×

জাতীয়

২১ আগস্ট ইতিহাসের কলঙ্কময় হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:২৯ এএম

২১ আগস্ট ইতিহাসের কলঙ্কময় হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন

ফাইল ছবি

২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২১ আগস্ট উপলক্ষ্যে দেয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৪ সালের এ দিনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশে বর্বরতম গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ হামলার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করা এবং আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করে হত্যা, ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা।

তিনি বলেন, মহান আল্লাহর অশেষ রহমত ও জনগণের দোয়ায় আমি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই। আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে আমাকে রক্ষা করেন। তবে সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড হামলায় বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন; আহত হন ৫ শতাধিক নেতা-কর্মী, সাংবাদিক ও নিরাপত্তাকর্মী। তাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। অনেকে দেহে স্প্লিন্টার নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। আমি ২১ আগস্টের সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সবসময় জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টা করে আসছে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সারাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এই জোট। একের পর এক বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তারা দেশটিকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালায়।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশে তারা গ্রেনেড হামলা চালায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে রাজনৈতিক সমাবেশে এ ধরনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এ নারকীয় হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা ছিল সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে, উল্টো হত্যাকারীদের রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। হামলাকারীদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। গুরুত্বপূর্ণ সব আলামত ধ্বংস করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করে তারা ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজায়। পরবর্তীকালে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তে বেরিয়ে আসে হাওয়া ভবন ও বিএনপি-জামায়াত জোটের অনেক কুশীলব এ হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় হয়।

আদালত গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে পলাতক তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে ১১ আসামির।

তিনি বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আশা করি, সব আইনি বিধিবিধান ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর হবে। এই রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চির অবসান হবে; জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের সব অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে বাংলাদেশের জনগণ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার গঠন করে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য আমাদের সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে দেশে শান্তি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

গত সাড়ে ১৪ বছরে আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছি। এই সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। আমরা আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২১ আগস্টের বীভৎস হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবেই চিহ্নিত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এখনও নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। আসুন, ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপশক্তির যে কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ-শান্তিপূর্ণ আবাসভূমি হিসেবে গড়ে তুলি।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App