তারা সামনে এগিয়ে এসেছেন। আমি অন্তরের অন্তরস্থল থেকে চাই যে, তারা আরো বিস্তৃত হোক, তাদের সংগঠন আরও বড় হোক, তারা গণমানুষের মধ্যে চলে যাক। মানুষকে তারা জাগিয়ে তুলুক। সত্যিকার অর্থে একটা শোষণহীন একটা সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণ করুন। এটা আমি আন্তরিকভাবে চাই।

তিনি বলেন, ‘আজকে সেই সময় এসেছে। আমাদের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আমি খুব আনন্দিত হই, প্রথমবারের মতো আজকে আমরা এখানে যারা আছি তার বাইরেও যারা আছেন আমরা সবাই এক হয়েছি একটি দাবি যে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেখানে নতুন নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিতসা করতে না দেয়ার সরকারের প্রতিহিংসার কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকারের গুনকীর্তন করার তো দরকার নেই। আপনি যেকোনো সাধারণ মানুষকে ডেকে নিয়ে বলেন, দেখেন এই সরকারকে সমর্থন করার চিন্তা। ওহ বলবে যাবে কবে সেটা বলেন। মানুষ আমাদের কাছে সেই প্রশ্ন করে না যে, সরকার এই এই কাজ খারাপ করলো কেনো। মানুষ আমাদের কাছে প্রশ্ন করে ভাই যাবে কবে?

তিনি বলেন, দেশের এবং বাইরের সমস্ত শক্তি সরকারের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ আমাদের সাথে রাজনৈতিক যুদ্ধে হেরে গেছে, আওয়ামী লীগ একটা ঘৃণিত দল। তারা দেশের মধ্যে দেশের বাইরে বিশ্বের কাছে ঘৃণিত। সারা পৃথিবী এখন তার পদত্যাগ চায়, খালি আমরা? সবাই পদত্যাগ চায়। আমরাও পদত্যাগের জন্য একদফা নিয়ে লড়াই করছি।

জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস বলেন, আমরা জাতীয় গণফ্রন্ট চায় এই সরকারের পদত্যাগ এবং সংসদ বাতিল। কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাকে বিদায় দিতে হবে। সে হাটু গেড়ে বসবে এটা মনে করার কোনো কারণ নাই।

আওয়ামী লীগ সরকারকে অভ্যুত্থানের শক্তির দ্বারা অভ্যত্থানের মধ্য উৎখাত করতে হবে। আর কোনো বিকল্প আছে বলে মনে করি না। ওদের শুভ বুদ্ধি উদয় হবে কি হবে না জানি না। শুভ বুদ্ধির জন্য আমাদের বসে থাকা ঠিক নয়। বরং পাল্টা আক্রমণ আসতে পারে তা প্রতিহত করার জন্য আমাদের ঐক্য আরও ব্যাপক বিস্তৃত ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি বলেন, লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের মধ্য দিয়ে এই রাষ্ট্রটা নির্মাণ হয়েছে সেই রাষ্ট্র আজকে টিকে থাকবে কিনা সেই রকম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে বর্তমান শাসকরা। আওয়ামী লীগ অবৈধ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখতে গিয়ে বাংলাদেশকে তার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের দিক থেকে আজকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে, হুমকির মধ্যে ফেলেছে।

আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে আমাদের রাষ্ট্রটাকে একটা দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে একটা নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করে এই জায়গা নিয়ে এসছে। তারা শুধু জনগণের অধিকার হরণ করেছে তাই নয় জনগণের সম্পদ লুট করে এদেশকে দেউলিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জনগোষ্ঠেী মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে পুরো রাষ্ট্রকে তার অস্তিত্বের দিক থেকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে। সরকারের পতন ও এদেশকে রক্ষা করার ‘এক বিষয়’ পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে সরকার হটিয়ে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারীর সভাপতিত্বে সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু‘র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, জাসদের নাজমুল হক প্রধান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারি পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলে ফয়জুল হাকিম লালা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App