×

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নেপথ্যে কুশীলবদের বিচারে কমিশন হতে দেরি কেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩৩ এএম

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নেপথ্যে কুশীলবদের বিচারে কমিশন হতে দেরি কেন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিছক হত্যাকাণ্ড নয়। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেক প্রশ্ন। কিন্তু উত্তর নেই। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, হত্যা করতে চেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে। কেন মাত্র ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিনের মাথায় নির্মম বুলেট রক্তাক্ত করেছে স্বদেশ, এর কুশীলব কারা, এ নিয়ে নানারকম রাজনৈতিক বক্তব্য এবং ষড়যন্ত্রের নানা তত্ত্ব আলোচনায় রয়েছে। চিত্রনাট্যে কি পরিকল্পনা হয়েছে, অংক-দৃশ্য কেমন ছিল- সবকিছুর রহস্য উদ্ঘাটনে সুষ্ঠু-নির্মোহ তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের।

এ ব্যাপারে সরকারি নীতি-নির্ধারণী মহল থেকে গত কয়েক বছর ধরে ঘোষণা দেয়া হলেও তা এখনো বাস্তব রূপ পায়নি। সরকার পক্ষের মতে, সত্যানুসন্ধানে সেই সময় কার কী ভূমিকা ছিল, সেটাই একমাত্র বিবেচ্য হবে। এখন কে কোন রাজনীতি করছেন, তা নয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের যারা সহায়তা করেছেন, তাদের মুখোশ উন্মোচন করাই হবে একমাত্র লক্ষ্য। কোনো প্রতিহিংসামূলক বা প্রতিশোধের জন্য নয়; এই তদন্ত কমিশনের দায়িত্ব হবে নতুন প্রজন্মকে নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করাসহ দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্রের রহস্য উন্মোচন করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। আন্তর্জাতিক মানের তদন্ত কমিশন গঠনের জন্যই সময় নেয়া হচ্ছে।

সরকারপক্ষের বক্তব্য, আমেরিকার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মার্কিন সরকারের গঠিত ওয়ারেন কমিশন, ভারতে মহাত্মা গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। তেমনিভাবে, আগামীর বাংলাদেশে, ২০৫০ সালের প্রজন্ম যদি প্রশ্ন করে, আমাদের জাতির পিতাকে কি কারণে এত নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল? তখন তাদের সামনে অন্তত একটি প্রমাণ হাজির করা যাবে- তা হলো সেই ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন রিপোর্ট।

সেই রিপোর্ট পাঠ করলে পুরো ঘটনায় যুক্ত দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র নতুন প্রজন্মের সামনে পরিষ্কার হয়ে যাবে। কবে নাগাদ তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, এ জন্য প্রয়োজনীয় আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী খসড়াটি দেখে অনুমোদন দিলে আইনটি পাসের জন্য সংসদে উপস্থাপন করা হবে। এরপর তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে। কারণ ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের বিচার হলেও এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যে ষড়যন্ত্র ছিল, তার বিস্তারিত তদন্তও বিচার করা হয়নি।

বহুদিন থেকেই এ জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে। তিনি বলেন, প্রথম কাজ ছিল হত্যাকারীদের বিচার করা। প্রথম পর্যায়ে তাদের বিচারের পর দ্বিতীয় ধাপে ষড়যন্ত্রের তদন্ত করার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। অবশ্যই তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে এবং কারও প্রতি কোনো বিদ্বেষপ্রসূতভাবে নয়; নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যারা ছিলেন, তাদের চিহ্নিত করা হবে।

যে কারণে প্রয়োজন তদন্ত কমিশন

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মামলা হয়েছে ১৯৯৬ সালে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৩৫ বছর পর ২০১০ সালে হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ জড়িত সাবেক সেনা সদস্যদের মৃত্যুদণ্ড হয়। আদালতের রায়ে হত্যাকাণ্ডের পেছনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু বিস্তারিত উঠে আসেনি। এই হত্যা ও যড়যন্ত্রের নেপথ্যের কুশীলবদের বিচার আজও হয়নি। এমনকি প্রামাণিক সত্য দিয়ে তাদের দায়ও নিরূপণ করা হয়নি। ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট সুবীর নন্দী দাসের পক্ষে এ সংক্রান্ত একটি রিট করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশফাকুজ্জোহা।

রিট মামলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার আদ্যোপান্ত এবং জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিতকরণে তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অনুসন্ধান কমিশন কেন নয়- জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, অর্থ সচিবকে ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে বলেন, সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার মতো জঘন্য ঘটনার পরিকল্পনা একদিনে হয়নি। খুনিরা সেই হত্যার পরিকল্পনা নিশ্চয়ই অনেক দিন সময় নিয়েই করেছে। ন্যূনতম এক বছর বা তারও বেশি সময় আগে থেকেই এরা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছে। এই ষড়যন্ত্রে সামরিক বাহিনীর কিছু লোক ছিল। বিদেশি এজেন্ডা ছিল, তাদের ইন্ধন ছিল। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছিল। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। পেছনের কুশীলব কারা তাদের সম্পর্কে মানুষকে জানাতেই শ্বেতপত্র প্রকাশ করা জরুরি।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব ভোরের কাগজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড নিছক হত্যাকাণ্ড ছিল? সাধারণ মানুষের হত্যাকাণ্ড ছিল? এত সরলীকরণ করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কেন সপরিবারে মাত্র ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিনের মাথায় নির্মমভাবে প্রাণ হারাতে হয়েছে, এর নেপথ্যের সত্যিকার কুশীলবদের খুঁজে বের করা আমাদের জাতির বড় দায়বদ্ধতা। এর থেকে পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই।

শন ম্যাকব্রাইড কমিশনকে বাংলাদেশে ভিসা দেয়নি জিয়া

সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডে প্রথম অনুসন্ধান কমিশন গঠিত হয় ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাজ্যে। ব্রিটিশ এমপি ও আইনবিদ স্যার টমাস উইলিয়ামসের নেতৃত্বে ওই কমিশনে ছিলেন আয়ারল্যান্ড সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী শন ম্যাকব্রাইড, ব্রিটিশ এমপি ও আইনবিদ জেফরি টমাস এবং ব্রিটিশ আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও পরিবেশবাদী আইনবিদ অবরি রোজ।

তবে অনুসন্ধান কাজে ওই কমিশনকে বাংলাদেশের ভিসা দেয়নি জিয়াউর রহমান সরকার। পরে ১৯৮২ সালের ২০ মার্চ যুক্তরাজ্যের এই কমিশন তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে আইনি ও বিচার প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব পথে এগোতে দেয়া হয়নি। আর এজন্য সরকারই দায়ী। ওই বছর নভেম্বরে লন্ডনের র‌্যাডিক্যাল এশিয়া পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত কমিশনের ‘শেখ মুজিব মার্ডার ইনকোয়ারি : প্রিলিমিনারি’ বইয়ে লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ এবং মেজর শরিফুল হক ডালিমকে সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে উল্লেখ করে ওই কমিশন।

নেপথ্যে কুশীলব কারা?

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে দেশীয় সামরিক ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র যেমন ছিল, তেমনি ছিল আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর গভীর ও পরিকল্পিত চক্রান্ত। তৃতীয় বিশ্বের সরকারপ্রধান হলেও বঙ্গবন্ধু শুধু জাতীয় রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি ‘ক্যারিশম্যাটিক লিডার’। বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছেন, তারা সবাই না হলেও কেউ কেউ প্রকাশ্যে দায় স্বীকার করেছেন। ফলে তাদের অপরাধ শনাক্ত করা সহজ হয়েছে। কিন্তু নেপথ্যে যারা ছিলেন বলে অভিযোগ আছে, তার পক্ষে তেমন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় না। অনেক তথ্য-প্রমাণ মুছে গেছে বা মুছে ফেলা হয়েছে। অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের ‘লিগ্যালি অব ব্লাড’ ও লরেন্স লিফশুলৎজের ‘আনফিনিশড রেভল্যুশন’ বই এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অবমুক্ত হওয়া নথিপত্রে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে।

গবেষকদের মতে, দলের ভেতরেই মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্র ছিল। চক্রান্ত করে তাজউদ্দীনকে সরিয়ে দিয়ে মোশতাক বঙ্গবন্ধুর ডান হাত ভেঙে দিয়েছিল। ফলে আঘাত হানা সহজ হয়। ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল খোন্দকার মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, ওবায়দুর রহমান, মাহবুবুল আলম চাষী। জাসদের বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতাকে পুঁজি করেছে খুনিরা। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই ষড়যন্ত্রে ছিল। পরিকল্পনার সবটাই জানতেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি উৎসাহ দিয়েছেন; অভিযুক্ত সেনা সদস্যদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। হত্যাকারীরা যেন আইনের সম্মুখীন হতে না হয়, সে ব্যবস্থাও করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড 

তদন্ত কমিশন গঠনে বাধা কোথায়?’ শিরোনামে এক লেখায় (৩১ অক্টোবর, ২০২১) বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন লিখেছেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ দাবি করে, যে কর্নেল তাহের জিয়াকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছিল; তাকেই ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছে জিয়াউর রহমান। কর্নেল তাহের ও জিয়ার মধ্যে ১৫ আগস্ট ও ২ নভেম্বর নিয়ে কী সমঝোতা হয়েছিল, কর্নেল তাহের জীবিত থাকলে তা কি ফাঁস হয়ে যেত? এ কারণেই কি তাহের হত্যাকাণ্ড? এসব প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খায়। অনেকে এই পরিষ্কার ধারণাও করেন যে, বঙ্গবন্ধু হতাকাণ্ডের ব্যাপারে এদের মধ্যে অশুভ আঁতাত ছিল।

ফ্যাক্টস অ্যান্ড ডকুমেন্টস

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড’ গ্রন্থে মেজর রফিকুল ইসলাম, নিজে (অধ্যাপক আবু সাইয়িদ) ও একজন প্রত্যক্ষদর্শী সামরিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ লিখেছেন, মুজিব হত্যার পর উল্লাসিত হয়ে জিয়াউর রহমান মেজর ডালিমকে বলেন, তুমি একটা দারুণ অসাধারণ কাজ করেছ। আমাকে চুমু খাও। আমাকে চুমু খাও। তারপর জিয়া গভীর আবেগে ডালিমকে জড়িয়ে ধরেন। প্রখ্যাত সাংবাদিক লরেন্স লিফশুজের বলেছিলেন, মুজিব হত্যার নেপথ্যচারী ‘প্রধান ছায়ামানব’ জিয়া। জাসদের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সহসভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে ৪৭টি থানা লুটের ঘটনা ও মুজিব হত্যায় নিজেদের দায় স্বীকার করেন।

কিছুদিনের জন্য পুতুল রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি আবু সাদাত সায়েমের লেখা ‘বঙ্গভবনে শেষ দিনগুলি’- থেকেও এটা পরিষ্কার যে, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট এবং পরবর্তী সময়গুলোতে সব কিছুই নিয়ন্ত্রিত হতো জিয়াউর রহমানের ইচ্ছা এবং নির্দেশে, এবং এমনকি জিয়াই ভয়ভীতি দেখিয়ে বিচারপতি সায়েমকে অপসারণ করেছিল। বঙ্গবন্ধু মামলার শুনানিতে ৪৬ নম্বর সাক্ষী জেনারেল সফিউল্লাহ, ৪৫ নম্বর সাক্ষী কর্নেল সাফায়েত জামিল এবং ৯ নম্বর সাক্ষী কর্নেল হামিদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, হত্যা পরিকল্পনায় জিয়াই ছিলেন মুখ্য খেলোয়াড়।

শুধু তাদের সাক্ষ্যই নয়, লন্ডনের এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে প্রখ্যাত সাংবাদিক এ্যান্থনি মাসকারেনহাসকে বন্দুকধারী ঘাতক কর্নেল (বহিষ্কার) ফারুক এবং রশিদ অত্যন্ত প্রচ্ছন্ন ভাষায়ই বলে ছিল, তারা জিয়ার থেকে সবুজ সংকেত পেয়েই হত্যাযজ্ঞে নেমেছিল। এছাড়াও কর্নেল (বরখাস্ত) ফারুক ১৯৭৬ সালের ৩০ মে লন্ডনের বহুল প্রচারিত সানডে টাইমস পত্রিকায়ও এক দীর্ঘ নিবন্ধে একই কথা লিখেছিল। এমনকি জিয়ার অতি ঘনিষ্ঠজন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদও তার বইয়ে লিখেছেন, জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে আগে থেকেই যোগাযোগ রক্ষা করত।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ভোরের কাগজকে বলেন, এটি অত্যন্ত ফুলপ্রুভ মিশন। নিখুঁত পরিকল্পনা। এর পেছনে অনেক উদ্দেশ্য ছিল। হুট করে কয়েকজন মেজর এবং কিছু সোলজার মিলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে- এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। হত্যা মামলার রায়ে ষড়যন্ত্রের কথা বলা হলেও এর পেছনে ঠিক কি কি উদ্দেশ্য ছিল এবং রাজনীতিকরা ঠিক কীভাবে এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তা মামলায় উঠে আসেনি।

তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে যারা সাক্ষী দিয়েছে, তাদের অধিকাংশই বেঁচে আছে। লরেন্স লিফসুলুজ বেঁচে আছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যারা গবেষণা করেছেন, বহু স্কলার বেঁচে আছেন। তাদের সাক্ষ্য নিতে হবে। এসব সাক্ষ্য নিতে বেশি হলে ৩ মাস লাগবে। আর প্রতিবেদন লিখতে আরো ৩ মাস। ৬ মাসের বেশি সময় লাগবে না। তদন্ত কমিশন না হলে এসব প্রশ্নের উত্তর অজানাই থেকে যাবে।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ভোরের কাগজকে বলেন, খুনি মাজেদ একাধিকবার বলেছে ১৫ আগস্ট পুরোদিন বঙ্গভবন দাবড়িয়ে বেড়িয়েছিল জিয়াউর রহমান এবং সে-ই ছিল সেদিন সব কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রক। এছাড়া দেশি-বিদেশি ডকুমেন্টস রয়েছে। কিসিঞ্জারের বিভিন্ন তথ্য রয়েছে। ওই সময় পাকিস্তানের সংবাদপত্রগুলো ফলো করলেই পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার তথ্য বেরিয়ে আসবে। চীন বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি, দিয়েছে হত্যাকাণ্ডের পর। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান যখন চীন সফরে যান, তখন চীন বলে, তুমি বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছ। এসব দালিলিক কাগজপত্র থেকে প্রমাণ বের করা সম্ভব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App