×

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০৮:০৬ এএম

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পরই অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে গুণগত মান নিশ্চিতে জোর দেন তিনি। এ বিষয়ে ৫১ দফা নির্দেশনা জারির পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় ব্রিজ-কালভার্ট-সড়ক নির্মাণ রোধেও নেন কঠোর অবস্থান। যার সুফল ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার ভোরের কাগজের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সারাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, গুণগত মান নিশ্চিতে গৃহীত পদক্ষেপ ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার আছাদুজ্জামান। ভোরের কাগজ : প্রতিবছর এলজিইডি সারাদেশে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে। এই বিপুল কর্মযজ্ঞ সামলানোর মতো জনবল কি এলজিইডির আছে? তাজুল ইসলাম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের নির্বাচনে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ অঙ্গীকার করেছেন। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী মানুষের কাছে অঙ্গীকার করেছেন, গ্রামে শহরের মতো সুবিধা পৌঁছে দেবেন। স্বাভাবিকভাবে গ্রামের অবকাঠামো উন্নয়নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই আমি চেষ্টা করেছি- যেভাবে কাজ এগিয়ে নিলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবে, তা নিশ্চিত করার। এই কাজে সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রাখছে আমাদের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে মান ঠিক রেখে সময় মতো কাজ শেষ করার ওপর জোর দিয়েছি। আমাদের লোকবল সঙ্কট রয়েছে। ফাঁকা পদগুলো পূরণ করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে সীমিত লোক ব্যবহার করেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি আমরা। ভোরের কাগজ : যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সড়ক ও সেতু নির্মাণের পাশাপাশি দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ অবকাঠামোও নির্মাণ করে আপনার মন্ত্রণালয়। কৃষি ক্ষেত্রে এলজিআরডির এই অবদান কখনো আলোচনায় আসেনি, এর কারণ কী বলে মনে করেন আপনি? তাজুল ইসলাম : সামগ্রিকভাবে আমরা দেশের জন্য কাজ করি। কৃষি কাজের জন্য পানির ব্যবস্থা করে দেই বলে যে স্বীকৃতি চাইব ব্যাপারটা তা হয়। কৃষি কাজ দেখার জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় রয়েছে। তারাই কৃষির সবকিছু দেখে। আমরা পানি দিয়ে সহযোগিতা করছি। এখানে স্বীকৃতি পাওয়ার চেয়ে কতটা অবদান রাখলাম, সেটিই আমাদের মূল বিষয়। ভোরের কাগজ : নির্মাণ পর্যায়ে কাজের গুণগতমান বজায় রাখতে আপনি ৫১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। যার দুই তৃতীয়াংশ মেনে চললেও টেকসই উন্নয়ন অনেকটাই নিশ্চিত করা যায়। এরপরও সড়ক ও সেতুসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণে নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে প্রায়ই। এর কারণ কী? তাজুল ইসলাম : আগে যে রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করা মতো, সেগুলো নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠত। এজন্য আমি দায়িত্ব নেয়ার পর বুয়েটের কয়েকজন প্রকৌশলী নিয়ে একটি কমিটি গঠন করি। পরে যৌক্তিক অর্থে কোথায় ব্রিজ ও রাস্তা হওয়া জরুরি সেটি নির্ধারণ করে কাজ এগিয়ে নেই। কাজের ধরনে এই পরিবর্তনটা খুব জরুরি ছিল। হয়তো কিছু টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। কিন্তু কাজের মান টেকসই হচ্ছে। ব্রিজগুলোর ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। পানি ও নৌযান চলাচলে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ভোরের কাগজ : কাজের গুণগতমান রক্ষায় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দেশের অধিকাংশ জেলায় মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি রয়েছে। কাজ শুরুর আগেই সাইটে মজুদকৃত নির্মাণ সামগ্রীর মান এলজিইডির নিজস্ব পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। তারপরও দেখা যায় নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই, কখনো কখনো কাজ শেষ হওয়ার আগেই সেতু বা ভবনে ফাটল দেখা দেয়, পলেস্তারা খসে পড়ে। এর কারণ কী? তাজুল ইসলাম : দেশের যে কোনো জায়গায় রাস্তা করার ক্ষেত্রে একটি আইডি নম্বর করে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে ওই রাস্তা মানুষের যোগাযোগে কতটা ভূমিকা রাখবে, কৃষিতে কতটা ভূমিকা রাখবে, মৎস্যসহ বাণিজ্য ক্ষেত্রে কতটা কাজে আসবে, সেসব বোঝা যাবে। অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় রাস্তা নির্মাণের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি আমি এই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রী বাড়িয়েও দিয়েছেন। ফলে গ্রামীণ অবকাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আসছে। ভোরের কাগজ : যে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেই এলজিইডির কর্মকর্তারা ঠিকাদারদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেন। কিন্তু তাদের মনিটরিংয়ের ঘাটতির জন্য কি শাস্তিমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়? তাজুল ইসলাম : ঠিকাদারদের অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। কাজের মান ভালো না হলে প্রকৌশলীরা ছাড় দেয় না। আমাদের পক্ষ থেকেও পরিষ্কার নির্দেশনা দেয়া আছে, মান ঠিক রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। মাঝখানে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। সবকিছুর দাম ৩০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদাররা বিপাকে পড়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঠিকাদারদের খরচ কিছুটা বাড়িয়ে দেয়া হয়। ভোরের কাগজ : কাজের গুণগতমান বজায় রাখতে প্রতিবছর এলজিইডির প্রকৌশলী এবং নির্মাণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সমপ্রতি নির্মাণ শ্রমিকদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। এর কি কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে? তাজুল ইসলাম : এখন আমাদের অনেক দক্ষ জনবল আছে। এজন্য গাজীপুরে একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করেছি। সেখানে প্রতি ব্যাচে ২০০-৩০০ জন প্রশিক্ষণ নিতে পারছে। এই প্রশিক্ষিত জনবল একটি ইট গাঁথলেও সেটি দক্ষ হাতে হচ্ছে। ফলে তা টেকসই হচ্ছে, খরচও কমছে। ভোরের কাগজ : প্রায়ই দেখা যায়, সেতু ও সড়ক নির্মাণ বা সংস্কার কাজ বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখা হয়। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ার পাশাপাশি সরকারের ব্যয়ও বেড়ে যায় অনেক। এসব বিষয়েও আপনি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কতটুকু? তাজুল ইসলাম : উন্নয়ন টেকসই হচ্ছে, এর বড় উদাহরণ হচ্ছে, এখন আর ব্রিজে বা ভবনের দেয়ালে ফাটল দেখা দেয় না। ফাটল দেখা দেয়ার সম্ভাবনাও থাকে না। কারণ প্রশিক্ষিত হাতে এগিয়ে চলছে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। ভোরের কাগজ : ৫১ দফা নির্দেশনায় আপনি বলেছেন, কাজের মানে গাফিলতি পাওয়া গেলে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঠিকাদার যদি কাজে কোনো গাফিলতি করে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। গত দুই বছরে এলজিইডির কতজন কর্মকর্তা বা ঠিকাদার শাস্তির আওতায় এসেছেন? তাজুল ইসলাম : আমাদের লক্ষ্য একটাই, গুণগত মান বজায় রেখে নির্মাণ কাজ শেষ করা। যদি কারো মধ্যে গাফিলতি দেখি, তাকে সতর্ক করা হয়। ইতোপূর্বে অনেককেই সতর্ক করা হয়েছে। পরে তারা নিজেদের শুধরে নেয়ায় আর কঠিন শাস্তি দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের সবাইকে সঠিক নির্দেশনা দিতে গিয়ে আমার অনেক স্টাডি করতে হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনেকে সেগুলোর নোট নিয়ে রেখেছে। শুনছি, আমার নির্দেশনাগুলো পুস্তিকা আকারে বের করবে। যাতে ভবিষ্যতে এগুলো সবার কাজে লাগে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App