×

জাতীয়

মাছ চাষ শিখতে বিদেশ যেতে চান ১০০ কর্মকর্তা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৩, ০৬:৪০ পিএম

মাছ চাষ শিখতে বিদেশ যেতে চান ১০০ কর্মকর্তা
মাছ চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশে যেতে চান ১০০ কর্মকর্তা। থাইল্যান্ড-ভিয়েতনাম দেশে যাবেন তারা, যেখানে মাছের চাষাবাদ হয়। এইজন্য সাত কোটি টাকা চেয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এতে প্রত্যেকের পেছনে ব্যয় হবে সাত লাখ টাকা করে। প্রতি ব্যাচে ১০ জন করে মোট ১০টি ব্যাচে এই বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা সফরের ব্যবস্থা করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজর ৪০৮ কোটি ১২ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে জুন ২০২৭ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মৎস্য অধিদপ্তর। প্রস্তাবিত প্রকল্পে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের বিষয়ে অর্থ বিভাগের মতামত নেয়া যেতে পারে। কিন্তু এ বিষয় তেমন আপত্তি দেয়া হয়নি। পিইসি সভা সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরামর্শকের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অডিও এবং ভিডিও তৈরির জন্য চাওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ খাতে প্রতি ব্যাচে ২০ জন করে মোট ৫ হাজার ৪৪০ জনের জন্য চাওয়া হয়েছে ১৫ কোটি ৩ লাখ টাকা। এছাড়া ভ্রমণ ব্যয় হিসাবে ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং বদলি ভ্রমণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, সরকারি মৎস্য খামার আধুনিকীকরণ ও সরকারি বাঁওড় উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য খামারে উন্নত মৎস্য প্রযুক্তি স্থাপন হবে। উন্নত কৌলিতাত্ত্বিক গুণসম্পন্ন প্রজননক্ষম মাছ সংরক্ষণ এবং মৎস্য খাতে নিয়োজিত জনবলের কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দক্ষতা উন্নয়ন করা হবে। এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সম্পূর্ণ সরকারি তহবিলের অর্থে প্রকল্পটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে মৎস্য অধিদপ্তর। পরিকল্পা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় নির্মাণকাজে ব্যয় প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে মোট ব্যয়ের ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ ডিজাইন অ্যান্ড কনসালটিং ব্যয় হিসাবে ধরা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৫৩টি খামারে ৭ হাজার ১৬০ বর্গফুটের তৃতীয় তলা অফিস বিল্ডিং এবং ১২০টি খামারে ৪০০ বর্গফুটের লেবার শেড নির্মাণের প্রস্তাব আছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এসব খামারে নবম গ্রেডের একজন ফার্ম ম্যানেজার এবং ১৩তম গ্রেডের একজন ক্লার্ক কাম টাইপিস্ট রয়েছেন। বিদ্যমান ২ জন জনবলের ওপর ভিত্তি করে ৭১৬০ বর্গফুটের ৩ তলা অফিস নির্মাণ কতখানি যৌক্তিক তার ব্যাখা চেয়েছে পিইসি। এছাড়া প্রকল্পে ১০টি প্যাকেজে ১১৮৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকার নির্মাণকাজের প্রস্তাব আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি নিয়ে গেল ১৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও শেষ পর্যন্ত বিদেশ সফরের সুযোগ রাখা হয়েছে। এর আগে পিইসি সভার কার্যপত্রে পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়েছিল, অর্থ বিভাগ চলতি অর্থবছরে সব প্রকল্পে বৈদেশিক ভ্রমণ বা ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। পিইসি সভার সভাপতি এবং পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য একেএম ফজলুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে সভায় আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তবে বিদেশ সফর তো আর এখন হচ্ছে না। প্রকল্পটি কয়েক বছর ধরে বাস্তবায়িত হবে। ভিয়েতনাম কিভাবে স্বল্প খরচে হ্যাচারি শিল্প স্থাপন করে লাভবান হয়েছে, সেটি সরাসরি দেখলে আমাদের দেশের লাভ হবে। আমরা বৈদেশিক প্রশিক্ষণের সুযোগ রাখতেই এ প্রস্তাবটি বাদ দেইনি। এ প্রসঙ্গে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের বন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উইংয়ের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মাদ মফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রকল্পে একশজনের বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে সাত কোটি টাকা। তবে আমরা এ সংখ্যা কমিয়ে দিতে বলেছি। যারা মাছ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত শুধু তারাই দুটি ব্যাচে ভ্রমণ করতে পারেন এটা আমরা জানিয়ে দিয়েছি। যারা মাছ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন তারা যেন ভ্রমণ না করেন এটাও বলা হয়েছে।’ কোন দেশে ভ্রমণের কথা বলা হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, ‘বাংলাদেশের আশপাশে থাইল্যান্ড-ভিয়েতনাম এসব দেশ হতে পারে। যেখানে মাছের চাষাবাদ হয়। মাছ চাষ ও প্রযুক্তির বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেবে। মংস্য দপ্তরের সঙ্গে যারা রয়েছেন শুধু তারাই ভ্রমণ করবেন। যাতে দেশে মাছ চাষ আরও সম্প্রসারণ হয়।’ বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শুধু মাছ চাষ বিষয়টা এমন নয়, একটা টেকনিক্যাল বিষয়ও। একশ জনের পরিবর্তে এটা ২০ জনে নামানো হবে। আমরা এগ্রিকালচারে আইটি ব্যবহারে পিছিয়ে আছি। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে ভ্রমণের জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের কিছু লোক রাখা হবে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের জন্য আমরা ভ্রমণে সংখ্যা ও ব্যয় কমাবো। ২০৪১ সালে ৮৬ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদনের যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি তাতে এ খাতে আরও কিছু কাজ করতে হবে। আমাদের চাষের জায়গা আছে এগুলো ব্যবহার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন চাষের জন্য এক ইঞ্চি মাটিও ফেলে রাখা যাবে না। আমরাও একই উদ্যোগ নিয়েছি।’ উল্লেখ্য, মৎস্য অধিদপ্তরের বিদ্যমান ১১৩টি খামার সংস্কার ও ৫৬টি খামারের প্রতিটি খামারে একটি পুকুর নিবিড় চাষের জন্য যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা হবে। ৫৩টি খামারে প্রশিক্ষণ সুবিধাদিসহ অফিস ভবন ও ১২০টি লেবার শেড নির্মাণ, দুটি খামারে উন্নত কৌলিতাত্ত্বিক গুণসম্পন্ন মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও ক্রায়োপ্রিজারভেশন সুবিধাদি স্থাপন করা হবে। ছয়টি সরকারি বাঁওড় উন্নয়নের পাশাপাশি নিবিড় মৎস্য চাষ ও অন্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে পাঁচ হাজার ৫৪০ জন মৎস্য খামার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, উদ্যোক্তা এবং বেসরকারি হ্যাচারি সংশ্লিষ্ট জনবলকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App