×

জাতীয়

ছাত্রলীগে এত আগাছা কেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩২ এএম

ছাত্রলীগে এত আগাছা কেন
  • যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় তিন শতাধিক পদধারী বহিষ্কার
অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে এই ‘খেদ’ দীর্ঘদিনের। মুজিব আদর্শের ভ্যানগার্ড ছাত্রলীগে আগাছা পরিষ্কারে প্রায়ই নিড়ানি চালাতে হয়। নেতাকর্মীদের আচরণে অতীতে একাধিকার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংগঠনিক নেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর আগাছা-পরগাছামুক্ত করে সুশৃঙ্খল সংগঠনে পরিণত করার জন্য একাধিকবার তাগিদ দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু থেমে নেই হাইব্রিডদের অনুপ্রবেশ। মানবতাবিরোধী শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে মুখোশের আড়ালে আগাছাদের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে। মুখে শেখ মুজিব আর অন্তরে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাঈদী শোকগাথার কারণে ইতোমধ্যেই তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি। আগাছামুক্ত করার এই প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানালেও সংগঠনে এত আগাছা এলো কিভাবে, কাদের মাসলম্যান, ভাইলীগ হিসেবে অনুপ্রবেশ করেছে- এসব নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে বিভিন্ন মহলে। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনুপ্রবেশকারীদের পেছনে কারা, সেই অনুসন্ধান করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াও জরুরি। নতুবা আগাছা বাড়বে আর বঞ্চিতরা বঞ্চিতই থাকবে আজীবন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৪ আগস্ট মৃত্যু হয় যুদ্ধাপরাধী দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর। এরপর থেকে গতকাল শনিবার (২৬ আগস্ট) পর্যন্ত তার মৃত্যুতে সমবেদনা বা সহানুভূতি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় সারাদেশে তিনশর বেশি পদধারী নেতাকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। বহিষ্কার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে অনেকের ফেসবুক পোস্ট এখনো ঘুরছে নেট দুনিয়ায়। রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটি এখন টানা তৃতীয় দফায় সরকারে রয়েছে। লম্বা সময় ধরে ক্ষমতায় থাকাকালে দলে হাইব্রিডদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং সময়ে তাদের মুখোশ খসে পড়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে সরকারি দলে ঢুকে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া এবং নিজেদের গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে তারা। এতে বদনাম হচ্ছে ছাত্রলীগের, বিব্রত হচ্ছে সরকার। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, কেউ ধর্মীয় আবেগে সাঈদীকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে- এটি বিবেচনার সুযোগ নেই। যুদ্ধাপরাধীর ক্ষেত্রে আবেগের কোনো স্থান নেই। এরা মুখে ছাত্রলীগ, অন্তরে শিবিরলীগ! এদের দলে ঠাঁই দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নীতিকে ধারণ করে না, মানে না, তাদের দলে আনা দলের জন্য ক্ষতিকর। যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নয়, তারা মুজিব আদর্শের সঙ্গে বেঈমানি করবে এটাই স্বাভাবিক। এদের দলে ঠাঁই দেয়ার আগে চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন। এদিকে প্রয়োজনে সুবিধাবাদীদের চিহ্নিত করতে ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। তারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীর পক্ষ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সহানুভূতি প্রকাশ করা কেউ ছাত্রলীগ করতে পারবে না। সব সাংগঠনিক ইউনিটকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ ধরনের সবাইকে বহিষ্কার করতে বলা হয়েছে। ছাত্রলীগে এত আগাছা কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচারসহ সব প্রগতিশীল আন্দোলনে গৌরবাজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে ছাত্রলীগ। শহীদ জননী জাহানার ঈমামের নেতৃত্বে গণআদালত থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারেও ছাত্রলীগের ভূমিকা রয়েছে। তবে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন হওয়ায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ওরা অনুপ্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি এদেশে বেশ পুরনো। ধর্ম বনাম রাজনৈতিক চেতনা- এসব ছাত্রদের মাথায়ও ঢুকিয়েছে। এখন রাজনৈতিক কৌশলে তারা ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করেছে। এদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান করা হবে। এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স। বহিষ্কারের হিড়িক : গত ২০ আগস্ট সাঈদী অনুসারী ১৫ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। জেলা সভাপতি দীপঙ্কর কান্তি দে ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন স্বাক্ষরিত ওই অব্যাহতি পত্রে ওই ১৫ জনকে স্থায়ী বহিস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে জামালপুরে ১৮, চট্টগ্রামে ১৬, পাবনায় ৭, নরসিংদীতে ৬, সাতক্ষীরায় ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লোহাগাড়ায় ৯ জন, ফরিদপুরে ৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ ভোরের কাগজকে বলেন, ফেসবুক থেকে তথ্য সংগৃহীত করে ৩০০র মতো বহিষ্কার করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বিভিন্ন তথ্য যাছাই-বাছাই হচ্ছে। সরকারি দল হওয়ায় অনুপ্রবেশকারী সব সংগঠনেই রয়েছে। তবে বহিষ্কারের মাধ্যমে ছাত্রলীগ প্রমাণ করেছে, তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে জিরো টলারেন্স। অনুপ্রবেশকারীর আশ্রয়দাতাদের শাস্তি জরুরি : বিশ্লেষকদের মতে, সংগঠনে এত আগাছা কেন; এরচেয়েও বেশি জরুরি কারা সংগঠনকে আগাছায় পরিপূর্ণ করছে। উড়ে এসে জুড়ে বসার সুযোগ না দিলে কেউ জায়গা পেত না। এই সুযোগদানকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। নতুবা এরাই সংগঠনকে গিলে খাবে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, যারা এসব করছে, তারা মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী নয়, এরা সুযোগসন্ধানী। তারা তাদের আদর্শে অবিচল। ঢাল হিসেবে ছাত্রলীগ করে। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগে, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনুপ্রবেশ বাড়ছে। কারণ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে প্রাচীন দল এবং টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। এসব কারণে প্রবেশ করা সহজ। কিন্তু প্রশ্ন হলো- কারা ঢুকিয়েছে? আগাছা পরিষ্কার করার চেয়েও বেশি জরুরি এদের শাস্তি নিশ্চিত করা। এদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের যেমন চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দেয়া প্রয়োজন; তেমনি যাদের মাসল পাওয়ার হিসেবে তারা অনুপ্রবেশ করেছে সেই আশ্রয়দাতাদেরও শাস্তি প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাইরে কেউ সংগঠনে থাকা মানেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেঈমানি করা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App