×

জাতীয়

বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে আসবে খারাপ দিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১২:৫৪ পিএম

বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে আসবে খারাপ দিন

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ফাইল ছবি

বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে জাতিকে খারাপ দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবসে বিদায়ী বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, মানুষ শাসন বিভাগ, আইন বিভাগের প্রতি আস্থা হারাতে পারে। কিন্তু বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে ওই জাতিকে খারাপ সময়ের জন্য, খারাপ দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বিচার বিভাগ জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষক। সংবিধানের রক্ষক। তাই বিচারকদের সাহসী ও সুবিচারক হতে হবে। বিচার বিভাগ যদি আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ বা পিছ পা হয় তাহলে রাষ্ট্র ও নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। বিচার বিভাগ সংবিধানের আধিপত্য রক্ষার পাশাপাশি জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষক। সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের বিকাশ, আইনের শাসন সংরক্ষণ এবং সমাজের দুর্বল অংশের অধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য।

বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়ে বিদায়ী প্রধান বিচারপতি বলেন, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে বিচার বিভাগকে মজবুত দেয়াল দিয়ে রক্ষা করার দায়িত্ব বিচারকদের, আইনজীবীদের ও রাষ্ট্রের প্রত্যেক দায়িত্বশীল নাগরিকের। আমরা, আপনারা, সবাই সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সর্বনাশা দিনের জন্য প্রতিটি নাগরিকের অপেক্ষা করতে হবে। রাজনৈতিক বিভক্তি রাজপথ অতিক্রম করে বিচারালয় অভিমুখে ধাবিত হলে সেটা বিচারালয়ের জন্য মঙ্গলজনক হয় না। আমাদের মনে রাখতে হবে, আইনজীবীদের বিভক্তি ও মতভেদ এবং তার প্রতিক্রিয়া বিচারালয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। রাজনৈতিক মতাদর্শ রাজনৈতিকভাবে বাস্তবায়ন করলে এবং বিচারালয়কে নিরাপদ দূরত্বে রাখলে বিচার বিভাগ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। যে মহান চিন্তা ও কল্যাণ চেতনাকে সন্নিবেশিত করে আমাদের সংবিধান প্রণীত হয়েছে, তার ধারক ও বাহক হিসেবে, দেশের সব আইন ও সব আইনগত কার্যক্রম সাংবিধানিক চেতনার প্রতিফলন নিশ্চিত করার সুমহান জাতীয় দায়িত্ব আমাদের সবার। মানুষ চায় শান্তি আর শান্তি কিন্তু পরিপূর্ণ শান্তির জন্য আমাদের এখনও অনেকটাই এগোতে হবে। আমাদের আঁকা-বাঁকা জায়গাগুলোকে সোজা করতে হবে।

দীর্ঘ বিচারক জীবন শেষে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় এই প্রধান বিচারপতির বিচারক জীবনের এটাই শেষ দিন।

প্রধান বিচারপতির শেষ কর্মদিবসে আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচার কক্ষে তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয় অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর তার ৬৭ বছর পূর্ণ হবে। তাই সংবিধান অনুযায়ী ওই দিন অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পড়ালেখা শেষে তিনি ১৯৮১ সালের ২১ আগস্ট জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এবং ১৯৯৯ সালের ২৭ মে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খুলনা সিটি করপোরেশন (খুসিক), কুষ্টিয়া পৌরসভা, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির আইন উপদেষ্টা ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল।

২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের এবং ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আপিল বিভাগে নিয়োগ পান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ ছাড়া তিনি ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App