×

জাতীয়

আম্ফান প্রকল্পের কাজে সময় মতো মিলছে না অর্থ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১০:৩২ এএম

আম্ফান প্রকল্পের কাজে সময় মতো মিলছে না অর্থ

ছবি: সংগৃহীত

অগ্রগতি মাত্র ৩২ শতাংশ

সারাদেশে ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও ভয়াবহ বন্যায় ছোট-বড় অসংখ্য সড়ক, বিভিন্ন সেতু ও কালভার্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সড়ক ব্যবস্থা স্বরূপে ফিরিয়ে আনতে ওই বছরের নভেম্বরে ৫ হাজার ৯০৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজও শুরু হয়। কিন্তু সময়মতো অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ কচ্ছপ গতিতে এগোচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩২ শতাংশ।

এরই মধ্যে নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক জায়গার সড়কের পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপ দশায় পরিণত হয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রকল্পের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার বিকল্প নেই বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বাস্তবে প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। এই গতিতে চলতে থাকলে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদের প্রকল্প কবে শেষ হবে সেটি নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। যদিও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্যানুযায়ী, এই প্রকল্পের আওতায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সারাদেশের ৫৫ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সড়ক নির্মাণ ও পুনর্বাসন করা হবে ৬ হাজার ১৯৮ কিলোমিটার। সেতু ও কালভার্ট মেরামত ও পুনর্বাসন করা হবে ৫ হাজার ৩২৪ মিটার। অতিবর্ষণে সারাদেশে যেসব রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এই প্রকল্পের আওতায় সেগুলোও সংস্কার করা হবে। তবে এ পর্যন্ত অর্থ এসেছে প্রায় ১১শ কোটি টাকা।

জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আর এই প্রকল্পের পুরো টাকার জোগান দেবে সরকার। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় দেশজুড়ে অনেক রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে সেতু ও কালভার্ট। সেজন্য সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও কালভার্টের তালিকা তৈরি করে সেগুলো সংস্কার করছে সরকার। তবে যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হলে সময়মতো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া জরুরি বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।

প্রকল্প সূত্র বলছে, এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে সড়ক নেটওয়ার্কিং তৈরি এবং টেকসই সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় কমানো এবং সময় সাশ্রয় করা। বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য বাজারজাতে সহজীকরণ করার পাশাপাশি গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা। এলজিইডির পক্ষ থেকে সড়ক সংস্কারের জন্য গত অর্থবছর থেকে প্রতিবছর দুই হাজার কোটি টাকা করে পাওয়ার প্রস্তাব করা হলে এ পর্যন্ত অর্থ পাওয়া গেছে ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ, যার পরিমাণ মাত্র ১ হাজার ২শ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বলা হলেও অর্থের সংকট থাকায় তা সম্পন্ন করতে পারছে না এলজিইডি। তবে এ পর্যন্ত মোট প্রকল্পের ফিজিক্যাল অগ্রগতি হয়েছে ৩২ শতাংশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সারাদেশ থেকে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্টের তথ্য সংগ্রহ করে এলজিইডি। সেই তথ্য-উপাত্ত নিয়েই ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন শিরোনামের প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এলজিইডি থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এই প্রকল্পের আওতায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা পর্যায়ে সড়ক, সেতু ও কালভার্ট পুনর্বাসন করা হবে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. রফিকুল হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, পরপর দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে সারাদেশে রাস্তাঘাট সেতু ও কালভার্টের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেসব রাস্তাঘাট সংস্কার করতে সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, সেতু ও কালভার্টের তালিকা তৈরি করেছি। যে জায়গায় যত বেশি ক্ষতি হয়েছে, সে জায়গায় বরাদ্দ বেশি পাচ্ছে।

প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা তিন বছরেই পাবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক মো. রফিকুল হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের চাহিদার সঙ্গে টাকা পাওয়ার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এ পর্যন্ত মোট অর্থের ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ পেয়েছি, যার পরিমাণ ১ হাজার ২শ কোটি টাকা। এর মধ্য দিয়েই প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, একদিকে করোনার ধাক্কা অপরদিকে সময়মতো অর্থ না আসায় মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ হবে না। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ার জন্য সুপারিশ করা হলে সেটি এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App