×

জাতীয়

ডিজিটাল আদালত যুগে বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৪ এএম

ডিজিটাল আদালত যুগে বাংলাদেশ

প্রতীকী ছবি

ডিজিটাল আদালত যুগে বাংলাদেশ
ডিজিটাল আদালত যুগে বাংলাদেশ
ডিজিটাল আদালত যুগে বাংলাদেশ
ডিজিটাল আদালত যুগে বাংলাদেশ

বিচার বিভাগের ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া অডিও-ভিডিও বা অপর কোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে উপস্থিত থেকে ডিজিটাল আদালত ব্যবস্থায় প্রবেশ করলো বাংলাদেশ।

সোমবার (২১ আগস্ট)আদালতে ‘তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০’ (২০২০ সনের ১১ নং আইন)-এর ৫ ধারার ক্ষমতা বলে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ সংক্রান্ত ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ জারি করেছেন। এক্ষেত্রে কিছু ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ অনুসরণ করতে হবে।

এই নির্দেশনা অনুসারে বিচারপ্রার্থী পক্ষগণ, তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অপর কোনো ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানিসহ মামলার যেকোন পর্যায়ে অবশ্যকরণীয় ক্ষেত্রে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

আজ সোমবার (২০ আগস্ট) দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। প্রধান বিচারপতি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।

দেশের বাইরে থেকেও অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকা যাবে। এখানে আদালত প্রান্ত ও দূরবর্তী প্রান্তকে একত্রিত করবেন সমন্বয়কারী। অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং বলতে আদালত কক্ষ থেকে দূরবর্তী কোনো স্থানে অবস্থানরত মামলার কোনো পক্ষ, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি, আইনজীবী, বিশেষজ্ঞ ও মামলার সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অডিও-ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে মোকদ্দমায় উপস্থিতি, সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানিসহ সব বিচারিক কার্যসমূহ বিচার কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করা বোঝাবে।

বিচারিক কার্যক্রম ও আদালত কর্তৃক পরিচালিত কার্যক্রমের সকল পর্যায়ে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবহার করা যাবে। অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য আদালতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধিবিধান সাক্ষ্য রেকর্ড করার জন্য আদালত কর্তৃক নিযুক্ত কমিশনার ও অনুসন্ধানকারী বিচারকের ক্ষেত্রে ও প্রয়োজনীয় অভিযোজন সাপেক্ষে প্রযোজ্য হবে।

আদালত প্রান্ত ও দূরবর্তী প্রান্তে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সংযোগসহ মোবাইল ডিভাইস এবং প্রিন্টার; নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার ডিভাইস; ক্যামেরা; মাইক্রোফোন ও স্পিকার; প্রদর্শন ইউনিট; গোপনীয়তা নিশ্চিত করে পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা; পর্যাপ্ত আলো; একটি শান্ত এবং নিরাপদ স্থানের প্রাপ্যতা।

আদালত প্রান্ত থেকে একজন ও দূরবর্তী প্রান্তে একজন সমন্বয়কারী থাকবে। আদালত প্রান্তে আদালত নিজে অথবা আদালত কর্তৃক মনোনীত একজন সমন্বয়কারী হিসেবে থাকবে।

আর দূরবর্তী প্রান্ত দেশের বাহিরে হলে বাংলাদেশি সংশ্লিষ্ট কনস্যুলেট/দূতাবাস/হাই কমিশনের একজন কর্মকর্তা সমন্বয়কারী হবেন। দূরবর্তী প্রান্ত কারাগার হলে সমন্বয়কারী হবেন সংশ্লিষ্ট কারাগারের জেল সুপারিনটেনডেন্ট বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। হাসপাতাল থেকে যুক্ত হতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃক মনোনীত যেকোন কর্মকর্তা সমন্বয়কারী হতে পারবে।

এছাড়া সেফ হোম, প্রত্যায়িত প্রতিষ্ঠান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বা যেকোন প্রতিষ্ঠান যেখানে ‘আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু’ বা ‘আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুকে’ রাখা হয়েছে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কোন কর্মকর্তা সমন্বয়কারী হতে পারবে।

‘নিরাপত্তামূলক হেফাজত’ যেখানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৩১ ধারার অধীনে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে নারী বা শিশুকে রাখা হয়েছে সেখানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কোন কর্মকর্তা সমন্বয়কারী হতে পারবে।

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড বা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসার বা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সমন্বয়কারী হবে। ফরেনসিক ল্যাবরেটরি হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মনোনীত কোন কর্মকর্তা সমন্বয়কারী হতে পারবে। এছাড়া, অপর যে কোনো স্থানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আদালতের মনোনীত যেকোনো ব্যক্তি সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

আদালতে ভার্চুয়াল উপস্থিতি প্রয়োজন এমন কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন দূরবর্তী প্রান্তে থাকে যেখানে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুবিধা অনুপস্থিত, তখন সংশ্লিষ্ট আদালত দূরবর্তী প্রান্তের স্থানীয় এখতিয়ার সম্পন্ন জেলা জজকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করবেন নিকটবর্তী এবং উপযুক্ত স্থান থেকে একটি অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য।

মামলা সংশ্লিষ্ট পক্ষ, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি, আইনজীবী, বিশেষজ্ঞের আবেদনক্রমে বা আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে যেকোনো মামলার যেকোনো পর্যায়ের কার্যক্রম অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের নির্দেশ প্রদান করতে পারবে।

এ রূপ আবেদনপ্রাপ্তি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুনানির পর, আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন যে, অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং এক্ষেত্রে আবশ্যিক কি না। আবেদন মঞ্জুর করা হলে আদালত অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের জন্য সময়সূচী নির্ধারণ করবেন।

অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের আবেদনে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপস্থিতি শুনানী অথবা সাক্ষ্য গ্রহণের সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সনাক্তকরণের সুবিধার্থে জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, টেলিফোন নম্বর, ইমেইল আইডি সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করতে হবে। জেলা হাজতে আটক অভিযুক্ত বা সাক্ষীর ক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে।

আদালত প্রান্তের সমন্বয়কারী অডিও-ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারীগণের ইমেইল আইডি/মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে মিটিং লিংক/মিটিং আইডি/পাসওয়ার্ড (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) পাঠাবেন।

অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণের পূর্বে দূরবর্তী প্রান্তে উপস্থিত অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সাক্ষীকে ওই স্থান থেকে অডিও ও ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে আদালত প্রান্তে সংশ্লিষ্ট বিচারক কর্তৃক শপথ পাঠ করাতে হবে।

পরীক্ষা শেষ হলে গৃহীত সাক্ষ্যে আদালত প্রান্তে সংশ্লিষ্ট বিচারক ও পক্ষগণের প্রতিনিধি (যদি থাকে) দ্বারা স্বাক্ষরিত হবে ও এর স্ক্যানকপি দূরবর্তী প্রান্তে সমন্বয়কারীর অফিসিয়াল ইমেইলে পাঠানো হবে। দূরবর্তী প্রান্তের সমন্বয়কারী গৃহীত সাক্ষ্যের প্রিন্ট আউট নিয়ে তাতে পরীক্ষিত ব্যক্তির স্বাক্ষর নেবেন এবং নিজে স্বাক্ষর করবেন। এরপর এটির স্ক্যান কপি আদালত প্রান্তে ইমেইলের মাধ্যমে প্রেরণ করবেন এবং হার্ডকপি পরবর্তী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালত বরাবরে প্রাপ্তি স্বীকারপত্রসহ রেজিস্টার্ড ডাকযোগে পাঠাবেন।

অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং কার্যক্রম শেষ হলে, আদালত আদেশনামায় কনফারেন্সিং এর সময় ও স্থায়িত্বকাল উল্লেখ করবেন এবং কনফারেন্সিংয়ে ব্যবহৃত সফটওয়্যার বা প্লাটফরমের নাম উল্লেখ করবেন। এছাড়া, আদালত কনফারেন্সিং কালে এর অডিও, ভিডিও ও সংযোগের বিষয়ে তার সন্তুষ্টি আদেশে উল্লেখ করবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App